আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রায় এক লাখেরও বেশি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ভোটের দায়িত্ব পালন করবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। যে কারণে এরই মধ্যে নির্বাচনি আইনে সংস্কার করে সশস্ত্র বাহিনীকে যুক্ত করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায়।
ফলে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরাও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের মতো ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করতে পারবে। যে কারণে নির্বাচনের আগে সশস্ত্র বাহিনীকে দায়িত্ব দিতে আলাদা কোনো আদেশের প্রয়োজন হবে না।
সশস্ত্র বাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় যুক্ত করা হলেও নির্বাচনের সময় তাদের বিচারিক ক্ষমতার প্রশ্নে নানা আলোচনা তৈরি হয়েছে।
গত সপ্তাহে নির্বাচন কমিশনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ওই বৈঠকে আগামী নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষ থেকে নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার বা বিচারিক ক্ষমতা দেওয়ারও দাবি জানানো হয়েছে নির্বাচন কমিশনের কাছে।
অতীতের জাতীয় নির্বাচনগুলোয় সেনাবাহিনী দায়িত্ব পালন করলেও তাদের হাতে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার ছিল না।
বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন বলছে, ভোটের সময় সশস্ত্র বাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় যুক্ত করা হয়েছে। যে কারণে তাদেরকে আলাদা করে বিচারিক ক্ষমতা দেওয়ার এখতিয়ার ইসির হাতে নেই।
যে কারণে নির্বাচন কমিশন বলছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় যুক্ত করা হলেও অতীতের মতোই এবারও নির্বাচনে স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসনকে ‘সহায়তা করার জন্য ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’-এর আওতায় সশস্ত্র বাহিনীকে নির্বাচনি দায়িত্বে মোতায়েন করা হবে।
নির্বাচন কিংবা বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। গত বছরের আগস্ট মাসে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে সেনাবাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এরপর কয়েক দফায় সেই ক্ষমতার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
এখন নির্বাচনকালীন সময়েও সেই ক্ষমতা বহাল রাখার দাবি করা হয়েছে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে।
সশস্ত্র বাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার কী?
ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার বা বিচারিক ক্ষমতা হলো এমন একটি ক্ষমতা, যার ফলে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি কাউকে গ্রেফতার করার আদেশ দেওয়া, স্বল্পমেয়াদী সাজা দেওয়া বা প্রয়োজনে গুলি চালানোর মতো আদেশ দিতে পারেন।
বাংলাদেশে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সেনাবাহিনী আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করেছে। নির্বাচনকালীন দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বিভিন্ন কাজে মাঠ প্রশাসনকে সহায়তাও করেছে সেনাবাহিনী।
সর্বশেষ ২০০৭ সালে ওয়ান ইলেভেনের সময় দায়িত্ব পালন করেছিল ফখরুদ্দিন আহমেদের সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দেশে জরুরি অবস্থা জারি ছিল। ফলে আলাদা ঘোষণা দিয়ে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিতে হয়নি। তখন সেনা সদস্যরা আটক বা গ্রেফতার, অভিযান বা তল্লাশির মতো কাজগুলো করেছেন।
তবে নির্বাচনের আগে জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করা হয়। নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনী অন্যান্য বাহিনীর মতোই সিভিল প্রশাসনকে সহায়তাকারী বাহিনী হিসেবে কাজ করেছে।
এর আগে ২০০২ সালে অপারেশন ক্লিনহার্টের সময় সেনা সদস্যদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে বিশেষ অভিযান চালানোর ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল।
গত বছরের পাঁচই আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এক মাসের মাথায় গত বছরের সেপ্টেম্বরে সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা বা ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার বা বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। এরপর কয়েক দফায় সেই ক্ষমতার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
সেই থেকে এখনও পর্যন্ত এই বিচারিক ক্ষমতা নিয়ে সারা দেশে দায়িত্ব পালন করছে সেনাবাহিনী। ওই সময় সরকারের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়- বাংলাদেশের ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭টি ধারায় সেনা কর্মকর্তারা তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে।
সাধারণত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর তল্লাশি, অভিযান, সন্দেহভাজনদের আটক করার ক্ষমতা থাকে। কিন্তু কাউকে গ্রেফতার দেখানো, সাজা দেওয়া বা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গুলি চালানোর মতো নির্দেশ দিতে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার থাকতে হয়।
ফৌজদারি কার্যবিধির এসব ধারা অনুযায়ী, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পাওয়ায় এখন থেকে সেনা কর্মকর্তাদের সামনে কোনো অপরাধ হলে অপরাধীদের সরাসরি গ্রেফতার করতে পারবেন, দিতে পারবেন কারাদণ্ড বা জামিনও।
সিনিয়র আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, ‘সেনাবাহিনীর সাধারণত কাউকে অ্যারেস্ট করার ক্ষমতা নাই। কিন্তু যখন সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার থাকে তখন শুধু আটকই নয়, তাৎক্ষণিক বিচার করে একমাসের জন্য জেলেও পাঠাতে পারে।
আর যদি এই বিচারিক ক্ষমতাটা সেনাবাহিনীর হাতে না থাকে তাহলে তখন তার স্থানীয় প্রশাসনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।’
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন সাধারণত কমিশন সেনা কর্মকর্তাদের নির্দেশেই এই বিচারিক ক্ষমতার প্রয়োগ করা যায়।
সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক এমদাদুল ইসলাম বলেন, ‘এই বিচারিক ক্ষমতা পাওয়ার পর এখন কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিতে সেনাবাহিনীকে প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না।’
নির্বাচনে বিচারিক ক্ষমতার দাবির কারণ কী?
