Image description

জাতীয় নির্বাচনের আর মাত্র চার মাসের মতো সময় আছে। ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণার কথা। কিন্তু এখনো প্রাক-নির্বাচনী কাজ পরিকল্পনা অনুযায়ী শেষ করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিশেষ করে দল নিবন্ধন, আইন সংশোধনসহ নানা জটিলতা জট বেঁধে আছে। এসব জট অতি দ্রুত না সরালে নির্বাচন আয়োজন চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অবশ্য ইসি বলছে- এক্ষেত্রে কোনো জটিলতাই সৃষ্টি হবে না। গত ২৮শে আগস্ট ঘোষিত রোডম্যাপ  অনুযায়ী সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে শুরু হয়ে এক-দেড় মাসের মধ্যে অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ, ৩০শে সেপ্টেম্বরের মধ্যে নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২ (আরপিও)’ সংশোধন এবং রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের জন্য নতুন আচরণ বিধিমালা প্রণয়নের কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অক্টোবরের মাঝামাঝিতেও এসব কাজ সম্পন্ন হয়নি। ২৩শে অক্টোবরের মধ্যে দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন দেয়ার কথা ইসি’র। কিন্তু এ কাজেও বিলম্ব হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

সংলাপের রোডম্যাপ অনুযায়ী, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সুধীসমাজ, নারীসমাজের প্রতিনিধি, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সম্পাদক, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রতিনিধি, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও আহত জুলাই যোদ্ধাদের সঙ্গে সংলাপ হওয়ার কথা। এর মধ্যে গত ২৮শে সেপ্টেম্বর, ৬ ও ৭ই অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সুধীসমাজ, নারীসমাজের প্রতিনিধি, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সম্পাদক, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব এবং নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সংলাপে বসে ইসি। এরপর সংলাপে বিরতি আসে।

শেষ হলো না দল নিবন্ধন কাজ
নির্বাচন কমিশনের কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, গত ৩০শে সেপ্টেম্বর নিবন্ধনের জন্য যোগ্য দলগুলোকে নিবন্ধন দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু ১৯শে অক্টোবর পর্যন্ত নিবন্ধনের যোগ্য দলগুলোর বিষয় কারও কোনো আপত্তি আছে কিনা জানতে চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে পারেনি ইসি, যা গত ১৪ই সেপ্টেম্বরই প্রকাশ করার কথা ছিল।

ইসি’র কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিবন্ধনযোগ্য দুটি দলের মধ্যে এনসিপি’র চাওয়া শাপলা প্রতীক নিয়ে জটিলতার অবসান হয়নি। এ ছাড়া ১২টি দলের তদন্ত সম্পূর্ণ করে নিবন্ধনযোগ্য সবগুলো দল নিয়ে একসঙ্গে বিজ্ঞপ্তি জারি করতে চায় ইসি। ১২টি  দলের পুনঃতদন্তের জন্য ১৭টি কমিটি করেছে ইসি। এই তদন্ত কার্যক্রম ৭ই সেপ্টেম্বরই শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে মাঠ ও সচিবালয় পর্যায়ে দলগুলোর তথ্য যাচাই-বাছাইয়ে কিছুটা জটিলতার কারণে সময় পিছিয়ে গেছে।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ সমপ্রতি বলেন, আমরা ১২টি দলের বিষয়ে অতিরিক্ত তথ্য অনুসন্ধানের জন্য মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তাদের নিয়োজিত করেছি। আমরা আশা করছি, আগামী সপ্তাহে এটার একটা সমাধানে আসতে পারবো। এ ক্ষেত্রে দাবি-আপত্তি চেয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়া হবে। তখন কোনো দাবি আপত্তি এলে শুনানি করে তা নিষ্পত্তি করা হবে। আর দাবি আপত্তি না থাকলে সংশ্লিষ্ট দলগুলোকে দেয়া হবে নিবন্ধন সনদ।

পেছাতে পারে দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধনও 
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য প্রাথমিকভাবে নিবন্ধন পাওয়া ৭৩টি পর্যবেক্ষক সংস্থার নাম গত ২৮শে সেপ্টেম্বর প্রকাশ করে ইসি। রোডম্যাপ অনুসারে এটি ২৫শে সেপ্টেম্বর প্রকাশ করার কথা ছিল। এদিকে প্রকাশ করা ৭৩টি পর্যবেক্ষক সংস্থার বেশির ভাগেরই সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে এসব সংস্থা নিয়ে পুনরায় যাচাই-বাছাইয়ে নেমেছে ইসি।

যা বলছেন ইসি সচিব
নির্বাচনী কর্ম পরিকল্পনায় ধীরগতির কারণে নির্বাচন আয়োজনে কোনো প্রভাব পড়বে কিনা জানতে চাইলে ইসি’র সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ মানবজমিনকে বলেন, কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা কাজ শেষ করতে পারিনি। এটা সত্য। তবে নির্বাচন আয়োজনে কোনো জটিলতা তৈরি হবে না। যে কাজগুলো বাকি রয়েছে সেগুলোর জন্য একটা টাইমলাইন দেয়া ছিল। কিন্তু আমরা এখন আর কোনো টাইমলাইনের কথা বলতে চাচ্ছি না। বলতে পারি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শেষ করবো। এ নিয়ে কমিশন কাজ করছে।