তেইশ বছর পর দেশের মাটিতে পা রাখছেন নব্বইয়ের দশকের আলোচিত ছাত্রনেতা ও বরিশাল-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক অভি। আগামী মাসেই কানাডা থেকে দেশে ফিরবেন বলে তিনি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
আলোচিত মডেল সৈয়দা তানিয়া মাহবুব তিন্নি হত্যাসহ রাজনৈতিক একাধিক মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল অভির ওপর। এ কারণে টানা ২৩ বছর থেকে যান কানাডায়। শুধু তার মা দেশে থাকলেও বসবাস করেন ঢাকায়। এ কারণে উজিরপুরে অভিদের বাড়িটি অনেকটা পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে।
চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি মডেল তিন্নি হত্যা মামলা থেকে খালাস পান অভি। এরপরই তার দেশে ফেরার গুঞ্জন জোরালো হয়। এমনকি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন, কিংবা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথাও শোনা যাচ্ছে।
উজিরপুর উপজেলার ধামুরা এলাকার সন্তান গোলাম ফারুক অভি নব্বইয়ের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। ছিলেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক। তৎকালীন সময় রাজনীতির নানা ঘটনায় আলোচনার কেন্দ্রে থাকা অভি সপ্তম জাতীয় সংসদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য ছিলেন। ১৯৯৬ সালে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জাতীয় পার্টির (জেপি) প্রার্থী হিসেবে বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। সে সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের বর্তমান উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জম হোসেন আলালকে পরাজিত করেছিলেন অভি।
১৯৯৬ সালে অবশ্য উজিরপুর-বাবুগঞ্জ নিয়ে বরিশাল-২ আসন ছিল। পরে বাবুগঞ্জ উপজেলা মুলাদীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে বরিশাল-৩ এবং উজিরপুরের সঙ্গে বানারীপাড়া যুক্ত হয়ে বরিশাল-২ নির্বাচনী এলাকা পুনর্গঠিত হয়। এরপর ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হেরে যান অভি। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ২০০২ সালে দেশ ছাড়েন তিনি।
তার দেশে ফেলার বিষয়ে কানাডায় অবস্থানরত গোলাম ফারুক অভির মোবাইল ফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তার সাড়া মেলেনি। তবে সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, আগামী নভেম্বর মাসেই দেশে ফিরবেন। তবে নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের বিষয়ে কারও সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয়নি বলেও জানান সাবেক এ ছাত্র নেতা।
এদিকে গোলাম ফারুক অভির স্বজন উজিরপুরের ধামুরা এলাকার বাসিন্দা পনির হাওলাদার বলেন, ‘গোলাম ফারুক অভি দেশে ফিরবেন, এটা নিশ্চিত। লোকমুখে শুনতেছি তিনি নির্বাচন করবেন। তবে তিনি নির্বাচন করবেন কি না, সেটা আমাদের জানাননি।’
উজিরপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সেলিম সরদার বলেন, ‘গোলাম ফারুক অভি এ জনপদের একজন জনপ্রিয় ব্যক্তি। তিনি রাজনৈতিক কারণে দীর্ঘ বছর দেশে ফিরতে পারেননি। তিনি বরিশাল-২ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে নির্বাচনের পরিবেশ, হিসাব-নিকাশ পাল্টে যাবে। কেননা এই দুই উপজেলায় ব্যক্তি হিসেবে গোলাম ফারুক অভির যে জনপ্রিয়তা রয়েছে, তা অনেকেরই নেই। এ ক্ষেত্রে দলীয়ভাবে না হোক স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করলেও তার সঙ্গে অনেক প্রার্থী ভোটের মাঠে টিকবে না।’
তবে ৯৬-এর প্রেক্ষাপট আর দেশের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপট এক নয় বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের নেতারা। উজিরপুরের বাসিন্দা বরিশাল দক্ষিণ জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান সুমন বলেন, ‘গত ১৭ বছর বিএনপি নেতাকর্মীরা পতিত আওয়ামী সরকার এবং পুলিশের হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন, জেল খেটেছেন। ঘরে ঘুমাতে পারেননি। আর অভি ভাই বিদেশে রাজকীয় জীবন কাটিয়েছেন। এখন তার ফেরা না ফেরায় কিছু আসে যায় না। আমরা মনে করি, ফ্যাসিস্টের আমলে যিনি জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন, বিএনপি তাকেই মনোনীত করবে। অভি ভাই স্বতন্ত্র নির্বাচন করলে তাতে ভোটের মাঠে যে বড় কোনো প্রভাব পড়তে পারে তেমন সম্ভাবনাও আমরা দেখছি না।’
এরই মধ্যে বরিশাল-২ আসনে প্রার্থী দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)। এ ছাড়া আসনটিতে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে আলোচনায় আছেন দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সরদার সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু, নির্বাহী সদস্য কাজী দুলাল হোসেন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপু, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল। যারা সবাই বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে অসংখ্যবার মামলা, জেল-জুলুম এবং নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী দলের সহ-বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপু বলেন, ‘গোলাম ফারুক অভি উজিরপুরের সন্তান। তিনি আমাদের বড় ভাই। তিনি দেশে ফিরছেন, এজন্য আমরা খুশি। তবে অতীতের মতো যাতে তার চলাফেরা না হয়, মানুষের প্রতি যেন তার ভালোবাসা থাকে, এটাই আমরা কামনা করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘একানব্বাই, ছিয়ানব্বই বা এরশাদের সময় যে ইলেকশন ছিল, সেই মার্কা ইলেকশন চলবে না। জনগণের ভোটে যিনি নির্বাচিত হবেন, তিনিই পার্লামেন্টের নির্বাচিত নেতা হবেন। অভি ভাই দেশের ছেলে, আসবেন। তিনি আসায় দলে কোনো প্রভাব পড়বে না। এ দেশেও কোনো প্রভাব পড়বে না। তার মতো হাজারো নেতা এ দেশে আছেন।’
বরিশাল-২ আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী এবং দলের বরিশাল জেলার সিনিয়র নায়েবে আমির আব্দুল মান্নান বলেন, ‘যেই নির্বাচন করুক না কেন, আমাদের নির্বাচনে কোনো প্রভাব পড়বে না। কারণ আমরা অত্যন্ত সুসংগঠিত এবং সুশৃঙ্খল একটি দল। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী যেই হোক না কেন, সেটা আমাদের দেখার বিষয় না।’