Image description

দীর্ঘদিন ধরে বালাইনাশক বা কীটনাশক উৎপাদন ও আমদানিতে শুল্ক সুবিধা দেয়ার দাবি সরকারের কাছে জানিয়ে আসছিল দেশীয় উদ্যোক্তারা তথা বাংলাদেশ এগ্রোকেমিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশন (বিএএমএ)। অবশেষে বালাইনাশক উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানি সহজীকরণ এবং শুল্ক সুবিধা প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর ফলে আমদানির ওপর নির্ভরতা কাটিয়ে এখন থেকে বাংলাদেশেই উৎপাদন হবে সকল ধরনের বালাইনাশক। এতে ওষুধ শিল্পের ন্যায় দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানির দুয়ার উন্মোচিত হবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. সাইফুল ইসলামের স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।   

সমপ্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ‘স্থানীয়ভাবে বালাইনাশক উৎপাদন ও রপ্তানির দ্বার উন্মোচন’ শীর্ষক একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাংলাদেশ এগ্রোকেমিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশনের (বিএএমএ) সভাপতি সহ ১১টা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব এতে সভাপতিত্ব করেন। বালাইনাশক উৎপাদন ও রপ্তানি বিষয়ে ওই সভায় দুটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রথমটি হলো- ওষুধ উৎপাদনের ক্ষেত্রে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর যে প্রক্রিয়ায় উপকরণ ও কাঁচামাল আমদানির অনুমোদন প্রদান, মূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং আমদানি ও উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে, মন্ত্রণালয় তার অধস্তন দপ্তরের মাধ্যমে অনুরূপ ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে পারে। এতে ওষুধের মতো স্থানীয়ভাবে বালাইনাশক বা কীটনাশক উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে উঠবে ও আমদানির বিকল্প শিল্প তৈরি হবে এবং রপ্তানি সম্ভাবনা তৈরি হবে। দ্বিতীয়টি হলো- উক্ত উপকরণ/কাঁচামালের তালিকা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আমদানি সহজীকরণ এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে শুল্ক সুবিধা ইত্যাদির জন্য প্রেরণ করা হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে দেশে কীটনাশকের বাজার সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকার। যার ৫৫% বা ৪ হাজার ১২৫ কোটি টাকার বাজার রয়েছে ৭টি বহুজাতিক কোম্পানির হাতে। আর স্থানীয় আমদানিকারকেরা চাহিদার প্রায় ৪১% বা ৩ হাজার ৭৫ কোটি টাকার কীটনাশক আমদানি করছে। কীটনাশকের বাজারে দেশি উৎপাদনকারীদের হিস্যা মাত্র ৪% বা ৩০০ কোটি টাকার। 

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কীটনাশকের আমদানি পর্যায়ে শুল্কহার মাত্র ৫%। এর বিপরীতে কীটনাশক উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্কহার ৩০ থেকে ৫৮% পর্যন্ত। এ কারণে চাহিদার বড় অংশই আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হচ্ছে। বালাইনাশক মূলত ফসলের ক্ষতিকর উদ্ভিদ বা প্রাণী, যেমন; পোকামাকড়, জীবাণু, আগাছা, ইঁদুর ইত্যাদি দমনে ব্যবহৃত হয়। স্থানীয় উদ্যোক্তারা জানান, ফিনিশড পণ্যের পরিবর্তে যদি কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে অবাধ এবং সহজ করা হয়, তাহলে এসব পণ্যের দাম কমপক্ষে ৩০ ভাগ কমে কৃষকের কাছে পৌঁছানো যাবে। স্থানীয় উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর মধ্যে ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার (এনএসি), অ্যাডভান্সড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ  (এসিআই) ও স্কয়ারসহ মোট ২০টি কোম্পানি উৎপাদনে আছে।

বিএএমএ সভাপতি কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সরকারকে ধন্যবাদ জানতে চাই যে স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরে এসে উৎপাদনকারীদের দাবিগুলো আমলে নিয়েছে। এখন এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর)। এনবিআর ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে প্রযোজনীয় ব্যবস্থা নিলে আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে আর কোনো বালাইনাশক আমদানি করতে হবে না। ওষুধ শিল্পের ন্যায় দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা যাবে। উল্লেখ্য, আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে রপ্তানিমুখী স্থানীয় শিল্পের বিকাশে বালাইনাশক উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক রেয়াত সুবিধা চেয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে চিঠি দেয় বিএএমএ। উৎপাদনের সুযোগ দেয়ার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অবশেষে সরকারের পক্ষ থেকে বালাইনাশক উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানি সহজীকরণ এবং শুল্ক সুবিধা প্রদানের সিদ্ধান্ত নিলো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।