আওয়ামী লীগের নৌকা আর বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে দুবার এমপি হন সুলতান মো. মনসুর আহমদ। সাবেক এই ডাকসু ভিপি কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে সাধারণ বন্দির মতো ছোট্ট সেলের মেঝেতে তোশক পেতে ঘুমান। সাধারণ কয়েদির বরাদ্দ খাবার দেওয়া হয় তাকে।শেখ হাসিনার গুম-খুন ও নানান অপকর্মের সঙ্গী মেজর জেনারেল (বরখাস্ত) জিয়াউল আহসান ডিভিশন সুবিধায় আয়েশি জীবন কাটাচ্ছেন কারাগারে। তার জন্য আছে আলাদা সেলে খাট-তোশক, টেবিল-চেয়ার, প্রয়োজনীয় সামগ্রী, পত্রিকা-বাই এবং সার্বক্ষণিক দেখভালের জন্য একজন কয়েদি। তুলনামূলক ভালো খাবার খান তিনি।
ঢাকাটাইমস বিভিন্ন কারাগার সূত্রে জানতে পেরেছে, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গ্রেপ্তার হওয়া প্রভাবশালী মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, এমপি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের মধ্যে ১০৬ জন পেয়েছেন ডিভিশন সুবিধা। তাদের মধ্যে ৪২ জন সরকারি কর্মকর্তা, ২৯ জন সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী, ২২ জন এমপি এবং অন্যান্য ১৩ জন। আর ডিভিশন পাননি ২৬ জন।
সাবেক মন্ত্রীদের মধ্যে রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু,, টিপু মুন্সি, শাহজাহান খান, নুরুল ইসলাম সুজন, আসাদুজ্জামান নূর, ফরহাদ হোসেন, নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, সাধন চন্দ্র মজুমদার, আবুল কালাম আজাদ, মুহাম্মদ ফারুক খান প্রমুখ ডিভিশন সুবিধায় কারাগারে আছেন।এই দলে আরও আছেন শেখ হাসিনার বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী; সাবেক প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, সাবেক উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, উপমন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।
সচিবদের মধ্যে ডিভিশন পেয়েছেন সাবেক মুখ্য সচিব কামাল আবুল নাসের চৌধুরী, সাবেক সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান, সাবেক সিনিয়র সচিব শাহ কামাল, সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক সচিব মেজবাহ উদ্দীন, সাবেক সচিব জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া।এ ছাড়া মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান, রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের দিলীপ কুমার আগারওয়াল, সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাসান চৌধুরী ডিভিশন পেয়েছেন কারাগারে।
কারাবন্দি সাবেক এমপিদের অনেকে এখনো ডিভিশন সুবিধা পাননি। তাদের মধ্যে অন্যতম বরিশাল-৩ আসনের গোলাম কিবরিয়া টিপু, চট্টগ্রাম–১৫ আসনের আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী, নরসিংদী-২ আসনের কামরুল আশরাফ খান পোটন, কুষ্টিয়া-৪ আসনের আব্দুর রউফ, বগুড়া–৬ (সদর) আসনের রাগেবুল আহসান রিপু, ঢাকা-৭ আসনের হাজী মোহাম্মদ সেলিম, তার ছেলে ঢাকা-৭ আসনের সোলায়মান সেলিম, ফরিদপুর-৫ আসনের কাজী জাফর উল্যাহ, নেত্রকোনা-৫ আসনের আহমদ হোসেন।
আরও আছেন বরিশাল-২ আসনের শাহে আলম তালুকদার, ঢাকা-১৩ আসনের সাদেক খান, কুষ্টিয়া-৪ আসনের সেলিম আলতাফ জর্জ, সংরক্ষিত মহিলা আসনের ইঞ্জিনিয়ার মাসুদা সিদ্দিক রোজী, গাইবান্ধা-২ সদর আসনের মাহবুব আরা বেগম গিনি, কক্সবাজার-৪ আসনের আবদুর রহমান বদি, মৌলভীবাজার-২ আসনের সুলতান মো. মনসুর আহমদ, ভোলা-২ আসনের আলী আজম মুকুল, চট্টগ্রাম-৬ এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১১ আসনের এম এ লতিফ, সিরাজগঞ্জ-২ আসনের জান্নাত আরা হেনরী, খুলনা-৬ আসনের রশীদুজ্জামান মোড়ল।
এ ছাড়া চুয়াডাঙ্গার জীবননগর পৌরসভার সাবেক মেয়র রফিকুল ইসলাম ও রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলামও ডিভিশন পাননি।
তাদের অনেকে ডিভিশন সুবিধা চেয়ে আবেদন করেছেন এবং সেগুলো অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানায় কারা কর্তৃপক্ষ।
কারাবিধি অনুযায়ী সাবেক এমপি, মন্ত্রী, সিআইপি ও ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা পেয়ে থাকেন ডিভিশন সুবিধা। এছাড়া আদালতের নির্দেশেও কেউ কেউ ডিভিশন পান। তবে ডিভিশন পাওয়ার জন্য নিজের সামাজিক অবস্থান তুলে ধরে আবেদন করতে হয় বন্দিকে।
কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন জানান, নিয়ম অনুযায়ী সরকারি গেজেটেড অফিসাররা কারাগারে এলে ডিভিশন পান। বাকি যারা বিশিষ্ট ব্যক্তি বা সাবেক এমপি-মন্ত্রী তারা আবেদন করলে অথবা এ বিষয়ে আদালতের নির্দেশনামতো ব্যবস্থা করা হয়।
যাদের বিষয়ে আদালতের কোনো নির্দেশানা থাকে না তাদের ডিভিশন পাওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে কারা মহাপরিদর্শক বলেন, ‘তারা আবেদন করলে সেটি জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়। তিনি অনুমতি দিলে তাদের ডিভিশন সুবিধা দেওয়া হয়।’
এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে ডিভিশনহীন বন্দি কক্সাবাজারের সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি। একজন কারা কর্মকর্তা ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘তিনি (বদি) কক্সবাজার থেকে ডিভিশনের অর্ডার নিয়ে এসেছিলেন। তবে সেটাতে ত্রুটি ছিল। এখন তার আইনজীবী গাজীপুর জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছেন। অনুমতি মিললে তাকে ডিভিশন সুবিধা দেওয়া হবে।’
এই কর্মকর্তা আরও জানান, কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে বন্দি আরও দুজন সাবেক এমপি- সুলতান মো. মনসুর আহমদ ও আলী আজম মুকুল ডিভিশন সুবিধা চেয়ে আবেদন করেছেন।
কারা সূত্র জানান, সাধারণ বন্দিদের খাবারের তুলনায় ডিভিশন পাওয়া বন্দিদের খাবারের মান ভালো থাকে। তাদের আলাদা রুম বা সেলে রাখা হয়। সেখানে থাকে খাট, ভালো বিছানা, বালিশ, টেবিল-চেয়ার, তেল, চিরুনি, আয়নাসহ কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস। ডিভিশন বন্দির প্রয়োজনীয় কাজ করে দেওয়ার জন্য থাকে একজন করে সহকারী। তাছাড়া কারাগারের বাইরে থেকে স্বজনদের পাঠানো খাবার যাচাই-বাছাই করে তাদের খেতে দেওয়া হয়। তাদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে বইপত্র, দু-তিনটি দৈনিক পত্রিকা পান ডিভিশন বন্দিরা।
(ঢাকাটাইমস