
ঢাকা হাজারো সমস্যায় জর্জরিত শহর। এছাড়া দিন দিন ঘটছে নগরীর পরিবেশের বিপর্যয়। এই নগরীতে বাস করা কষ্টের যেন শেষ নেই। বিশ্বের বসবাস অযোগ্য শহরের তালিকায় ঢাকার নাম। রাজধানীর যেখানে সেখানে আবর্জনার স্তূপ। সড়কগুলোর পাশেই গৃহস্থালী ময়লা ফেলে রাখা হয়। যেখানে ডাস্টবিন নেই এমন স্থানেও ময়লা ফেলা হচ্ছে। ময়লা-আবর্জনা সড়কে বা ফুটপাথে ফেলা হচ্ছে। রাজধানীর হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের আবস্থা এখন করুণ। ময়লা আবর্জনার কারণে লোকজন এই পথে চলাচল করতে পারে না। মতিঝিল, মিরপুর, ধানমন্ডি, মুগদা-মান্ডাসহ বিভিন্ন এলাকায় রাস্তায় ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকতে দেখা যায়। ধোলাইখাল, ফকিরাপুল, যাত্রাবাড়ী, খিলগাঁও, জুরাইন, মালিবাগ, মৌচাক, মগবাজার ও তেজগাঁও এলাকায় এমন অবস্থা দেখা যায়।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার রাস্তায় ময়লার স্তূপে নগরবাসীর ভোগান্তি। ঠিকমতো ময়লা না নেয়ার কারণে এমন অবস্থা হয়েছে বলে বলছেন স্থানীয়রা। রাস্তার পাশে অনেক এলাকায় স্তুপ আকারে ফেলা হচ্ছে গৃহস্থালী ময়লা-অবর্জনা। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার সড়কগুলো যেন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হচ্ছে। এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, অনেক এলাকায় নিজেরাই ময়লা রাস্তার পাশে ফেলে রাখছেন। এতে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। রাস্তার উপর ময়লা রাখার কারণে সড়কের পাশে ময়লার ভাগাড় সৃষ্টি হয়েছে। ময়লার দুর্ঘন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বড় সমস্যা প্রধান সড়কের উপর ময়লার ভাগাড়। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপেরেশনের এই ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে ১০০ গজের মধ্যেই ময়লার ডাম্পিং থাকার কারণে নানা ধরনের কথা বলছেন এই এলাকার মানুষ। সরকারি কলোনীর প্রধান সড়কে এমন ময়লার স্তুপ থাকার ভোগান্তি বাড়ছে এই এলাকার মানুষের। ময়লা-আবর্জনা গুরুত্বপূর্ণ এই স্থানে ফেলার কারণে এমন স্তুপ হয়েছে। দুর্গন্ধে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। আবর্জনার স্তুপ সরাতে কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। এত দুর্গন্ধ, বলার বাইরে। দ্রুত এ স্থান থেকে বর্জ্যরে ভাগার অপসারণের দাবি জানান স্থানীয়রা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৯ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার গৃহস্থালী ময়লা রাখা হয় এজিবি কলোনী এলাকার প্রধান সড়কে। দুই ওয়ার্ডের ময়লা এখানে রাখার কারণে প্রতিদিনই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এই পথে চলাচলকারী লোকজনকে। সকাল বেলা বাসা-বাড়ি থেকে ভ্যানগাড়ি করে ময়লা আনার পর এই রাস্তার ডাম্পিং স্টেশনে রাখা হয়। সেই ময়লা ডাম্পিং স্টেশনের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা হচ্ছে। এমন পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পুরো সময় ঢাকা শহরকে যেন আরও বেশি অপরিচ্ছন্ন ও বসবাস অনুপযোগী করে তুলছে। সেখানে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকার ময়লা ভ্যানে করে জমা করা হয়। এসব ভ্যান থেকে উপচে পড়ছে ময়লা, ময়লা থেকে চুইয়ে পড়ছে দুর্গন্ধময় পানি।
