Image description
 

পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান মাল্টি সিকিউরিটিজ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হাসান তাহের ইমাম বিনিয়োগকারীদের কয়েকশ কোটি টাকা মেরে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া আরও অভিযোগ, পাচার করা অর্থে বিদেশে তার রয়েছে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিকানা। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এসব অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমেছে। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র চেয়ে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি দপ্তরে চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি।

 
 

দুদকের তথ্যমতে, মাল্টি সিকিউরিটিজ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হাসান তাহের ইমামের বিরুদ্ধে তার ব্রোকার হাউজে বিনিয়োগকারীদের কয়েকশ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে নিজের ও স্ত্রী-সন্তানদের নামে দেশে-বিদেশে সম্পদের মালিকানা রয়েছে এমন অভিযোগ জমা পড়ে দুদকে। কমিশন অভিযোগটি অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সংস্থাটির সহকারী পরিচালক আফিয়া খাতুনকে নিয়োগ দেন। তিনি অনুসন্ধানের স্বার্থে হাসান তাহের ইমাম ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে-বেনামে থাকা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য চেয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, ব্যাংক-বীমা, সিটি করপোরেশন, ভূমি অফিস, সাব-রেজিস্ট্রি অফিসসহ বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দিয়েছেন। গত বছরের ৭ মে এসব চিঠি পাঠানো হয়। তবে সব দপ্তর থেকে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র এখনো দুদকে এসে পৌঁছায়নি। ফলে আটকে আছে অনুসন্ধান কাজ।

 

দুদকের টেবিলে থাকা অভিযোগে বলা হয়, হাসান তাহের ইমাম ও তার পরিবারের নামে ঢাকায় কয়েকটি বাড়ি ও প্লট থাকার প্রমাণ দুদকের কাছে রয়েছে। এসব বাড়ির মধ্যে ঢাকার অভিজাত এলাকা বনানী ৪ নম্বর রোডের ৬৫ নম্বর প্লট, একই এলাকার জি-ব্লকের ৭ নম্বর রোডের ২১ নম্বর প্লট এবং উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর রোডের ৪৬ নম্বর বাড়ি। এছাড়া ঢাকার একটি আবাসিক প্রকল্পে তার বেশ কয়েকটি প্লট রয়েছে। এসব বাড়ি ও প্লটের মালিক হিসেবে কাদের নাম রয়েছে তা জানাতে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

 

অভিযোগে আরও বলা হয়, মাল্টি সিকিউরিটিজ ব্যবহার করে বিভিন্ন মিউচুয়াল ফান্ডের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির সম্মুখীন করার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে হাসান তাহের ইমামের বিষয়ে তদন্ত করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সিআইডির তদন্তে উঠে আসে রেইস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হাসান তাহের ইমামের পরিচালিত মিউচুয়াল ফান্ড তথা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পাবলিক ফান্ডগুলোকে ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করে তার নিজ নিয়ন্ত্রিত অ্যাকাউন্টের সঙ্গে অনৈতিক লেনদেন করে সাধারণ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে।

 

তিনি রেইস পরিচালিত পাবলিক ফান্ড এবং এসভিপি এর সমগ্র বাণিজ্যিক ও আর্থিক কার্যক্রম তার নিজস্ব প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা, ব্যক্তিগত তহবিলের সুবিধার্থে ব্যবহার করছেন এবং অনৈতিক উপায়ে অর্থ উপার্জন করেন। তার স্বেচ্ছাচারিতার কারণে ৫ বছরে রেইস ফান্ড ট্রেড অপারেশনে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা মূল্যের অনৈতিক এবং আইন বিরুদ্ধ লেনদেন হয়েছে, যাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন পাবলিক ফান্ড এবং ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা।

 

জানা গেছে, ড. হাসান তাহের ইমাম আমেরিকান প্রবাসী। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর তিনি ২০০৯ সালে আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে আসেন। দেশে আসার পর তিনি রেইস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট নামে একটি মিউচুয়াল ফান্ড গঠন করেন এবং মানুষকে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করেন। তিনি বিনিয়োগকারীদের রিটার্ন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু বিনিয়োগকারীরা তো রিটার্ন পাননি, উল্টো তাদের সর্বস্বান্ত হতে হয়েছে।

 

গুলশানের বান্ধবীর বাড়ি ও গাজীপুরে জমি দখল : হাসান তাহের ইমামে বিরুদ্ধে আমেরিকান প্রবাসী এক নারীর ১৫ কাঠা আয়তনের গুলশান এভিনিউয়ের এনই-ব্লকের ৩ নম্বর প্লটটি দখল করার অভিযোগ আছে। প্লটটির বাজার মূল্য ২০০ কোটি টাকার বেশি। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী তার বিরুদ্ধে গুলশান থানায় ২০২৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি একটি জিডি (যার নম্বর-৬৮৯) করেন। এ জিডির তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আমিরুল শেখ।

জিডির বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই আমিরুল শেখ দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমি এখন গুলশান থানায় নেই। প্রতিনিয়ত জিডি ও মামলার তদন্ত কাজে ব্যস্ত থাকি। এ কারণে ওই জিডির বিষয়টি এখন স্মরণে নেই।

হাসান তাহেরের বিরুদ্ধে গাজীপুরের গাছা থানার পলাসোনা, ইছরকান্দি ও মুদিপাড়া মৌজার শত শত একর কৃষি ও জলাভূমি তার দখলের অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগে বলা হয়, তিনি ২০০৯ সালে নীড় নামে একটি আইটি কোম্পানি করার জন্য গাছা এলাকায় এক খ- জমি কেনেন। পরে সেখানকার কৃষকদের কাছ থেকে জমি কিনতে শুরু করেন। কারও জমি বায়না করেন, কারও জমি জোর করে দখল করার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। তিনি স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় প্রায় আড়াই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে দখল করা জমিতে বাউন্ডারি দেয়াল নির্মাণ করেছেন।

জানা গেছে, হাসান তাহের ইমাম দুটি মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। যেগুলো তার সেক্রেটারি খন্দকার আরিফুল ইসলামের নামে নিবন্ধন করা। গতকাল রবিবার বিকেলে অভিযোগের বিষয়ে মতামত জানতে চেয়ে দুটি মোবাইল নম্বরে ফোন দেওয়া হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।