
দেশের অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি (ওটিএ) খাতে আবারও গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। এবার অনলাইন টিকিটিং পোর্টাল ‘ফ্লাই ফার ইন্টারন্যাশনাল’ বিপুল সংখ্যক গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে। প্ল্যাটফর্মটির মাধ্যমে টিকিট কাটা শত শত গ্রাহক ও ট্রাভেল এজেন্সি দিশেহারা। আকর্ষণীয় ছাড়ে বিমান টিকিট, হোটেল বুকিং এবং ভ্রমণ প্যাকেজের লোভ দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ করছেন ভুক্তভোগীরা।
মঙ্গলবার সরেজমিন দেখা যায়, রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক রোডের ক ