Image description

বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের। বিভিন্ন পদে নিয়োগ বা বদলি করে সিদ্ধান্তে অটল থাকতে পারছে না। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বার বার সিদ্ধান্ত বদলাতে বাধ্য হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এতে প্রশাসনিক দুর্বলতা স্পষ্ট হচ্ছে। ক্ষুণœ হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের ভাবমূর্তিও। চাপে নাকি অনুরোধে বার বার সিদ্ধান্ত বদল হচ্ছে, খোদ কর্মকর্তারাই এ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন!

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর জনপ্রশান মন্ত্রণালয়ে ব্যাপক রদবদল হয়। তাড়াহুড়া করে বিভিন্ন বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়ে তা আবার পরিবর্তনও করতে হয়েছে। সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার বিষয়টি যেমন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় করেছে, তেমনি সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায় থেকেও চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। 

এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সবক্ষেত্রে এমন হচ্ছে না। কেবল নিয়োগ-বদলির আদেশে কোনো ধরনের ত্রুটি হলে সেটির সমাধান ও সংশোধনের অংশ হিসেবে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়। সাবেক সচিব ও জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ একেএম আবদুল আউয়াল মজুমদার বলেন, একটা আদেশ করার পর সেটি বদলানো মানে হচ্ছে সে বিষয়ে আগে ভালো করে কাজ হয়নি। এখন এটি এতো  বেশি হচ্ছে যে কারণে প্রশাসনিক দুর্বলতা স্পষ্ট। এতে ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে। আমি মনে করি এ জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা হিসেবে প্রধান উপদেষ্টারও দায় আছে। উনাকে দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে আবার পাল্টানো হচ্ছে কেন, সে বিষয়ে উনার কড়া বার্তা দেয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়ের উপদেষ্টা, মূখ্য সচিব ও বাস্তবায়নকারী সচিবেরও দায় আছে। সকল মন্ত্রণালয়ের অভিভাবক হিসেবে মন্ত্রিপরিষদ সচিবও দায় এড়াতে পারেন না। একজন কর্মকর্তার বদলি হোক বা পদায়ন, ভালো করে খোঁজ নেওয়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। সেখানে গাফিলতি আছে।

সর্বশেষ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সদস্য পদে নিয়োগ দিয়ে আবার বাতিল করা হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে এদের নিয়োগ দেন কেন, আবার বাতিল করাই বা হয় কেন? এর আগে গত সেপ্টেম্বরে দেশের কয়েকটি জেলায় ডিসি নিয়োগ দিয়ে পরে তা বাতিলের ঘোষণা দেয়া হয়। বিদেশে কূটনৈতিক মিশনের কর্ণধার থেকে শুরু করে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা পদে নিয়োগের ক্ষেত্রেও এ রকম সিদ্ধান্ত বদলের ঘটনা দেখা গেছে। পিএসসিসহ সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, পিএসসিতে সদস্য পদে নিয়োগ পাওয়াদের মধ্যে কয়েকজন সদস্যকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা হলে প্রথমে শপথ স্থগিত করা হয়। বিগত সরকারের ঘনিষ্ঠজন পরিচয় সামনে আসায় তাদের নিয়োগ বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন। ৩০ ডিসেম্বর কুষ্টিয়ায় নতুন ডিসি এবং কুষ্টিয়ার ডিসিকে নারায়ণঞ্জে বদলি করা হয়। আর নারায়ণগঞ্জের ডিসিকে মাঠ থেকে তুলে আনা হয়। ছয় দিন পরই এই সিদ্ধান্ত বদলে কুষ্টিয়ার ডিসিকে বান্দরবান দায়িত্ব দেওয়া হয়। আর বাকি দুইজনের আদেশ প্রত্যাহার করে আগের মতোই রাখা হয়। মাত্র তিন দিন পরই নারায়ণগঞ্জে নতুন ডিসিসহ আরও দুই জেলায় নতুন ডিসি দেয়া হয়। অথচ কয়েক মাস আগেই তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন।

এর আগেও গত সেপ্টেম্বরে ডিসি নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল খোদ মন্ত্রণালয় থেকেই। মন্ত্রণালয়ের আদেশ ঘেটে দেখা গেছে, গত কয়েক মাসে উপসচিব থেকে সচিব পর্যন্ত অনেক আদেশ দিয়েও পরে আবার বাতিল করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়। কোনো কর্মকর্তাকে নতুন কর্মস্থল দিয়ে বাতিল করেছে, কাউকে ওএসডি করে আবার সেটি প্রত্যাহার করেছে। নিয়োগের এক দিনের মাথায় গত ১ অক্টোবর খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ইলাহী দাদ খানের নিয়োগ বাতিল করেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। শুধু রদবদলই নয় নিয়োগ নিয়েও বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না মন্ত্রণালয়টির। ৪৩তম বিসিএসে দুইধাপে প্রজ্ঞাপন করায় পিএসসির সুপারিশ থেকে বাদ পড়েন ২৬৭ জন। পরে বাদপরা প্রার্থীরা সচিবালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে অন্তর্ভুক্তির দাবি জানালে এ বিষয়ে সভা করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। গত ৯ জানুয়ারি ওই সভা করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমান জানান, গুরুতর অপরাধ ছাড়া বাদ পড়া বাকিরা নিয়োগ পাচ্ছেন। এরপর বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন আদেশের আগে ভালোভাবে যাচাই হলো না কেন? বাদ দেয়া হলো কেন? শিক্ষার্থীদের সচিবালয়ের সামনে দাঁড়াতে হলো কেন? সচিবালয়ের একাধিক কর্মকর্তারা জানান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মাদার মিনিস্ট্রি হিসেবে তাদের সিদ্ধান্তে এখন আর অটল থাকতে পারছে না।