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচন থেকেই নির্বাচনকে ঘিরে সেনাবাহিনী মোতায়েনের রেওয়াজ চলে আসছে। ১৯৭৩ সালের নির্বাচন থেকে বাংলাদেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।
সাধারণত নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দিতে বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় সক্রিয় থাকে সেনাবাহিনী। সেই সময় সাধারণত একজন ম্যাজিস্টেটের সঙ্গে থেকে সেনাদলগুলো দায়িত্ব পালন করে।
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, অতীতেও নির্বাচনের সময় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করতে সেনাবাহিনী ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিল।
সাধারণত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো বা স্ট্রাইকিং ফোর্সগুলোর নিয়ন্ত্রণ, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য ম্যাজেস্ট্রিসি পাওয়ার বা বিচারক ক্ষমতা সিভিল প্রশাসনের হাতে রাখা হয়।
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বর্তমান নির্বাচন কমিশন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বা আরপিওতে সংস্কার প্রস্তাব পাঠায় সরকারের কাছে।
সেখানে নির্বাচনের সময় আরপিওতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পরে নির্বাচন কমিশনের ওই সংশোধিত প্রস্তাবনা অনুমোদন দেয় সরকার।
এর আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় পুলিশ কিংবা অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নাম থাকলেও সেনাবাহিনী বা সশস্ত্র বাহিনীর নাম ছিল না।
নির্বাচন বিশ্লেষক ও সাবেক ইসি কর্মকর্তা জেসমিন টুলী বলেন, ‘এর আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনীর কথা উল্লেখ ছিল না। সংশোধিত আরপিওতে সেটি যুক্ত করার ফলে সশস্ত্র বাহিনী নির্বাচনী ভোটকেন্দ্র ও এর চারশো গজের মধ্যে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতোই দায়িত্ব পালন করতে পারবে, অ্যাকশন নিতে পারবে।’
কিন্তু এক্ষেত্রে কেন্দ্রের বাইরে কিংবা অন্য জায়গায় যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তখন কি সেনাবাহিনী তার নিজ ক্ষমতাবলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে?
এই প্রশ্নে বিশ্লেষকরা বলছেন- বিচারিক ক্ষমতা না থাকলে সেই সুযোগ পাবেনা। সেক্ষেত্রে ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার অর্থাৎ বেসামরিক প্রশাসনের সহযোগিতায় তারা দায়িত্ব পালন করতে পারবে।
সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তারা বলছেন, গত বছরের পাঁচই আগস্টের পর এমনিতেই পুলিশ বাহিনী কিছুটা দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। যে কারণে সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শুধুমাত্র ভোটের সময় যদি সেই ক্ষমতা না থাকে তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়েও নানা শঙ্কা তৈরি হতে পারে।
দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেক সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গুলি চালানোর মতো অবস্থা তৈরি হতে পারে। আইন অনুযায়ী এরকম ঘটনা ঘটলে পরবর্তীতে একজন ম্যাজিস্ট্রেস পুরো ঘটনা তদন্ত করেন। তার কাছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তাদের কাজে যৌক্তিকতা বা ব্যাখ্যা তুলে ধরতে হয়।
অনেকে মনে করেন, সেই জবাবদিহিতার বিষয়টি সেনাবাহিনী নিজের কাছে রাখতে চায় বলে বিচারিক ক্ষমতার বিষয়ে বিশেষ জোর দিয়েছে।
আগাম বিচারিক ক্ষমতার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন
স্বাধীন বাংলাদেশে এর আগে জাতীয় সংসদের ১২টি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে সে সব নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন হলেও তাদেরকে কোন বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া হয়নি।
তবে বিভিন্ন নির্বাচনের আগে কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে ভোটের সময় সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দেওয়ার দাবিও জানানো হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সেই দাবি আমলে নেয়নি। তা সত্ত্বেও সেনাবাহিনীর নির্বাচনকালীন দায়িত্ব পালন নিয়ে প্রশ্ন ওঠেনি।
