
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে নতুন এক ইতিহাস রচনা করেছেন সালাউদ্দিন আম্মার। জেনারেল সেক্রেটারি (জিএস) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি শিবির প্যানেলের প্রার্থীকে বিপুল ব্যবধানে পরাজিত করেন, যা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্ররাজনীতিতে এক বড় চমক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
আম্মার পেয়েছেন ১১,৪৯৭টি ভোট, যেখানে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ফজলে রাব্বি মো. ফাহিম রেজা পেয়েছেন মাত্র ৫,৭২৭টি ভোট। তবে এই উত্থান হঠাৎ করে আসেনি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় থেকেই সালাউদ্দিন আম্মার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচিত মুখ। বিশেষ করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে তার নেতৃত্বগুণ এবং ‘স্লোগান মাস্টার’ হিসেবে পাওয়া খ্যাতি তাকে এক বিশেষ মর্যাদায় পৌঁছে দেয়।
সে কারণে নানা ঝক্কিও পোহাতে হয়েছে তাকে। এতটাই যে, তার মাথার দামও ধরা হয়েছিল ১০ কোটি টাকা। ৫ আগস্ট লং মার্চের ঠিক আগে এমনটা জানতে পেরেছিলেন তিনি। গণমাধ্যমে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানান আম্মার। তার কথা, ‘লংমার্চের আগের দিন একটা কল আসলো। ফোনের ওপাশ থেকে বলল, ‘সালাউদ্দিন, তোমার মাথার দাম ১০ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। যেকোনো মূল্যে স্নাইপার দিয়ে তোমাকে শুট করা হবে। তুমি সামনের রিকশায় যেও না।’
কেন এমন হয়েছিল? কারণ রাবির ছাত্র আন্দোলনে বড় ভূমিকা রাখছিলেন তিনি। সে কারণে তার পরিবারকেও বেশ নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছিল। আম্মার বলেন, ‘আম্মু-আব্বুকে ৭ দিন ধরে বাসার ভেতরে আটকে রেখেছিল স্থানীয় প্রশাসন। তাদের বাইরে বের হতে দেয়া হয়নি। ৫ আগস্টে আমাদের এলাকার সেই চেয়ারম্যানকে সবাই মিলে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে (আল্লাহ তাকে মাফ করে দিন)। আমার আব্বু ব্রেনস্ট্রোকের রোগী। তিনি তখন মানসিকভাবে খুব খারাপ অবস্থায় ছিলেন। বাসার চাল-ডাল পর্যন্ত শেষ হয়ে গিয়েছিল।’
‘চেয়ারম্যান আম্মুকে বারবার বলছিলো—‘আগে তোমাদের ছেলেকে এনে দাও। আগে ছেলেরে ফোন দাও!’ আব্বু একেবারে অসহায়, সহজ-সরল মানুষ। তাকে ঘরে আটকে রাখা হয়েছিল, মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। তখন আম্মুও কঠোর হয়ে গিয়েছিলেন। যখন স্বামীকে নির্যাতন করা হচ্ছে, তখন তিনি যেন একেবারে পাথর হয়ে যান। তিনি বলেন— ঠিক আছে, তোমাকে আমি আল্লাহর হাতে ছেড়ে দিলাম। আল্লাহ যদি চান, তোমাকে শহীদ হিসেবে কবুল করবেন।’
সে আন্দোলনের পরও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। নানা সময়ে নানা বিষয় নিয়ে সরব ছিলেন তিনি। রাবি সংস্কার আন্দোলনের একজন প্রধান সংগঠক হিসেবে কাজ করে চলেছেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তিনি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আগে তিনি সিনেমা নিয়ে কাজ করতেন। তখন রাজনৈতিকভাবে খুব একটা সরব ছিলেন না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনই তাকে রাজনৈতিকভাবে সচেতন করে তোলে।
শীর্ষনিউজ