Image description
জুলাই সনদ

গণভোটের বিষয়টি নির্বাচনের দিন পর্যন্ত সরকারের ওপর ছেড়ে দিয়েছে ঐকমত্য কমিশন সংসদ ব্যর্থ হলে ২৭০ দিন পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর হবে

গণভোট, নোট অব ডিসেন্টসহ অনেকগুলো বিতর্ক জারি রেখেই জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সুপারিশে বলা হয়েছে- আগামী জাতীয় সংসদ নিয়মিত আইন প্রণয়ন কাজের পাশাপাশি প্রথম ২৭০ দিন সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে কাজ করবে। এ সময়ের মধ্যে গণভোটে পাস হওয়া সংবিধান সংশোধনী প্রস্তাবগুলো সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। সুপারিশে বলা হয়েছে- আগামী জাতীয় সংসদ নিয়মিত কাজের পাশাপাশি প্রথম ২৭০ দিন (৯ মাস) সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে কাজ করবে। গণভোটে পাস হওয়া প্রস্তাবগুলো এই সময়ের মধ্যে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করবে। পরিষদ ব্যর্থ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হবে।

এ ছাড়াও সংসদ নির্বাচনের দিন বা আগে জুলাই সনদ নিয়ে গণভোট আয়োজনের কথা বলা হয়েছে সুপারিশে। সংবিধান সংশ্লিষ্ট ৪৮টি বিষয়কে সামনে রেখেই গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। জুলাই সনদ সংক্রান্ত সরকার একটি আদেশ জারি করবেন। আদেশটি হবে ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ ২০২৫’। গণভোটে একটি প্রশ্নই থাকবে। প্রশ্নটি হবে- ‘আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ ২০২৫ এবং ইহার তফসিল-১ সন্নিবেশিত সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত খসড়া বিলের প্রস্তাবসমূহের প্রতি আপনার সম্মতি জ্ঞাপন করিতেছেন?’।

সংবিধান সংস্কার পরিষদের বিষয়ে সুপারিশে বলা হয়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত প্রতিনিধিগণের সমন্বয়ে একটি সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠিত হবে। যা সংবিধান সংস্কার বিষয়ে গাঠনিক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে। ন্যূনতম ৬০ সদস্যের উপস্থিতির প্রয়োজন এই পরিষদের। যে বিষয়গুলো অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন সম্ভব এবং যেগুলো অফিস অর্ডারের মাধ্যমে বাস্তবায়ন সম্ভব সেসব বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে জানিয়েছে কমিশন। ওদিকে কমিশনের জমা দেয়া সুপারিশে অনেক বিষয় উপস্থাপন করা হয়েছে যা রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যে হয়নি। বিএনপি’র পক্ষ থেকে গতকাল এ নিয়ে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, ঐকমত্য কমিশন অনৈক্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছে। 

আনুষ্ঠানিক আদেশ কেন প্রয়োজন: সুপারিশের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, যেহেতু জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের জন্য সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী জনগণের অনুমোদন প্রয়োজন এবং গণভোট অনুষ্ঠান, সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন এবং সেই পরিষদ কর্তৃক সংবিধান সংস্কার অপরিহার্য, তাই এটি বাস্তবায়ন সম্পন্ন করার জন্য একটি আনুষ্ঠানিক আদেশ জারি করা একান্ত প্রয়োজন।

গণভোটে কী থাকবে: জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগের উদ্দেশ্যে জুলাই জাতীয় সনদের সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত অংশ গণভোটে উপস্থাপন করা হবে। গণভোটের ব্যালটে প্রশ্ন থাকবে- ‘আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং ইহার তফসিল-১ এ সন্নিবেশিত সংবিধান সংস্কার প্রস্তাবসমূহের প্রতি আপনার সম্মতি জ্ঞাপন করিতেছেন?’ তফসিল-১ এ সংবিধানসংক্রান্ত ৪৮টি সংস্কার প্রস্তাব থাকবে। এখানে দলগুলোর আপত্তি বা নোট অব ডিসেন্টের উল্লেখ থাকবে না। ব্যালটের মাধ্যমে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে এবং নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত ব্যালটে প্রত্যেক ভোটার গোপনে ভোট দেবেন।

গণভোট কবে হবে: ঐকমত্য কমিশন এ ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট সময় বলে দেয়নি। সুপারিশে বলা হয়েছে, আদেশ জারির পর থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ‘যথোপযুক্ত’ সময়ে অথবা সংসদ নির্বাচনের দিন গণভোট হবে। গণভোট অনুষ্ঠানের জন্য আইন প্রণয়ন করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ’ জারির পর থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন পর্যন্ত যেকোনো দিন গণভোট আয়োজন করা যেতে পারে।

গণভোটের ফল হ্যাঁ হলে কী হবে: গণভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট ‘হ্যাঁ’-সূচক হলে পরবর্তী সংসদে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠিত হবে। এই পরিষদ সংবিধান সংস্কার বিষয়ে ‘গাঠনিক’ (কনস্টিটুয়েন্ট) ক্ষমতা প্রয়োগ করবে। আর যদি গণভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট ‘না’ সূচক হয়, তাহলে এই প্রক্রিয়ার সেখানেই ইতি ঘটবে।

সংবিধান সংস্কার পরিষদের কাজ কী হবে: সুপারিশে বলা হয়েছ, নির্বাচিত এমপিদের নিয়ে গঠিত সংবিধান সংস্কার পরিষদ প্রথম অধিবেশন শুরু থেকে ২৭০ দিনের মধ্যে জুলাই সনদ অনুসারে সংবিধান সংস্কারেরর কাজ শেষ করবে। এই কাজ শেষ হওয়ার পর সংবিধান সংস্কার পরিষদ বিলীন হয়ে যাবে প্রথাগত সংসদে।

তবে ২৭০ দিনের মধ্যে যদি সংস্কার আনা না যায়, তবে কী হবে? তার ব্যাখ্যায় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, ২৭০ দিনের মধ্যে তা অনুমোদন না করলে এগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হয়ে যাবে।

এমপিদের দুই শপথ: পরবর্তী সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত ব্যক্তিরা সংস্কারের ২৭০ দিনের সময়সীমার আগপর্যন্ত সংবিধান সংস্কার পরিষদ পরিষদের সদস্য হিসেবে অভিহিত হবেন। এ জন্য তারা নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথমে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেবেন। এরপর সংবিধান সংস্কার পরিষদের সদস্য হিসেবে আরেকটি শপথ নেবেন।

কীভাবে হবে প্রস্তাব পাস: পরিষদের প্রথম অধিবেশনের প্রথম বৈঠকে সভাপ্রধান ও উপ-সভাপ্রধান (স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের মতো) নির্বাচন করবেন। কোরামের জন্য ন্যূনতম ৬০ (ষাট) জন পরিষদ সদস্যের উপস্থিতিই যথেষ্ট হবে। সংবিধান সংস্কারসংক্রান্ত কোনো প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য প্রয়োজন হবে পরিষদের মোট সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট।

যেভাবে হবে উচ্চকক্ষ: সংবিধান সংস্কার শেষ হওয়ার ৪৫ দিনের মধ্যে নিম্নকক্ষের নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে একটি উচ্চকক্ষ গঠন করা হবে। তবে ওই উচ্চকক্ষের মেয়াদ নিম্নকক্ষের (জাতীয় সংসদের) মেয়াদের শেষ দিবস পর্যন্ত হবে।

সংস্কারের জন্য আর ভোট লাগবে না: সার্বভৌম জনগণের অভিপ্রায়ের ভিত্তিতে সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠিত হবে বলে সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে আর কোনো অনুমোদন বা ভোটের প্রয়োজন হবে না। জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের অঙ্গীকারনামা অনুসারে সংবিধানে জুলাই জাতীয় সনদ অন্তর্ভুক্ত হবে।

নোট অব ডিসেন্টের কী হবে: ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় বিভিন্ন প্রস্তাবে বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের ‘নোট অব ডিসেন্ট’ ছিল। এর আগে বলা হয়েছিল, যেসব দলের যে প্রস্তাবে নোট অব ডিসেন্ট রয়েছে, তারা ক্ষমতায় গেলে ওই প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে তাদের ওপর বাধ্যবাধকতা থাকবে না। গতকাল খসড়া জমা দেয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলোর ‘নোট অব ডিসেন্ট’ নিয়ে কী হবে-প্রশ্নের জবাবে আলী রীয়াজ বলেন, তারা (কমিশন) সরকারকে বলেছেন এগুলো জনগণের কাছে নিয়ে যেতে। জনগণের রায় পাওয়ার পর রাজনৈতিক দল সিদ্ধান্ত নেবে। কমিশন ৪৮ বিষয়ে জনগণের সম্মতি-অসম্মতিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।

যা বলেছে ঐকমত্য কমিশন: জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ জমা দেয়ার পর রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানান ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ। 
তিনি বলেন, আমরা জাতীয় নির্বাচনের দিন বা আগে গণভোট করার কথা সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছি। তবে এই আদেশ জারির পর থেকে যেকোনো দিন গণভোট করতে পারবে। তবে কবে করবে সেটার সিদ্ধান্ত সরকার নেবে, সরকারকে বলেছি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে পরামর্শ করার জন্য।

আলী রীয়াজ বলেন, প্রয়োজনীয় সংশোধন সংযোজন, পরিবর্তনের জন্য আমরা সাংবিধানিক পাওয়ার হিসেবে জনগণের ক্ষমতা যেন ব্যবহৃত হয়, সেজন্য এই প্রস্তাব করেছি। আমরা আশা করি যে এই প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়েই তা অর্জন করা যাবে।

তবে আমাদের আরও একটি বিকল্প প্রস্তাব আছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দ্বিতীয় বিকল্পেও বলা হচ্ছে-সরকার একটি আদেশ জারি করবেন। সেই আদেশের অধীনে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। গণভোটে একটি মাত্র প্রশ্ন থাকবে। তবে ওই আদেশের তফসিলে যে ৪৮টি বিষয় আছে সেগুলো অন্তর্বর্তী সরকার সেগুলোকে বিল আকারে প্রস্তুত করেও জনগণের সামনে উপস্থাপন করতে পারেন। 
ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি বলেন, যখন বিল আকারে উপস্থাপিত হবে এবং গণভোটের মধ্যদিয়ে যদি জনগণের সম্মতি লাভ করা যায় তবে ওই বিলটি সংবিধান সংস্কার পরিষদের কাজে সহযোগিতা করবে। এটা কোনো অবস্থাতেই কেবলমাত্র তাদের গ্রহণের জন্য দেয়া হবে না। এটি যেন তাদের (সংবিধান সংস্কার পরিষদ) কাজের সহযোগিতা করে। 

আলী রীয়াজ বলেন, সংবিধান সংস্কার পরিষদ জাতীয় সংসদের যিনি স্পিকার হবেন তিনি সংবিধান সংস্কার পরিষদের সভাপতিত্ব করবেন। তার অনুপস্থিতিতে ডেপুটি স্পিকার ওই সভার সভা ওই পরিষদের সভায় সভাপতিত্ব করবেন। তাদের উভয়ের অনুপস্থিতিতে সংস্কার পরিষদে গঠিত সভাপতি প্যানেল থেকে ওই পরিষদের বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস যে সংবিধান সংস্কার পরিষদ তাদের দায়িত্ব পালনে সক্ষম হবেন এবং কোনো অবস্থাতেই এমন পরিস্থিতির সূচনা হবে না যে সরকারের দেয়া বিলগুলোকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাস্তবায়িত করতে হবে। আমরা এটা আস্থা রাখতে চাই।

সুপারিশের প্রধানত তিনটি ভাগ আছে উল্লেখ করে আলী রীয়াজ বলেন, প্রথমটি হচ্ছে যে সকল বিষয়ে সাংবিধানিক বিষয় সংশ্লিষ্ট নয়, সে সমস্ত বিষয়ে সরকার যেগুলো অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে পারেন সেটা যেন অবিলম্বে সরকারের পক্ষ থেকে সে সমস্ত বিষয় বাস্তবায়িত করা হয়। দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে এর মধ্যে সুপারিশের অনেক কিছুই আছে যেগুলো সরকারি নির্দেশ এমনকি অফিস অর্ডার দিয়েও বাস্তবায়ন করা সম্ভব সেগুলো যেন সরকার দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়ন করে। এ দুটো বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনোরকম ভিন্নমত নেই এবং এটা আলোচনার মধ্যদিয়ে যখনই ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমরা সেটা সরকারকে অবহিত করেছি।

কোনগুলো অধ্যাদেশের মাধ্যমে কোনগুলো অফিস অর্ডারের মাধ্যমে করা যাবে জানিয়ে ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ক্ষেত্রে আমরা লক্ষ্য করেছি যে সাংবিধানিক বিষয়গুলোতে অনেক অনেক বিষয়ে ঐকমত্য আছে। কিছু বিষয়ে ভিন্ন মত আছে। এই সংবিধান সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে বাস্তবায়নের একটি আইনি ভিত্তি প্রদান এবং বাস্তবায়নের পথ নির্দেশ করার জন্য আমরা আমাদের তৃতীয় সুপারিশে কীভাবে এগুলোকে বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হওয়া যায় তার সুপারিশ করেছি। 
তিনি বলেন, সংবিধান সংশ্লিষ্ট ৪৮টি বিষয়ের ব্যাপারে আমরা সরকারকে পরামর্শ দিয়ে বলেছি দুটো। বিকল্প প্রস্তাব হিসেবে সরকারের হাতে আছে। এর দুটো বিকল্পেরই কিছু কিছু জিনিস এক কিন্তু সামান্য ভিন্নতাও আছে আমাদের প্রস্তাবে, আমরা সরকারকে অনুরোধ করেছি, পরামর্শ দিয়েছি যে সরকার যেন অবিলম্বে একটি আদেশ জারি করে। এই আদেশের বিষয় হবে জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ সংবিধান সংস্কার বিষয়ক। সরকারের এই আদেশের অধীনে সরকার একটি গণভোটের আয়োজন করবেন। 

তিনি বলেন, গণভোটে জনগণের কাছে আমরা সুপারিশ করেছি সরকার যেন একটি প্রশ্ন উত্থাপন করেন। সেটি হচ্ছে এই যে আদেশ এবং আদেশের তাফসিলে অন্তর্ভুক্ত ৪৮টি সংবিধান সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সেগুলো বাস্তবায়নের ব্যাপারে জনগণের সম্মতি আছে কিনা? আমরা যে সুপারিশ করেছি তাতে বলা হয়েছে যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ একইসঙ্গে সংবিধান সংস্কার পরিষদ এবং জাতীয় সংসদ হিসেবে কার্যকর থাকবে।

সংবিধান সংস্কার পরিষদ কার্যকর থাকবে ২৭০ দিন উল্লেখ করে আলী রীয়াজ বলেন, এই সময়ের মধ্যে সংবিধান সংস্কার পরিষদের সদস্যরা জুলাই জাতীয় সনদে বর্ণিত এবং গণভোটে যদি সকলের জনগণের সম্মতি পাওয়া যায় সেই বিষয়গুলো সংবিধানে সংযুক্ত করার জন্য প্রয়োজন সমস্ত রকম বিধি-বিধান প্রয়োজনীয় সংশোধন সংযোজন বিয়োজন পরিবর্ধন পরিমার্জন করবেন। 
তিনি আরও বলেন, এরপরে যেটা আমরা বলেছি সেটি হচ্ছে একটি অন্যতম বিষয় হচ্ছে একটি উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা করা। সংবিধান সংস্কার কমিশন এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এবং নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট সুপারিশ ছিল ভোটের সংখ্যানুপাতে ১০০ সদস্যের একটি উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা করা। সেই মোতাবেক যদি জনগণের সম্মতি পাওয়া যায়, তবে জাতীয় সংসদ প্রতিষ্ঠার ২৭০ দিনে সংবিধান সংস্কার পরিষদের সময়ের সঙ্গে আরও ৪৫ দিনের মধ্যে উচ্চকক্ষ গঠন বিষয়ক প্রয়োজনীয় সংশোধনীর মাধ্যমে তা বাস্তবায়িত হবে। 

ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় রাজনৈতিক দলগুলোর ‘নোট অব ডিসেন্ট’ নিয়ে কী হবে-এমন প্রশ্নের জবাবে আলী রীয়াজ বলেন, কমিশন এগুলো জনগণের কাছে নিয়ে যেতে সরকারকে অনুরোধ করেছেন। জনগণের রায় পাওয়ার পর রাজনৈতিক দল সিদ্ধান্ত নেবে। কমিশন সংবিধানের ৪৮ বিষয়ে জনগণের সম্মতি-অসম্মতিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের যে প্রস্তাব করা হয়েছে তাতে ইতিবাচক ফল না এলে কী হবে, এমন প্রশ্নে জনগণের ওপর আস্থা রাখার কথা বলে আলী রীয়াজ বলেন, গণভোটে পাস না হলে গণভোট পাস হবে না। তার মানে জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে।
লাতিন আমেরিকার দেশ চিলিতে সংবিধান নিয়ে দুইবার গণভোট ব্যর্থ হওয়ার উদাহরণ টেনে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এই অধ্যাপক বলেন, প্রথমবার চিলিতে একটা সংবিধান তৈরি করে দেয়া হলো গণভোটে, সেটা হারলো। কেউ কেউ বললেন, এটা অনেক বেশি দক্ষিণপন্থি হয়ে উঠেছিল অথবা বামপন্থি হয়ে উঠেছিল। একেকজনকে একটা বললো। তারপর আবার এটা সংশোধন-সংযোজন করা হয়, করে আবার গণভোটে দেয়া হয়েছিল। আবারো ফেল করেছে। পাস না করলে তার মানে হচ্ছে যে, জনগণ তাহলে গ্রহণ করছেন না। এই জন্য আমি বলছি আবার, জনগণের ওপর আস্থা রাখুন।

এসময় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. মো. আইয়ুব মিয়া, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দার ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।