একটু বৃষ্টি হলেই রাজধানীর পানিবদ্ধতা দেখা দেয়। ভারি বৃষ্টি হলে রাজধানীবাসীকে বেশি সময় ধরে ভোগান্তি পোহাতে হয়। বৃষ্টি হলে পানি দ্রুত সরে যাবে ড্রেন হয়ে নালা-নর্দমা দিয়ে খাল ও নদীতে। কিন্তু সেটি হচ্ছে না। ফলে পানিবদ্ধতার দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে রাজধানীবাসীকে। অপর্যাপ্ত নালা-নর্দমাও বন্ধ আবর্জনায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতির প্রধান কারণ দ্রুত খাল ও নদীতে পানি সরে যেতে যে পরিমাণ নালা-নর্দমার প্রয়োজন তা না থাকা। ফলে বৃষ্টির পানি দ্রুত সরিয়ে নেয়া যাচ্ছে না।
রাজধানীতে প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেকেরও কম নালা-নর্দমা রয়েছে। এসব নালা-নর্দমার বেশির ভাগ আবার রাজধানীবাসীর অসচেতনতায় বন্ধ থাকে। ড্রেনে পানি প্রবেশ করতে পারলেও সেখানে বাসিন্দাদের ফেলা হয় গৃহস্থালী ময়লা-আবর্জনা, পলিথিন, বালু ও কংক্রিট, বাসাবাড়ির ছোট-বড় বর্জ্য। এসব ময়লা-আবর্জনার বেশির ভাগ ভাসমান। বৃষ্টির পানির ¯্রােতে পানি অপসারণের বিভিন্ন স্থানে এসব ময়লা-আবর্জনা গিয়ে আটকা পড়ে।
ঢাকার দক্ষিণ এবং পশ্চিম পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বুড়িগঙ্গা নদী প্রতিনিয়ত দখল ও দূষণে তিলে-তিলে ধ্বংস হচ্ছে। পলিথিন, বর্জ্য, পুরাতন জাহাজের পোড়া তেল একে বিষে জর্জরিত করে ফেলেছে। ঢাকা ও এর আশেপাশের এলাকার শিল্প বর্জ্য, কাঁচামাল বর্জ্য, পয়ঃনিষ্কাশন লাইন, ইটভাটা, নদী দখলসহ বিভিন্ন অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মে নদীটি অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে বলে মনে করেন নদী বিশেষজ্ঞরা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, রাস্তার পাশে থাকা ড্রেনগুলো প্লাস্টিকের বর্জ্যে ভরে যায়। নিয়মিত পরিষ্কার করেও এ থেকে রক্ষা মিলছে না। বৃষ্টির পানি দ্রুত সরে যেতে রাজধানীতে যেসব ড্রেন রয়েছে সেগুলো বাসিন্দাদের ফেলা প্লাস্টিক বর্জ্য, পাথর, বালুসহ অন্য ময়লায় বন্ধ হয়ে যায়। নগরবাসী অভ্যাসগত কারণে যত্রতত্র পলিথিন ও প্লাস্টিকজাতীয় বর্জ্য ফেলছে।
নগর পরিকল্পনাবিদ প্রফেসর আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ডাস্টবিন শহরে বসালেও সেগুলো সঠিক তদারকি ও মানুষকে কীভাবে সংযুক্ত করা যায় সেটি ব্যবস্থা না করায় সেগুলোর সুফল মেলেনি। সিটি করপোরেশনের উচিত এলাকাভিত্তিক ডাস্টবিনের ব্যবস্থা করা। ঢাকা শহরের বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জায়গাও নেই। বৃষ্টির পানি কোন পথ দিয়ে নদীতে নামবে, সেদিকেও নজর দিতে হবে। রাজধানীবাসীকে সচেতন হতে হবে। যত্রতত্র ময়লা ফেলা বন্ধ করতে হবে।