রাজধানীর বাড্ডায় বাংলা এডিশনের এক সাংবাদিক এবং এক ক্যামেরাপার্সনের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। শনিবার সাতারকুলের মগরাদিয়া মাকান হাউজিংয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হন তারা।
ওই এলাকার ভিডিও ফুটেজ এবং তথ্য সংগ্রহের সময় প্রথমে চিত্রসাংবাদিক দেলোয়ার হোসেনকে বেধড়ক মারধর, বুকে লাথি ও কিল-ঘুষি দেয় হামলাকারীরা। এতে মারাত্মকভাবে আহত হন তিনি। বর্তমানে তিনি স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হামলার সময় বাংলা এডিশনের ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়ে ভেঙে ফেলা হয়।
এই ঘটনার প্রতিবাদ করায় বাংলা এডিশনের বিশেষ প্রতিনিধি মৃদুল ইসলামের ওপরও চড়াও হয় হামলাকারীরা। তাকে চরমভাবে হেনস্তা করা হয়। এক পর্যায়ে মৃদুলকেও মারধর করে অবরুদ্ধ করে রাখে তারা।
খবর পেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছায় বাড্ডা থানার একটি পুলিশ টিম। একপর্যায়ে অভিযুক্ত মোশাররফ হোসেনসহ হামলাকারীদের আটক করে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তবে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে কয়েকজন হামলাকারী পালিয়ে যায়।
এরই মধ্যে এ ঘটনায় বাড্ডা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে বাংলা এডিশন কর্তৃপক্ষ। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)-এর সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোশাররফ হোসেন, স্থানীয় বিএনপির কয়েকজন নেতা এবং অজ্ঞাত আরও প্রায় ৫০ জন।
অভিযোগ আছে, মাকান হাউজিং এলাকায় ‘রিয়াজুল জান্নাহ ইসলামিয়া মাদ্রাসা’ প্রতিষ্ঠা করেছেন আইডিআরএ’র সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোশাররফ হোসেন। অভিযোগ অনুযায়ী, এই মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার আড়ালে অন্তত ৪০টি প্লট দখল করে রেখেছেন তিনি। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। কেউ প্রতিবাদ করলে, প্রশাসনের ভয় দেখিয়ে এবং পালিত সন্ত্রাসীদের দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন মোশাররফ।
তাই বিস্তারিত অনুসন্ধানে নামে বাংলা এডিশন টিম। সেদিন অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে বিশেষ প্রতিনিধি মৃদুলের সামনে ভুক্তভোগীরা মোশাররফের দখল ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বর্ণনা দিচ্ছিলেন। ঠিক সেই সময় মাদ্রাসার আড়ালে ছাত্র পরিচয়ে থাকা তার পালিত সন্ত্রাসীরা হামলা চালায় টিমের ওপর।
কীভাবে হামলার শিকার হয়েছেন, তার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন চিত্রসাংবাদিক দেলোয়ার।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বাংলা এডিশনের গাড়িচালক হাসেমও দিয়েছেন ঘটনার রোমহর্ষক বিবরণ।
এর আগে শেখ হাসিনার আমলে আইডিআরএ’র পদে থেকে মাত্র ছয় মাসে শত কোটি টাকার দুর্নীতি করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে মোশাররফের বিরুদ্ধে। রাজধানীর কাফরুল, শেওড়াপাড়া ও ধানমন্ডি এলাকায় বিলাসবহুল তিনটি বাড়ির সন্ধান পেয়েছে দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে। রাজধানীর সাতারকুলে ‘মাকাম হাউজিং’ নামে বিশাল প্রকল্পও রয়েছে তার। এ প্রকল্পে ‘কোয়ান্টাম প্লাস ফাউন্ডেশন’-এর নামে ৮৬টি প্লটের মালিক মোশাররফ। ফাউন্ডেশনের আওতায় কোয়ান্টাম প্লাস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কোয়ান্টাম দুগ্ধ খামার, কোয়ান্টাম বৃত্তি প্রকল্প ও ‘ফ্যামিলি বাজার’ নামে একটি বড় মার্কেট রয়েছে, যা সচিব পরিচয়ধারী মোশাররফের নিয়ন্ত্রণাধীন।
এর মধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠান জয়েন্ট স্টক থেকে লাইসেন্স নেওয়া হলেও বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছেন মোশাররফ নিজে। মাকাম হাউজিংয়ের ভিতরে ‘কোয়ান্টাম স্কুল অ্যান্ড কলেজ’ নামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ৫০ বিঘা জমির ওপর গড়ে তোলা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, অনলাইনে কেবল নামের ছাড়পত্র নিয়েই চালানো হচ্ছে ফাউন্ডেশনটি, যা নিবন্ধনের বৈধ প্রমাণ নয়। তার প্রতিষ্ঠিত এসব প্রকল্প তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন এলাকার কিছু লোকজন ও তার পালিত সন্ত্রাসীরা।
এছাড়া মোশাররফের বিরুদ্ধে একটি বেসরকারি বীমা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। একই সঙ্গে নামে-বেনামে বিপুল সম্পদ অর্জনের উৎস অনুসন্ধানও চলছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে মোশাররফ হোসেনের বিপুল পরিমাণ সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুদক।