Image description

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালকের (ডিজি) পদে বসতে চান ৬৩ জন শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা। 
মর্যাদাপূর্ণ মাউশি ডিজি’র পদে আবেদন গ্রহণ শেষ হয়েছে। আবেদন যাচাইয়ের জন্য গঠন করা হয়েছে সার্চ কমিটি। যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন খোদ শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সি আর আবরার। এরপর শর্টলিস্ট যাবে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে। মর্যাদাপূর্ণ এই চেয়ারটিতে বসতে চাইছেন বিতর্কিতরাও। তবে মন্ত্রণালয় চাইছে যোগ্য ব্যক্তিকেই ডিজি’র পদটি দিতে। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, আবেদন আসা ৬৩ কর্মকর্তার আবেদন যাচাই করছে সার্চ কমিটি। বিশেষত তাদের একাডেমিক এবং প্রশাসনিক দক্ষতাকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। চোখ রাখা হচ্ছে রাজনৈতিক পরিচয়ের বিষয়টিতেও। গত ৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে পদটিতে তিনবার পরিবর্তন এসেছে। সর্বশেষ গত ৭ই অক্টোবর মাউশি’র ডিজি নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি দেয় সরকার। এরপর ১৪ই অক্টোবর ডিজি’র পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয় অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ খানকে। ডিজি পদে আবেদন করা অনেকেরই বিরুদ্ধে রয়েছে দুর্নীতির অভিযোগ। এমনকি নিয়মিত মন্ত্রণালয়ে আসছে বিভিন্ন মহলের সুপারিশ। শুধু তাই নয়, মন্ত্রণালয়ের একটি গ্রুপ নিজেদের পছন্দসই লোক বসাতেও তৎপর রয়েছেন।

মাউশি’র মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন বিভাগের পরিচালক কাজী আবু কাইয়ুমের (শিশির) বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। তার বিরুদ্ধে বিধি-বহির্ভূত, বেআইনি ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে তদন্ত পরিচালনা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে রয়েছে অনৈতিকভাবে এমপিওভুক্তি, কর্মস্থলে মাসের পর অনুপস্থিত থাকা, গত বছর ২২শে নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) পরিচালক অধ্যাপক কাজী মো. আবু কাইয়ুমকে তিন মাসের ব্যবধানে বদলি করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরে তাকে ময়মনসিংহের একটি কলেজে বদলি করা হয়। এছাড়াও কোটি টাকা ঘুষের মাধ্যমে এনসিটিবি’র চেয়ারম্যান পদ লাভের চেষ্টা করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। 

মাউশি’র আরও দুই কর্মকর্তা পরিকল্পনা ও উন্নয়ন উইংয়ের পরিচালক ড. একিউএম শফিউল আজম এবং প্রশিক্ষণ শাখার পরিচালক মো. সাঈদুর রহমান। এ দু’জন আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী বলে উল্লেখ করেন মাউশি’র একাধিক কর্মকর্তা। জানা যায়, এছাড়াও আবেদন জমা পড়া এক মাউশি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। আরেক কর্মকর্তা ছিলেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির অনৈতিক আদেশ বাস্তবায়নকারী ঘনিষ্ঠজন। 

শুধু তাই নয়, ডিজি হতে চান বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষরাও। তালিকায় রয়েছেন- ঢাকার স্বনামধন্য অধ্যক্ষদের পাশাপাশি ঢাকার বাইরের অধ্যক্ষরাও। মাউশি সূত্রে জানা যায়, ৫ই আগস্টের আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে মিছিল করা অন্তত ৫ থেকে ৬ জন ডিজি পদের জন্য আবেদন করেছেন। এছাড়াও তাদের বাইরে ৭ থেকে ৮ জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। আবার অনেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ না থাকলেও আওয়ামী আমলে ভিন্ন দলের রাজনীতি করার কারণে সুবিধাবঞ্চিত ছিলেন। মাউশি’র কর্মকর্তারা বলেন, রাজনীতির ঊর্ধ্বে এই পদটিতে নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন। তাদের ভয়, রাজনীতি করা ব্যক্তিরা পদে আসলে দলীয়করণের কারণে উন্নতি বাধাগ্রস্ত হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সার্চ কমিটির সদস্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মো. মজিবর রহমান বলেন, আমরা যোগ্য ব্যক্তিকেই নিয়োগের সুপারিশ করতে চাই। এরজন্য সূক্ষ্মভাবে আবেদন বিশ্লেষণ করছি।