প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদকালে বিজ্ঞানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), কোয়ান্টাম গবেষণা এবং মহাকাশ অনুসন্ধানকে অগ্রাধিকার দেবেন। আগের মতোই তার কাছে অবহেলার শিকার হবে জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ এবং সংক্রামক রোগের গবেষণা।
বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী ‘নেচার’ এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, চাঁদে মহাকাশচারীদের পাঠানোর বিষয়ে ট্রাম্প খুব আগ্রহী। তিনি চান তার মেয়াদকালে মার্কিন নভোচারীরা আবার চাঁদে অবতরণ করুক। তাই এবার নাসার বড় অগ্রধিকার হতে যাচ্ছে চাঁদে নভোচারী পাঠানো। ২০২৭ সালের মাঝামাঝি চাঁদে মানুষ পাঠানোর আর্টেমিস প্রোগ্রাম বাস্তবায়িত হতে পারে।
এছাড়া টেক কোম্পানিগুলোর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও কোয়ান্টাম গবেষণার ব্যবসা যে গুরুত্ব পেতে যাচ্ছে তার প্রমাণ ট্রাম্পের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান। সোমবার ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প শপথ নেবেন। এ অনুষ্ঠানে দলবেঁধে যোগ দিচ্ছেন টেক টাইটানরা। স্পেসএক্স ও টেসলার সিইও ইলন মাক্স ইতোমধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনে যোগ দিয়েছেন। তাকে কেন্দ্র করে টেক কোম্পানির সিইওরা ট্রাম্পের পাশে জড়ো হয়েছেন।
অভিষেকে যোগ দিচ্ছেন আমাজনের জেফ বেজোস, ফেসবুক বা মেটার মার্ক জাকারবার্গ, অ্যাপলের টিম কুক, ওপেনএআই-এর স্যাম অল্টম্যান, গুগলের সুন্দর পিচাই এবং টিকটকের শউ চিউ। এনভিডিয়া করপোরেশনের সিইও জেনসেন হোয়াং পূর্ব এশিয়া সফরে থাকায় ওই অনুষ্ঠানে থাকতে পারছেন না। বড় টেক কোম্পানিগুলো ইতোমধ্যে ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে এক মিলিয়ন ডলার করে অনুদান দিয়েছেন। এছাড়াও বোয়িং কোম্পানি, ফোর্ড, জেনারেল মটরস টয়োটাও এক মিলিয়ন ডলার করে অনুদান দিয়েছে।
টেক কোম্পানিগুলো এবার ট্রাম্প প্রশাসনের কাছ থেকে বিশেষ আনুকূল্য পেতে যাচ্ছে। ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা ক্লারার সিলিকন ভ্যালিতে গিয়ে এ নিয়েই আলোচনা জানতে পেরেছি। কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দামও বেড়ে গেছে। প্রযুক্তিবিষয়ক নিউজেও এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
নেচার সাময়িকীর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখন আলোচিত বিষয়। তেমনি আলোচিত বিষয় কোয়ান্টাম গবেষণা। ট্রাম্প প্রশাসনের কাছ থেকে কিছু প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আগামী বছরগুলোতে এ বিষয়ে অনুকূল নীতি আশা করছে।
এদিকে নেচার সাময়িকীর সম্পাদকরা ডোনাল্ড ট্রাম্প বরাবরে এক চিঠিতে বিজ্ঞানকে কীভাবে সমৃদ্ধ করা যায় সে ব্যাপারে তাদের মতামত তুলে ধরেছেন। তারা বলেছেন, ‘প্রিয় ডোনাল্ড ট্রাম্প, ২০ জানুয়ারি আপনি ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর আমরা আশা করি, আপনি গবেষকদের জন্য মার্কিন সরকারের সহায়তা অব্যাহত রাখবেন। বিশেষ করে মৌলিক বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে। জলবায়ু এবং জ্বালানি নিরাপত্তাকেও অগ্রাধিকার দিতে হবে।’
