কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের এক ছাত্রী তার সহপাঠীর হাতে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর এ ঘটনা ঘটলেও দীর্ঘ আট মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অভিযুক্ত ছাত্র সুলতান আহমেদ শান্ত (২৪) একই বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার নীলগঞ্জ চন্দ্রাবতীর বাড়ির কাছে মাইজখাপন গ্রামে।
ভুক্তভোগী ছাত্রী জানান, প্রায় দুই বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুবাদে সুলতানের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। কয়েক মাস আগে পড়াশোনার সুবিধার জন্য সুলতান তার কাছ থেকে কিছু নোট খাতা ও ব্যবহৃত একটি থিংকপ্যাড ল্যাপটপ নেয়। পরে ল্যাপটপ ফেরত চাইলে সুলতান জানায়, সে অসুস্থ, তাই তার ছাত্রমেসে গিয়ে ল্যাপটপ ও খাতাগুলো নিয়ে যেতে।
ছাত্রী বলেন, ‘সরল বিশ্বাসে আমি গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কিশোরগঞ্জ থানার হারুয়া ফিসারী লিংক রোড এলাকার তার মেসে যাই। সেখানে গিয়ে ল্যাপটপ ফেরত চাইলে সে কৌশলে আমাকে বেডরুমে নিয়ে যায় এবং দরজা বন্ধ করে দেয়। পরে আমাকে জোর করে বিছানায় ফেলে মুখ চেপে ধরে ধর্ষণ করে। প্রাণপণ চেষ্টা করেও আমি নিজেকে রক্ষা করতে পারিনি।’
ধর্ষণের পর কান্নাকাটি করলে সুলতান তাকে ল্যাপটপ ফেরত দেয় এবং কাউকে না বলার জন্য ভয় দেখায়। ভুক্তভোগী বলেন, ‘সে আমাকে কিশোরগঞ্জে পড়াশোনা করতে দেবে না এবং প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।’
ঘটনার পর মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লেও প্রথমে ভয় পেয়ে বিষয়টি গোপন রাখেন ছাত্রীটি। পরে সুলতানের পরিবারকে জানালে তার মা দেখা করতে এসে ভুক্তভোগীকে পুরাতন মেডিল্যাব হাসপাতালে নিয়ে যান এবং স্ত্রী ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নাসিমাতুল জান্নাত মিতুলের কাছে ‘পুত্রবধূ’ পরিচয়ে চিকিৎসা করান বলে জানান ভুক্তভোগী ছাত্রী।
এরপর ভুক্তভোগী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। তিনি বলেন, ‘সুলতানের মা ও মামা আমাকে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে সময়ক্ষেপণ করেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কোনো সুরাহা না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত পরিবারকে জানিয়ে থানায় মামলা করি।’ মামলায় দুই মাস কারাভোগের পর জামিনে বের হয়ে আসামি শান্ত আবারও তাকে হত্যার হুমকি দেন বলে অভিযোগ করেন ছাত্রীটি।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি সুলতানের দ্বারা ধর্ষণ ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছি। ধর্ষণের পর সে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, কিন্তু তা রাখেনি। উল্টো আমাকে আবারও শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করতে চায় এবং ব্ল্যাকমেইল করে। আমার মোবাইল ফোন চুরি করে প্রমাণ নষ্টের চেষ্টা করে। আমি প্রতিবাদ করলে হুমকি দেয়, আমি বিষয়টি প্রকাশ করলে সে আত্মহত্যা করবে এবং আমাকে দায়ী করবে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. দিলীপ কুমার বড়ুয়া দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পরই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তদন্তে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়। আমাদের কাছে অভিযোগ আসার সঙ্গে সঙ্গেই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। যেহেতু আমরা একটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়, তাই আইন প্রণয়নসহ কিছু প্রশাসনিক জটিলতার কারণে তদন্ত সম্পন্ন হতে সাত থেকে আট মাস সময় লেগেছে।’
তিনি আরও জানান, ‘ইতোমধ্যে তদন্তসহ সব প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। আমরা আশা করছি, আগামী এক মাসের মধ্যেই এ ঘটনার বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারবো।’
অভিযুক্ত ছাত্র সুলতান আহমেদ শান্তের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে রাজি নন বলে ফোন কেটে দেন।