Image description
 
 

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক শিক্ষকের নারী শিক্ষার্থীর পোশাক নিয়ে করা আপত্তিকর মন্তব্যের একটি অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

 

অভিযুক্ত ওই শিক্ষক অধ্যাপক ড. নাছির উদ্দীন মিঝি বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি ও জামায়াতপন্থি শিক্ষক সংগঠন গ্রীণ ফোরামের সদস্য।

মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে একটি ফেসবুক গ্রুপে ‘আব্দুল্লাহ বিন আসাদ’ নামের এক আইডি থেকে ৪ মিনিট ৭ সেকেন্ডের অডিওটি প্রকাশ করা হলে তা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়। পরে শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হলে বুধবার সকালে বিষয়টিকে ‘স্লিপ অফ টাং’ দাবি করে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন ওই শিক্ষক।

পরে বেলা ১১টায় তার বরখাস্তসহ পাঁচ দফা দাবিতে মানববন্ধন ও উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেন শিক্ষার্থীরা।

ফাঁস হওয়া অডিওটিতে ড. মিঝিকে ক্ষুব্ধ কণ্ঠে ‘সাজিদ হত্যার বিচারের আন্দোলন’ নিয়ে এক শিক্ষার্থীকে শাসাতে শোনা যায়। এছাড়া সাজিদ আব্দুল্লাহ ও আন্দোলনকারী নারী শিক্ষার্থীদের নিয়েও আপত্তিকর মন্তব্য করেন তিনি। তাকে বলতে শোনা যায়, ‘ন্যাংটা মাইয়া কতগুলো নিয়ে সেখানে দাঁড়ায়। এক মাইয়া নিয়ে গেছে ওখানে। আরেক আরেক হাইওয়ান (পশু)। ও হাইওয়ান নিয়ে গেছে ওখানে। ওটা তো ইনসান না, হাইওয়ান। আমি আল-কুরআনের টিচার। আমি গেছি (সাজিদের জানাজায়)। আমার সঙ্গে গেছে জিন্সের প্যান্ট পরা, গেঞ্জি পরা মাইয়া। মরে গেছি আমি।’

এদিকে অডিও ফাঁসের পর বুধবার সকালে নিজের মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন ড. মিঝি। তিনি বলেন, ‘আমি আল-কুরআন বিভাগের সভাপতি হিসেবে শহীদ সাজিদ আব্দুল্লাহর জন্য বিভাগের ছাত্র-শিক্ষকদের নিয়ে বিচার চেয়ে আন্দোলন করেছি। আমার অফিসে বসেই মামলা অ্যান্ট্রি করেছি। প্রশাসনিকভাবে বিষয়টিকে এগিয়ে নিতে ভিসি, প্রোভিসি, ইবি থানার ওসিসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। কিন্তু এতদসত্ত্বেও বিভাগের অন্যান্য শিক্ষক সহ আমার আরেকজন ছাত্রের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে অসাবধানতাবশত কিছু শব্দ চয়নে ভুল হয়েছে বলে আমি মনে করি। এজন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত ও নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করছি।’

এদিকে অডিওটি প্রকাশিত হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেকে ফেসবুক পোস্টে ক্ষোভ প্রকাশ করে ওই শিক্ষকের এমন আপত্তিকর মন্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। একইসঙ্গে ওই শিক্ষকের বিচারের দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে শাখা ছাত্রদল ও ছাত্র ইউনিয়ন।

এছাড়া বুধবার বেলা ১১টায় প্রশাসন ভবনের সামনে মানববন্ধন করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধন শেষে ওই শিক্ষকের বরখাস্তসহ পাঁচ দাবিতে উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দেন তারা।

তাদের অন্য দাবিগুলো হলো- সাজিদ আব্দুল্লাহ হত্যার খুনিদের অতিদ্রুত গ্রেফতার করা, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের হুমকি প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ন্যায্য প্রতিবাদ ও আন্দোলনে বাধা প্রদানকারীদের উদ্দেশ্য যাচাইয়ের জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া ও শিক্ষার্থীদের মতপ্রকাশের অধিকার ও আন্দোলনের সাংবিধানিক অধিকার সুরক্ষিত রাখতে হবে।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, আগামীতে কোনো শিক্ষক যেন এ ধরনের বক্তব্য না দেয় এ ব্যাপারে নিশ্চিত করছি। আর লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেব।