জোবায়েদ হত্যাকাণ্ডের রেশ যেন থামছেই না। পুলিশের দাবি, বর্ষা জড়িত। তবে পরিবার বলছে উল্টো কথা। ওই সময় বর্ষা ঘর থেকে বেরই হয়নি, পুলিশের বক্তব্যকে ‘ভুল’ বলেই দাবি করছেন তারা। যদিও সত্য কোনটা আর কোনটিই বা মিথ্যা, তা নিয়ে এখনও সিদ্ধান্তে আসতে পারেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কেউ।
বিষয়টি নিয়ে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে কথা হয়েছে বর্ষার বাবার। তিনি দাবি করেন বলেন, পুলিশ বলেছে বর্ষা পরিকল্পনা করে স্যারকে খুন করেছে। কিন্তু আমি বলছি বলছি পুলিশের এই বক্তব্য মিথ্যা। এটা পুরোপুরি মিথ্যা। এটা কোন ভাবেই হতে পারে না। পুলিশ সত্যটা বলেনি। বর্ষা এই হত্যা সম্পর্কে কিছুই জানতো না। মাহিরই খুন করেছে। বর্ষা খুনের সম্পর্কে কিছু জানতো না। শনিবার (২৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বর্ষার বাবা গিয়াস উদ্দিন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে এসব কথা বলেন।
পুলিশের আরো বেশ কয়েকটি বক্তব্যকে মিথ্যা দাবি করে তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশের বলা বক্তব্যে বলা হয়- খুনের সময় বর্ষা তৃতীয় তলায় দাঁড়িয়ে ছিলো। এবং খুনের আগে বর্ষার নিকট জোবায়েদ বাচার আকুতি জানিয়েছিলো পুলিশের এই সকল বক্তব্য মিথ্যা। এগুলি সব মিথ্যা। এগুলো সব ভুল।’
সেদিনের বর্ননা দিয়ে তিনি বলেন, ‘ওর (বর্ষার) স্যার (জোবায়েদ হোসাইন) যখন খুন হয় সেদিন বর্ষার আম্মু বর্ষাকে ভাত খাওয়ায়ে দিচ্ছিলো। বর্ষা ঘরের মধ্যে ছিলো। খুনের ঘটনা জানার পর বর্ষা ৫ তলার বাসা থেকে তৃতীয় তলায় আসে ওর আম্মুর সঙ্গে। খুনের সময় বর্ষা উপস্থিত ছিলো না। এর আগে সারাদিন বর্ষা বাসা থেকে নামেইনি।’
এর আগে ডিএমপির প্রেস বিফ্রিংয়ে পুলিশ বর্ষাকে মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে চিহ্নিত করে। একইসঙ্গে পুলিশ জানায়, বর্ষার ও মাহির পরিকল্পিতভাবে জোবায়েদকে খুন করে। এবং খুনের পিছনে ত্রিভুজ প্রেম দায়ী ছিলো। তবে পরিবারের এসকল দাবির উত্তরে পুলিশ জানায়, ‘খুনের ঘটনা পানির মতো পরিষ্কার।’
বর্ষা মাহিরের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চাইনি। সে দূরে দূরে থাকত। এজন্য বর্ষাকে মাহির অ্যাসিড মারার হুমকিও দিয়েছিল। এগুলো বর্ষা ওর মাকে জানিয়েছিল আগেই। মাহির ভালো ছিলো না। নেশাগ্রস্ত ছিলো। মহল্লার মধ্যেই নেশা করতো।- বর্ষার বাবা
বর্ষার সঙ্গে মাহিরের প্রেমের সম্পর্কের বিষয়ে বর্ষার বাবা বলেন, ‘আমরা প্রথমে জানতাম না। জানছি দুই বছর পর। যখন জানতে পারি তখন ওদের ভাড়া বাসা থেকে বের করে দিই। তিন চার বছর আগেই ওরা এখান থেকে চলে যায়।’
আদালতে বর্ষার স্বীকারোক্তির বিষয়টি মিথ্যা দাবি করেন তার বাবা। তিনি বলেন, ‘বর্ষা স্বীকারোক্তি দিয়েছে এটা পুরো মিথ্যা কথা। পুলিশ ওর মাইরে স্বীকারোক্তি নিয়েছে। বর্ষা খুনের বিষয়ে কিছুই জানতো না। পুলিশ বর্ষাকে মারধর ও ভয় দেখিয়ে স্বীকারোক্তি নিয়েছে।’
এছাড়া বর্ষার বাবা জোবায়েদের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্কটিও মিথ্যা দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘পুলিশ জানিয়েছে স্যারের (জোবায়েদ) ও বর্ষার তিন মাসের সম্পর্ক ছিলো। স্যার (জোবায়েদ) অনেক ভালো ছিলো। আমরা কখনও তার মধ্যে খারাপ কিছু দেখিনি। তাদের প্রেমের সম্পর্ক ছিলো না। আমি শুক্র-শনিবার বাসায় থাকতাম। কখনও খারাপ কিছু পায়নি স্যারের মধ্যে। ওর মায়ের মুখেই কখনো শুনিনি। বরং এই স্যারের অনেক সুনাম ছিলো। অনেক ভালো ছিলো।’
বর্ষা ও মাহিরের প্রেমের সম্পর্কে বাবা গিয়াসউদ্দিন বলেন, ‘বর্ষা মাহিরের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চাইনি। সে দূরে দূরে থাকতো মাহিরের থেকে। এজন্য বর্ষাকে অনেক হুমকিও দিতো মাহির। মাহির বর্ষাকে অ্যাসিড মারার হুমকিও দিয়েছিল। এগুলো বর্ষা ওর মাকে জানিয়েছিলো আগেই। মাহিরের বিষয়ে বর্ষার বাবা বলেন, মাহির ভালো ছিলো না। নেশাগ্রস্ত ছিলো। মহল্লার মধ্যেই নেশা করতো।’
পুলিশের বলা বক্তব্যে, বর্ষা বাড়ি থেকে গহনা বিক্রি করে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা দিয়ে মাহিরকে বাইক কিনে দিয়েছে। এই বক্তব্যকে তিনি মিথ্যা দাবি করে বলেন, ‘এই ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি। এইটা মিথ্যা কথা। কোন গহনা হারায়নি বাসা থেকে। ওই (বর্ষা) গয়না পাইবো কোথায়? ওতো টাকা পাবে কোথায় ওই? এডি সব মিথ্যা কথা পুলিশের।’
এদিন মাহিরের বিষয়ে বর্ষার মা বলেন, ‘মাহির ছেলেটা একদমই ভালো ছিলো না। আমরাও চাইতাম না কথা বলুক। ছেলের মাও চাইতো না। ছেলের মা নিজেই বর্ষাকে বলতো, মাহির ভালো না। ওর সঙ্গে কথা না বলতে নিষেধ করেছি।’
বর্ষার মা জোবায়েদ খুনের কারণ উল্লেখ করে বলেন, ‘স্যার (জোবায়েদ) যে বর্ষাকে পড়াতেন এটা কোন ভাবেই পছন্দ করতো না মাহির। এটা বর্ষা গ্রেফতার হওয়ার আগে আমাদের জানায়। স্যারযে বাসায় এসে বর্ষাকে পড়াতো এটা মেনে নিতে পারতো না মাহির। এছাড়া বর্ষা মাহিরকে বিভিন্নরকম হুমকি দিতো।’
এসময় তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি চাই স্যারের (জোবায়েদের) হত্যার বিচার হোক। সে ভালো ছেলে ছিলো। আমি কখনো খারাপ কিছু পায়নি। কিন্তু আমার মেয়ে নির্দোষ। ও (বর্ষা) কিছু জানতো না। এসময় তাকে বর্ষা ও জোবায়েদের মধ্যে কোন প্রেমের সম্পর্ক ছিলো কিনা জানতে চাইলে বলেন, এমন কিছু ছিলো না। আমি কখনো দেখিনি। আমার চোখে পড়েনি।’
তবে এই মামলা ও খুনের ঘটনাটা পানির মতো পরিষ্কার বলে জানান মামলাটির তদন্তকর্মকর্তা ও উপ-পরিদর্শক আশরাফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘বর্ষার বাবা মা তো চাইবেই বর্ষাকে নির্দোষ প্রমাণের জন্য। কোন অপরাধই অপরাধ করে স্বীকার করে না যে সে অপরাধী। আর তাকে সেভ করার জন্য তার বাব-মা আত্মীয় স্বজন সবাই বলে যে সে ভালো। বর্ষার বাবা মাও সেই ভূমিকা পালন করছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা তো আসামিদের বক্তব্য উপস্থাপন করেছি। আসামিরা যে বক্তব্য দিয়েছে পুলিশের নিকট, কোর্টের নিকট তাদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতেই বলা হয়েছে। তারা কী পরিকল্পনা করেছিল এটা ওরাই বলেছে পুলিশের কাছে। মামলার তদন্তকর্মকর্তা বলেন, মাহির যে অপরাধী এটা বর্ষার মা কীভাবে জানে? মূলত বর্ষাকে সেভ করার জন্যই তার মা এসব বলেছে।
বর্ষার বাবা মায়ের এসব অভিযোগের বিষয়ে বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামকে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও পাওয়া যায়নি।