
ডেমরার বাসিন্দা মো. দীন ইসলাম (৬৫)। ২০১০ সালে সাড়ে ৭ শতাংশ জমি কেনেন শরাফত আলীর কাছ থেকে। কিছুদিন ভোগদখল করার পর ২০১১ সালে জানতে পারেন জমির কিছু অংশ ভুলে শরাফত আলীর নামে রেকর্ড হয়েছে। তিনি আইনজীবীর শরণাপন্ন হয়ে ঢাকা ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে ২০১২ সালে রেকর্ড সংশোধনের মামলা করেন (নম্বর ২০৫/১২)।
মামলাটি ফাইলিং করার পর আদালত কয়েক দফা বিবাদী পক্ষকে তলব করে সমন জারি করেন। তবে দীর্ঘ ১৩ বছরেও মামলাটিতে সমন জারি হয়ে না আসায় বিচারকাজ শুরু করতে পারেননি আদালত।
আদাবরের বাসিন্দা মোহাম্মদ আলম (৭৮) দীর্ঘদিন সৌদি আরবে থাকার পর দেশে এসে মোহাম্মদপুরে ১৯৯৪ সালে ৮ শতাংশ জমি কেনেন। ওই সময় থেকেই তিনি নিজের নামে নামজারি করে খাজনা-ট্যাক্স পরিশোধ করে আসছেন। কিন্তু ২০১৭ সালে খাজনা পরিশোধ করতে গেলে জানতে পারেন সিটি জরিপে ভূমি জরিপ কর্মকর্তাদের অসাবধানতাবশত নকশায় তাঁর দাগ অন্তর্ভুক্ত হয়নি। তিনি ২০১৭ সালে ঢাকার দ্বিতীয় যুগ্ম জজ আদালতে ঘোষণামূলক মামলা করেন (নম্বর ৯৩/২০১৭)। মোহাম্মদ আলমের আইনজীবী মো. শাহিনুর রহমান বলেন, মামলাটিতে দীর্ঘ আট বছরে সমন জারি হয়ে না আসায় বিচারকাজ শুরু করা যায়নি। কয়েকদিন আগে বৃদ্ধা মারা গেছেন। আদালতে নেজারত শাখা ও আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে দেওয়ানি আদালতগুলোয় হাজার হাজার মামলা ঝুলে আছে সমন জারি না হয়ে আসার কারণে। বছরের পর বছর পার হলেও সমন জারি হয় না হওয়ায় বিচার শুরু হচ্ছে না। আইনজীবীরা জানান, দ্রুত সমন জারি করাতে জারিকারক ও স্টাফরা মোটা অঙ্কের অর্থ দাবি করে থাকেন। এটা সর্বনিম্ন ৩ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকাও হয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে চাহিদা আরও বেশি হয়ে থাকে। তবে সমন জারি করতে তদবির না করলে বছরের পর বছর আটকে থাকে। এ ছাড়া মামলায় অনেক সময় নেজারত শাখা থেকে সমন হারিয়ে যাওয়া, বিবাদী ঠিকানায় না পাওয়া, সমন জারিকারকের কাছে তদবির না করায় জারি হয়ে আসতে বছরের পর বছর লেগে যায়। তবে যেসব মামলায় তদবির করে সমন জারি করতে বাড়তি টাকা দেওয়া হয় ওসব মামলায় ঠিকই দ্রুত সমন জারি হয়ে আসে।
এ বিষয়ে দেওয়ানি মামলার আইনজীবী আবুল হাসনাত বলেন, ‘সমন জারিতে পদ্ধতিগতভাবেই সরকার জটিলতা করে রেখেছে। এখনো সমন তলবানা ফি মাত্র ১০ টাকা। এতে কী হয়। সাভার-আশুলিয়া থেকে সমন জারি করে আসতে জারিকারকের সারা দিন চলে যাবে। জারিকারক বাদীর থেকে বাড়তি খরচ না পেলে সেখানে যাবে না। এটা সরকারও জানে। এসব পুরোনো পদ্ধতি পরিবর্তন করা দরকার।’
এ বিষয়ে গভর্নমেন্ট প্লিডার (জিপি) অ্যাডভোকেট মো. আবুল খায়ের বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এটা সত্য সিভিল মামলায় সমন জারিতে অনেক জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতার কারণে বিচার শুরু হতে দেরি হয়। এ ক্ষেত্রে সরকার বিবাদী মামলায় সমন ডিসি অফিস হয়ে প্রক্রিয়া অনুসরণ করে যদি সরাসরি জিপি অফিসে আসে তাহলে আমরা স্টেপ নিয়ে লিখিত জবাব দিলে দ্রুত বিচার শুরু হতে পারে। আর পাবলিক সমনের ক্ষেত্রে জারিকারকদের অভাব ও দায়িত্বে অবহেলা রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে বিবাদীর ঠিকানা দূরে হলে তারা যেতে চান না। এজন্য জারিকারকদের প্রতি আদালতের জরুরি তাগাদা দেওয়া প্রয়োজন।’