এখন আগামী নির্বাচনের আগেও এমন দাবি উঠলেও তার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ।
দুর্নীতি বিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান নির্বাচনের সময়ে সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা কতখানি তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘নির্বাচন যদি সুস্থ ও প্রতিযোগিতাপূর্ণ হয় এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যদি খুব একটা প্রতিকূল না হয় তাহলে আগে থেকেই সেনাবাহিনীর বিচারিক ক্ষমতা দাবি করার যৌক্তিকতা দেখছি না’।
এটা অনেকটা ঢালাও কর্তৃত্ব চাওয়ার মতো বিষয় বলে তিনি মনে করেন। তার পরামর্শ, আগে থেকেই এই দাবি না তুলে পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করা উচিত।
তিনি মনে করেন, এই এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের ওপরই থাকা উচিত। পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে প্রয়োজন বোধ করলে ইসি সিদ্ধান্ত নেবে।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলছিলেন, আমাদের পুরো জাতির প্রত্যাশা এখন একটা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যদি পতিত শক্তি ঝুঁকি তৈরি করার চেষ্টা করে টাকা ও পেশি শক্তি ব্যবহার করে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে খারাপ অবস্থা সৃষ্টি করে, তখন নির্বাচন কমিশন যদি মনে করে তাদের বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া উচিত সেটা তারা করতে পারে। আগাম তাদের এই ক্ষমতা দেওয়ার কোনো প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না।’
কী করবে নির্বাচন কমিশন?
বর্তমান নির্বাচন কমিশন প্রস্তাবিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বা আরপিও সংশোধনীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনীকে যুক্ত করেছে।
এর ফলে নির্বাচনের সময় অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতোই সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করতে পারবে।
কিন্তু ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে গত সপ্তাহে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় সেখানে সেনাবাহিনীকে শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় যুক্ত না করে নির্বাচনের সময়ও তাদের বিচারিক ক্ষমতারও দাবি জানানো হয়।
ওই বৈঠকে উপস্থিত কয়েকজন নির্বাচন কর্মকর্তা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সেখানে সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বিচারিক ক্ষমতা নিয়ে মাঠে আছে সশস্ত্র বাহিনী। আসন্ন নির্বাচনে তাদের ওই ক্ষমতা দিতে ইসির কাছে দাবি জানানো হয় সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষ থেকে।
তবে এই প্রশ্নে নির্বাচন কমিশন বলছে- যেহেতু তাদেরকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় যুক্ত করা হয়েছে সে কারণে তাদেরকে বিচারিক ক্ষমতা দেওয়ার সুযোগ আর ইসির হাতে নাই।
নির্বাচন কমিশন আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, ‘আইন অনুযায়ী ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেওয়ার ক্ষমতা এখন সরকার ছাড়া আর কেউ দিতে পারবে না। এটা হলো স্বাভাবিক নিয়ম। এখানে আমাদের আর কিছু করার নাই।’
নির্বাচন বিশ্লেষক ও সাবেক সেনা কর্মকর্তারা মনে করেন পাঁচই আগস্টের পর অনেকটাই দুর্বল অবস্থায় আছে পুলিশ। যে কারণে সেনাবাহিনী নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যদি বিচারিক ক্ষমতা না পায় তাহলে তাতে নির্বাচনের মাঠের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়তে পারে।
নির্বাচন বিশ্লেষক জেসমিন টুলী বলেন, ‘শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর অনেক জায়গায় পুলিশ আগের মতো সবল নেই। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সেনাবাহিনীকে নির্বাচনের সময় বিচারিক ক্ষমতা দিলে ভাল। চাইলে ইসি সেটা দিতে পারে।’
সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক এমদাদুল ইসলাম প্রশ্ন রাখেন- এক বছরের বেশি সময় সেনাবাহিনী বিচারিক ক্ষমতা নিয়ে মাঠে আছে। কিন্তু শুধু ভোটের সময় যদি তার ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয় তাহলে এই সেনাবাহিনীকে ভোটের মাঠে রেখে লাভটা কী?