মানিকগঞ্জের শিবালয়ে পরকীয়ার বলি হয়েছেন মা ও তাঁর শিশু মেয়ে। ঘটনার ৬ দিনের মাথায় পুলিশ আটক করেছে ঘাতক প্রেমিক সুজনকে (২৭)। আটক প্রেমিকের দেওয়া তথ্যমতে প্রেমিকা স্মৃতি আক্তারের মরদেহ খোঁজা হচ্ছে যমুনা নদীতে। এর আগে গত ২৪ অক্টোবর যমুনা পাড় থেকে উদ্ধার হয়েছে শিশু কন্যা মরিয়মের (৩) মরদেহ। এ ঘটনায় প্রশাসন ও স্থানীয়দের মাঝে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
শিবালয় থানা পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) সকালে উপজেলার সাতুরিয়া গ্রামে বেড়িবাঁধের নিচে যমুনার পাড় থেকে উদ্ধার হয় শিশু কন্যা মরিয়মের মরদেহ। মরদেহটি বাড়িতে নেওয়া হলেও সেখানে মিলেনি তাঁর মায়ের দেখা। বাবাও ছিলেন নদীতে মাছ শিকারের কাজে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে তৈরি হয় নানা জল্পনা-কল্পনা। শিশুটির বাবা আব্দুর রাজ্জাক এ ঘটনায় অভিযোগ করেন শিবালয় থানায়। লাশ প্রেরণ করা হয় মর্গে।
অভিযোগ প্রাপ্তির পর পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনা উদঘাটনে মাঠে নামে। নিখোঁজ স্মৃতি আক্তারের ব্যবহৃত মোবাইলে কপোকথন ও কললিস্ট পর্যালোচনা করে ২৮ অক্টোবর রাতে টাঙ্গাইলের নাগরপুর এলাকা থেকে আটক করা হয় সদ্য বিদেশ ফেরত প্রেমিক সুজনকে (২৭)। সুজন উপজেলার সাতুরিয়া গ্রামের সাঈদ শেখের ছেলে। তার দেওয়া তথ্যমতে বেরিয়ে আসে মূল ঘটনা।
প্রেমিক সুজনের ভাষ্যমতে পুলিশ জানায়, সাতুরিয়া গ্রামের গৃহবধূ স্মৃতি আক্তারের সাথে দীর্ঘদিনের পরকীয়ার সম্পর্ক ছিলো একই গ্রামের অবিবাহিত সুজনের। সর্ম্পকের এক পর্যায়ে ২০২২ সালে সুজন পাড়ি জমান সৌদি আরবে। সেখানে ৩ বছর অবস্থানের পর চলতি মাসের ৩ তারিখ দেশে ফিরেন তিনি। দেশে ফেরার পর পারিবারিকভাবে সুজন অন্যত্র বিয়ের প্রস্তুতি নেন। এমন খবরে সুজন ও স্মৃতির মধ্যে চলে টানাপোড়েন।
গত ২৩ অক্টোবর রাতে স্মৃতির বাড়ির পাশে পেয়ারা বাগানে মিলিত হন স্মৃতি ও সুজন। সাথে ছিলো তিন বছরের শিশু কন্যা মরিয়ম। ভবিষৎ ঝামেলা মনে করে বাগানের মধ্যে স্মৃতিকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করেন প্রেমিক সুজন। স্মৃতির পর একইভাবে হত্যা করা হয় শিশু কন্যা মরিয়মকে।
এরপর স্মৃতির লাশ বস্তায় ভরে ফেলে দেন যমুনায়। আর যমুনার পাড়ে ফেলে রাখে শিশু কন্যার নিথর দেহ। দুটি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে গা ঢাকা দেন প্রেমিক সুজন। এতেও শেষ রক্ষা হয়নি তার, আটক হন পুলিশের হাতে। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমনটাই জানিয়েছেন ঘাতক প্রেমিক।
সুজনের দেওয়া তথ্যে বুধবার বিকেলে ঘটনাস্থলে যমুনা নদীতে পুলিশের সহায়তায় গৃহবধূর লাশ খুঁজে বেড়ায় ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। ঘণ্টাব্যাপী চেষ্টায় ব্যর্থ হন তারা। রাতে আলো স্বল্পতায় উদ্ধার কাজ স্থগিত করা হয়। আগামীকাল বৃহস্পতিবার আবারও উদ্ধার কাজে অংশ নেবে বলে ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানিয়েছে। এসময় উদ্ধার কাজ দেখতে যমুনার পাড়ে ভিড় জমান নানা বয়সী উৎসুক মানুষ।
এ বিষয়ে শিবালয় থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকতর্কা ওসি কামাল হোসেন জনকণ্ঠকে জানান, ধৃত পরকীয়া প্রেমিক সজুনকে যথাযথ আইনি পক্রিয়ার মাধ্যমে বৃহস্পতিবার বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হবে। আর গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধারে সকালে ঘটনাস্থলে কাজ করবে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল।
এ ঘটনা সর্ম্পকে স্থানীরা জানান, পরকীয়ায় মা-মেয়ে এভাবে বলি হবে, আমরা কখনো তা কল্পনাও করতে পারিনি। শিশুটির লাশ উদ্ধার ও মায়ের নিখোঁজের বিষয়টি আমাদের বেশ ভাবিয়ে তুললেও আমারা এর সঠিক ঘটনাটি কেউ আঁচ করতে পারিনি।