সিরাজগঞ্জ জেলায় এইচআইভি/এইডস সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ এলাকাটিকে “রেড জোন” হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এ বছর (২০২৫) জেলার বিভিন্ন উপজেলায় নতুন করে ২৫৫ জন এইচআইভি পজিটিভ রোগী শনাক্ত হয়েছেন, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, আক্রান্তদের মধ্যে ১৮৭ জন ইনজেকশন ড্রাগ ব্যবহারকারী (IDU), ৩৫ জন সাধারণ মানুষ, ২৯ জন ছাত্র এবং ৪ জন যৌনকর্মী। এইচআইভি-সম্পর্কিত জটিলতায় ইতিমধ্যে ২৬ জন রোগী মৃত্যুবরণ করেছেন। জেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, একই সিরিঞ্জ বা সুঁই বারবার ব্যবহার, অনিরাপদ যৌনচর্চা এবং সচেতনতার ঘাটতি সংক্রমণ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। অনেকেই লজ্জা বা ভয়ের কারণে রোগ লুকিয়ে রাখছেন, ফলে নিয়ন্ত্রণ আরও কঠিন হয়ে পড়ছে।
জানা গেছে, জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক সংস্থা (UNODC) ইতোমধ্যে সিরাজগঞ্জে এইচআইভি প্রতিরোধ কর্মসূচি জোরদার করেছে। স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে ফ্রি টেস্টিং, কাউন্সেলিং এবং চিকিৎসা সুবিধা চালু করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, জেলার ৯টি উপজেলায় জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও ইনজেকশন ড্রাগ ব্যবহারকারীদের জন্য নিরাপদ সিরিঞ্জ সরবরাহ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি যৌনকর্মী ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে কনডম বিতরণ ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের পরিকল্পনা চলছে।
এদিকে, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শুধুমাত্র চিকিৎসা নয়, বরং সামাজিক সচেতনতা ও পুনর্বাসন কার্যক্রম বাড়ানোই এই সংকট মোকাবিলার মূল উপায়। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য বিভাগের অধ্যাপক ডা. সায়মা তাসনিম গণমাধ্যমকে বলেন, এইডস এখন আর শুধু এক শ্রেণির সমস্যা নয়—এটি পুরো সমাজের জন্য সতর্কবার্তা।
এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ নুরুল আমীন বলেন, সিরাজগঞ্জে ইনজেকশন ড্রাগ ব্যবহারকারীদের মধ্যে সংক্রমণের হার দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এখনই কঠোর ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে।