চট্টগ্রাম থেকে ছয় বছর আগে অপহরণ হয়েছিলেন আবদুল আহাদ (৪৬)। বুধবার ফেনীর ছাগলনাইয়ায় মিললো তার মরদেহ। অজ্ঞাত ব্যক্তি হিসেবে মরদেহ উদ্ধারের পর পকেটে পাওয়া ব্যাংক চেকের সূত্র ধরে শনাক্ত হয় ছয় বছর আগে চট্টগ্রাম থেকে অপহৃত কাস্টমস কর্মকর্তার। পরিবারের দাবি, অপহরণের পর তখন মুক্তিপণ হিসাবে দুই লাখ টাকা দেয়ার পরও ছয় বছর তাকে ফিরে পাওয়া যায়নি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রমতে, বুধবার সকালে ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান ফটকের সামনে অজ্ঞাত এক ব্যক্তিকে অজ্ঞান অবস্থায় স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। কর্তব্যরত চিকিৎসক বিভিন্ন পরীক্ষা করে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে ছাগলনাইয়া থানা পুলিশ হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। এ সময় মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করতে পুলিশ তার সঙ্গে থাকা কাগজপত্র দেখতে গিয়ে উত্তরা ব্যাংক ফেনীর বিরিঞ্চি শাখার একটি চেক পান। চেকে হিসাবের নাম আবদুল আহাদ উল্লেখ রয়েছে। পরে পুলিশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে হিসাব নম্বর জানালে তারা আবদুল আহাদের পরিচয় নিশ্চিত করেন।
ছাগলনাইয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল বাশার বলেন, ব্যাংক কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্য অনুযায়ী নিহত আবদুল আহাদ মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া থানার হাজীপুর ইউনিয়নের দাউদপুর গ্রামের ইমানী মিয়ার ছেলে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ফেনী জেনারেল হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।
এদিকে, নিহতের পরিচয় শনাক্তের পর স্থানীয়দের মধ্যে চাঞ্চল্য দেখা দেয়। ফেনীতে ব্যাংক হিসাব কী করে খুললেন তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। পরে দিনভর নানা তথ্য যাচাই করলে বেরিয়ে আসে তার ফেনীতে আসার পেছনের গল্প।
এ ব্যাপারে নিহতের ছোট বোন নাঈমা নাসরিন মনি মুঠোফোনে বলেন, আমার ভাই একসময় সিলেট ব্রিটানিকা উইমেন্স কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ছিলেন। পরবর্তীতে সিলেট বিমানবন্দরে কাস্টমসের অডিটর পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে চাকরি করেন। এরপর একই পদে ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও পরে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে দায়িত্ব পালন করেন। চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে কর্তব্যরত অবস্থায় ২০১৯ সালের ১লা মে হঠাৎ তার মুঠোফোন বন্ধ পাই। পরে একটি নম্বর থেকে কল দিয়ে আমাদের জানানো হয় আবদুল আহাদকে অপহরণ করা হয়েছে। বিকাশে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ পাঠালে তাকে ছেড়ে দেয়া হবে।
অপহরণকারীদের দাবি অনুযায়ী তখন আমরা দুই লাখ টাকা পাঠিয়েছি। এরপর তাদের নম্বরে যোগাযোগ করলেও বন্ধ পাই। অন্যদিকে, আমার ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাইনি। পরিবারের পক্ষ থেকে স্থানীয় থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করার ছয় বছর পরও ভাইকে আর পাইনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে জানতে পারি ফেনীর ছাগলনাইয়ায় আমার ভাইয়ের মরদেহ পাওয়া গেছে।
নিহতের ভাগিনা মোস্তাফিজুর রহমান সাকিফ জানান, আহাদের দুই কন্যাসন্তান রয়েছে। ছোট মেয়ে গর্ভে থাকাকালীন তিনি নিখোঁজ হন। এর মাঝে ছেলের নিখোঁজের শোকে তার মা-বাবা দুইজনই মারা গেছেন। দীর্ঘ ছয় বছর আমরা মামাকে খোঁজাখুঁজি করে পাইনি।
আবদুল আহাদের মরদেহ উদ্ধারের ব্যাপারে কথা হয় ছাগলনাইয়া থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মো. শাহ আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, নিহতের শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, স্ট্রোকজনিত কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ফেনী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।