আগের মতো জলবায়ু সমস্যা যাতে অবহেলিত না হয় সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে নেচার সাময়িকীর সম্পাদকরা বলেন, ‘এই জানুয়ারি মাসে ক্যালিফোর্নিয়ায় দেখা দেয়া বিধ্বংসী দাবানলের ক্ষেত্রে রয়েছে বিঘ্নিত জলবায়ুর প্রভাব। দাবানলের ধোঁয়া শ্বাসপ্রদাহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এ ক্ষেত্রে যত বেশি বিজ্ঞান সমর্থন করবেন তত ভালো।’
উল্লেখ্য, ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে (২০১৭-২১) কোভিড মহামারি ও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি অস্বীকার করেছিলেন। তাই জলবায়ু, আর্থ সায়েন্স ও বায়োমেডিসিন নিয়ে কাজ করেন এমন বিজ্ঞানীরা এবার ট্রাম্প কী পদক্ষেপ নেন তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাদের মতে, পরিবেশ বিজ্ঞান এবং সংক্রামক রোগের মতো ক্ষেত্রগুলোতে নজর দিতে হবে যাতে আগামী চার বছর এই বিষয়গুলো ক্ষতির সম্মুখীন না হয়।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের ১০০ নির্বাহী আদেশ
সোমবার ডোনাল্ড ট্রাম্প শপথ নিয়েই গুরুত্বপূর্ণ নির্বাহী আদেশে সই করবেন। এমন ১০০ নির্বাহী আদেশ কর্মকর্তারা তৈরি করে রেখেছেন। তিনি দক্ষিণ সীমান্ত বন্ধ করে দেবেন। অবৈধ অভিবাসীদের বিতাড়নে তিনি জোরালো পদক্ষেপ নিচ্ছেন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে ১১ লাখ অবৈধ অভিবাসী রয়েছে। এর মধ্যে ৫ লাখ অবৈধ অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত। মেক্সিকো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অভিবাসীদের ব্যাপারে ট্রাম্পের বক্তব্য হচ্ছে, আপনারা মেক্সিকোতে থাকুন।
ট্রাম্প তার নির্বাহী আদেশে যুক্তরাষ্ট্রের তেল গ্যাস উত্তোলন ও অনুসন্ধান কাজ শুরু করার ঘোষণা দেবেন। নির্বাচনী প্রচারের সময় তিনি বক্তব্যে বার বার বলেছেন, ড্রিলিং, ড্রিলিং। ক্যাপিটলের দাঙ্গায় শাস্তিপ্রাপ্ত ১৫০ জনকে ট্রাম্প ক্ষমা করে দিয়ে নির্বাহী আদেশ জারি করবেন।
ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে আমেরিকান আইডল ক্যারি আন্ডারউড গাইবেন বিখ্যাত গান ‘আমেরিকা দ্য বিউটিফুল’।
ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠান এবার হচ্ছে প্রচণ্ড ঠাণ্ডার মধ্যে। ওয়াশিংটন ডিসি, মেরিল্যান্ড, ভার্জিনিয়া এলাকায় গত কিছুদিন ধরে টানা বরফ পড়ছে। আবহাওয়া বিভাগের খবরে বলা হয়েছে ২০ জানুয়ারি বরফ পড়বে না। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প দুপুরে যখন শপথ নেবেন তখন তাপমাত্রা থাকবে ১৮ থেকে ১৯ ডিগ্রির মধ্যে। এই তাপমাত্রা গত ৪০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ঠাণ্ডা। এর আগে ১৯৮৫ সালে রোনাল্ড রিগ্যানের শপথ অনুষ্ঠানের দিন এমন ঠাণ্ডা ছিল।
ক্যাপিটলের ভেতরে হবে শপথ অনুষ্ঠান
হিমাঙ্কের তাপমাত্রার কারণে প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট জেডি ভ্যান্সের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটি ক্যাপিটলের ভেতরে হবে। ভাষণও ভেতরেই দেবেন ট্রাম্প। তিনি লিখেন, ঠান্ডা আবহাওয়ার একটি আর্কটিক বিস্ফোরণ হয়েছে। আমি কাউকে আহত অবস্থায় দেখতে চাই না। তাই ক্যাপিটলের বাইরে নয়, ভেতরেই অনুষ্ঠান হবে।