রাজধানীর ফার্মগেটে মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে এক পথচারী নিহত হয়েছেন। রোববার (২৬ অক্টোবর) দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের দিকে ফার্মগেট মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানীর উত্তরা-মতিঝিল মেট্রোরেল নির্মাণে ব্যবহৃত বিয়ারিং প্যাডের মান নিয়ে ২০২০ সালেই প্রশ্নে উঠেছিল। বুয়েটের পরীক্ষায় দেখা যায়, প্রকল্পের উত্তরা-আগারগাঁও অংশে ব্যবহারের জন্য আমদানি করা বিয়ারিং প্যাডের একটি অংশ মানোত্তীর্ণ নয়।
বিশেষ ধরনের রাবার দিয়ে তৈরি বিয়ারিং প্যাড বসানো হয় পিয়ার ও উড়ালপথের সংযোগস্থলে, যা পুরো কাঠামোর স্থায়িত্ব ও ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এগুলো সরবরাহ করেছিল প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইতাল-থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি। মান খারাপ প্রমাণিত হওয়ায় নতুন প্যাড আমদানি করতে হয়, ফলে প্রকল্পের সময়সূচিতে বিলম্ব ঘটে।
২০২০ সালের জানুয়ারিতে একটি জাতীয় দৈনিকে এ তথ্য উঠে আসে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মেট্রোরেলের উত্তরা-আগারগাঁও অংশের প্যাকেজ ৩ ও ৪–এর নির্মাণকাজে নিম্নমানের প্যাড সরবরাহের ঘটনা ঘটে। এ অংশের দৈর্ঘ্য প্রায় ১২ কিলোমিটার, যার মধ্যে আট কিলোমিটার উড়ালপথ স্থাপন শেষ হয়। অবশিষ্ট অংশে ব্যবহারের কথা ছিল এসব প্যাডের।
বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগে পরীক্ষা শেষে একাধিক প্যাডকে মানহীন ঘোষণা করা হয়। তখন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের এক সভাতেও বিষয়টি আলোচনায় আসে। তারা জানায়, বিয়ারিং প্যাড সংক্রান্ত জটিলতার কারণে প্রকল্পের অগ্রগতি ব্যাহত হয়েছে এবং বরাদ্দের একটি অংশ অব্যবহৃত রয়েছে।
প্রকৌশলীদের মতে, বিয়ারিং প্যাড অনেকটা কুশনের মতো কাজ করে। এটি যানবাহনের চাপ পিয়ারের ওপর সমানভাবে ছড়িয়ে দেয়, ফলে ঝাঁকুনি কম হয় এবং কাঠামো দীর্ঘস্থায়ী থাকে। বুয়েটের ব্যুরো অব রিসার্চ, টেস্টিং অ্যান্ড কনসালট্যান্টস (বিআরটিসি)-এর পরিচালক ড. সামছুল হক বলেন, ‘বিয়ারিং প্যাডের মান খারাপ হলে কাঠামোগত ত্রুটি দেখা দিতে পারে, চলাচলের সময় ঝাঁকুনি অনুভূত হবে এবং পিয়ারের ভিত্তিও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।’
তিনি আরও জানান, নির্দিষ্ট সময় পর বিয়ারিং প্যাড বদলানোর নিয়ম থাকলেও দেশে এ প্রথা অনুসরণ করা হয় না।
ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘বুয়েট কিছু প্যাডকে মানহীন বললেও অন্যান্য পরীক্ষায় সেগুলো মানসম্মত পাওয়া গিয়েছিল। তবুও নিরাপত্তার স্বার্থে সেগুলো পরিবর্তন করা হয়েছে।’
যদিও গত বছরের সেপ্টেম্বরে একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে যাওয়ার পর অভিযোগ ওঠে, অদৃশ্য কারণে শেষ পর্যন্ত ত্রুটিপূর্ণ বিয়ারিং প্যাডই ব্যবহার করা হয়। যখন অভিযোগ ওঠে তত দিনে পিয়ার–ভায়াডাক্টের সংযোগস্থলে বিয়ারিং প্যাড বসিয়ে প্রায় আট কিলোমিটার উড়ালপথ বসানো হয়ে গেছে। কিন্তু পরে সেগুলো পরিবর্তন করা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।