Image description
নতুন প্রতীক ‘শাপলা কলি’; নারাজ এনসিপি

নির্বাচন আয়োজনের প্রায় শতভাগ কাজ শেষ করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বাকি শুধু দল ও পর্যবেক্ষক নিবন্ধন। নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলেও তা মাঝপথে আটকে যায়। দুইটি দলকে নিবন্ধন দেয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া পর ইসির সিদ্ধান্তের ওপর দুই দলের রয়েছে ভিন্ন অভিযোগ। এক দলের প্রতীক সংক্রান্ত সংকট, আরেক দলের মাঠপর্যায়ে অজ্ঞাত অবস্থা।

দল দুটির মধ্যে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) শাপলা প্রতীকে অনড় এবং বাংলাদেশ জাতীয় লীগের মাঠপর্যায়ে ও জাতীয়ভাবে অপরিচিত, ষড়ষন্ত্রের কাঠের পুতুল আখ্যা দিয়ে দলটির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে এনসিপি। ফলে অধিকতর তদন্তের জন্য ফের পাঠানো হয় মাঠপর্যায়ে। এদিকে নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী দল নিবন্ধনের প্রক্রিয়া গত সেপ্টেম্বরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা এখনো শেষ করতে পারেনি ইসি। দল নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ করতে ‘শাপলা কলি’ প্রতীক সংযোজন করে নতুন গেজেট প্রকাশ করেছে কমিশন। এর আগে শাপলা সংক্রান্ত কোনো প্রতীক ইসির গেজেটে ছিল না। নতুন নিবন্ধন প্রত্যাশী দল এনসিপি নিবন্ধনের প্রাথমিক বাছাই পর্বে চূড়ান্ত হলে ইসির কাছে শাপলা প্রতীকের আবেদন করে। দলটির বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ শাপলা প্রতীকের জন্য নানা রকম চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। তবে নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালায় শাপলা প্রতীক না থাকায় তা কোনো দলকে দেয়া সম্ভব না বলে জানান ইসি সচিব। কিন্তু এনসিপি তাদের শাপলা প্রতীকে সব সময় অনড়। গত সপ্তাহে বুধবার দলটির প্রধান নাহিদ ইসলাম অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দলটির প্রতীক শাপলার বিষয়ে অনড় অবস্থায় থাকবেন বলে জানান।

গতকাল ইসির সিনিয়ির সচিব আখতার আহমেদ স্বাক্ষরিত নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। তালিকায় সংশোধন এনে নতুন তালিকা প্রকাশ করে এতে ১১৯টি প্রতীক সংরক্ষণ করা হয়েছে। যেখানে ‘শাপলা কলি’ নামে নতুন প্রতীক যোগ করা হয়েছে। নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালায় আগে শাপলা সংশ্লিষ্ট কোনো প্রতীকই ছিল না। ১১৯টি প্রতীকের মধ্যে ৫৩টি নিবন্ধিত দলের জন্য ৫৩টি প্রতীক সংরক্ষণ করা হয়েছে। আর বাকিগুলোর মধ্যে কিছু পাবে এনসিপিসহ নতুন নিবন্ধন পাওয়া দল। বাকিগুলো সংরক্ষিত থাকবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য। ইসি কর্মকর্তারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধন প্রক্রিয়া পর্যালোচনা চলছে। অধিকতর পর্যালোচনার জন্য পুনরায় কিছু দলের তথ্যানুযায়ী মাঠে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক বাছাইয়ে চূড়ান্ত হওয়ার পর দুইটি দলের ভিন্ন বিষয়ে সংকট তৈরি হয়। আশা করা যায়, নতুন প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এসব সংকট কেটে যাবে। শাপলার বিষয়ে তিনি বলেন, যেহেতু একটি দল শাপলা প্রতীক চেয়ে আসছে কিন্তু নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালায় এ প্রতীক না থাকায় সমঝোতা হচ্ছিল না সেজন্য শাপলা কলি প্রতীক সংযোজন করা হয়েছে। ইসি তার ক্ষমতাবলে এসব প্রতীকের একটি নিবন্ধন পাওয়া দলকে দিতে পারবে বা দলও পছন্দ মতো নিতে পারবে।

‘শাপলা কলি’ প্রতীকের তালিকায় যুক্ত করে গেজেট প্রকাশ করার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় দলটির যুগ্ম সদস্য সচিব জহুরুল ইসলাম মুসা বলেন, আমাদের শাপলা কলি দেয়া হলে তা আমরা মানি না। আমরা শাপলাই চাই। শাপলা কলি প্রতীকের তালিকায় যুক্ত করায় আমরা সন্তুষ্ট নই।

এবার নতুন করে নিবন্ধন পেতে ১৪৩টি দল আবেদন করে। সর্বশেষ যাচাইয়ে ১৪টি দল নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় রয়েছে। ইসি এনসিপি ছাড়া বাকি ১৩টি দলের বিষয়ে অধিকতর তদন্ত করেছে। নির্বাচন কমিশনের অধিকতর যাচাইয়ে নিবন্ধনপ্রত্যাশী ১৩টি রাজনৈতিক দলের কমিটির কার্যকারিতা ও মাঠ কার্যালয়ের অস্তিত্ব নিয়ে আরো নাজেহাল পরিণতি দেখতে পায় তদন্ত কর্মকর্তারা। তাদের তথ্য, প্রায় সব রাজনৈতিক কার্যালয় ও কমিটির সংখ্যা আগের প্রতিবেদনের চেয়ে কম। বিষয়টি এমন পর্যায়ে যে, জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি ছাড়া অন্য দলগুলো আইন অনুযায়ী নিবন্ধন পাওয়ার শর্ত পূরণ করতে পারছে না। এদিকে আগের এবং অধিকতর যাচাই প্রতিবেদনের তথ্যে বিস্তর পার্থক্য নিয়ে ইসি সচিবালয় কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। দল নিবন্ধন পাইয়ে দিতে ইসির কোনো কোনো কর্মকর্তা আগের প্রতিবেদন কারসাজি করেছেন কি নাÑ এমন প্রশ্নও উঠেছে। জানা যায়, ১৩টি রাজনৈতিক দলের বিষয়ে অধিকতর যাচাই করেছে ইসি। এর মধ্যে নির্বাচন কমিশনের উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেশ কয়েকটি গ্রুপ এলাকাভিত্তিক ১০টি রাজনৈতিক দলের মাঠ কার্যালয় তদন্ত করে। দলগুলো হচ্ছে-বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টি, আমজনতার দল, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টি (বিজিপি), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মাকর্সবাদী), বাংলাদেশ জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি, ভাসানী জনশক্তি পার্টি, বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদ, জনতার দল, মৌলিক বাংলা এবং জনতা পার্টি বাংলাদেশ। এছাড়া জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ-শাহজাহান সিরাজ), বাংলাদেশ জাতীয় লীগ ও জাতীয় জনতা পার্টির কমিটির ধারাবাহিকতা, কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও কমিটির অস্তিত্ব যাচাই করে। এসব কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন দু-চারদিনের মধ্যে তাদের সিদ্ধান্ত জানানোর কথা রয়েছে।

তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, সর্বশেষ ও আগের প্রতিবেদনের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। যেমন, রাজনৈতিক দলগুলো অনেক সময় নিবন্ধন নেয়ার জন্য অস্থায়ী ভিত্তিতে কার্যালয় ভাড়া নেয় অথবা সাময়িক সময়ের জন্য সাইনবোর্ড লাগিয়ে থাকে। এসব কারণে হতে পারে। এছাড়া ইসি সচিবালয় ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের যোগসাজশের বিষয়টিও উড়িয়ে দেয়া যায় না। নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ জানান, নির্বাচন আয়োজনের কাজ কতটুকু সম্পন্ন হয়েছে বলতে গেলে প্রায় ৯০-৯৫ শতাংশ প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। কিছু বাকি আছে এগুলো পর্যালোচনায় আছে, খুব দ্রুতই শেষ হবে।