গাজীপুরের টঙ্গী টিএন্ডটি বাজার জামে মসজিদের খতিব মুফতি মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহ মিয়াজিকে অপহরণের ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তে নাটকীয় মোড় এসেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে গাজীপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত–৪ এর বিচারক জুবায়ের রশিদ এর আদালতে তাকে হাজির করা হলে তিনি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। তিনি বলেন, শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থতার কারণে স্বেচ্ছায় পঞ্চগড়ে গিয়েছিলেন।
আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে মুফতি মুহিবুল্লাহ বলেন, তিনি কোনো ব্যক্তির দ্বারা অপহৃত হননি, তার কিডনি, লিভার, হৃদরোগ এবং মাথায় নানাবিধ সমস্যার পাশাপাশি মানসিক কিছু জটিলতা এবং ব্যক্তিগত কারণে নিজেই গাজীপুর ছেড়ে গিয়েছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক অসুস্থতা ও মানসিক চাপের মধ্যে ছিলেন, যা তাকে একপ্রকার অচেতন সিদ্ধান্ত নিতে প্ররোচিত করে।
বিচারক তার বক্তব্য শোনার পর মামলাটি তথ্যগত ভুল উল্লেখ করে পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার নির্দেশ দেন এবং পরবর্তীতে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ তাকে তার পরিবারের জিম্মায় বুঝিয়ে দেন।
এর আগে গত ২২ অক্টোবর সকাল ৭টার দিকে মুফতি মুহিবুল্লাহ মর্নিং ওয়াকে বের হয়ে নিখোঁজ হন। তার পরিবার অভিযোগ করে যে, একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে অজ্ঞাতনামা ৪–৫ জন ব্যক্তি তাকে অপহরণ করেছে। পরে ২৪ অক্টোবর টঙ্গী পূর্ব থানায় মামলা নং–৫৪ (ধারা ৩২৩/৩৪১/২৯৫A/৩৬৪/৩৭৯/৩০৭/৫০৬/৩৪ পেনাল কোড) রেকর্ড করা হয়।
পুলিশের তদন্তে সিসিক্যামেরা যাচাই করে দেখা যায়, ঘটনার সকালে এলাকায় কোনো অ্যাম্বুলেন্স চলাচলের প্রমাণ মেলেনি। বরং সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, মুফতি মুহিবুল্লাহ নিজেই মাজুখান, মীরের বাজার, ভোগরা বাইপাস হয়ে রাজধানীর গাবতলী পর্যন্ত যান। সেখানে তিনি পঞ্চগড়গামী শ্যামলী পরিবহনের বাসের টিকিট কেটে দুপুর ২টার দিকে রওনা দেন।
যাত্রাপথে বগুড়ার পেন্টাগন হোটেলে নামাজ আদায় করে তিনি পুনরায় বাসে ওঠেন এবং রাতে পঞ্চগড়ে পৌঁছান। পরে অসুস্থ অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
মঙ্গলবার গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মোহাম্মদ তাহেরুল হক চৌহান বলেন—একজন আলেমকে ঘিরে সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছিল, কিন্তু তদন্তের মাধ্যমে সত্য এখন স্পষ্ট। এটি অপহরণ নয়, ব্যক্তিগত ও মানসিক কারণে তার স্বেচ্ছায় গমন ছিল। আমরা বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে তদন্ত করেছি।
তিনি আরও বলেন—গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ জনগণের আস্থা ও সহযোগিতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়। আমরা অনুরোধ করছি, কেউ যেন গুজব ছড়িয়ে সমাজে বিভ্রান্তি না তৈরি করেন। আইনগত প্রক্রিয়া অনুযায়ী সবকিছু সম্পন্ন হয়েছে।
ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর অর্থ) মো. জাহিদ হোসন ভূঁইয়া, উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ দক্ষিণ) মো. মহিউদ্দিন আহমেদ, এবং উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া ফোকাল পয়েন্ট) এস এম শফিকুল ইসলাম।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (ভারপ্রাপ্ত) কমিশনার জাহিদুল হাসান বলেন, খতিবকে নিয়ে কোন মহল যেন চক্রান্ত করতে না পারে সেজন্য কত রাতেই তাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল। ১৬৪ধরায় আদালতে জবানবন্দি দেয়ার পরে তাকে তার পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। মুফতি মুহিবুল্লাহ বর্তমানে পরিবারের জিম্মায় আছেন এবং তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ হওয়ার প্রক্রিয়ায় আছেন। তদন্ত টিম মামলার প্রক্রিয়া অনুযায়ী পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।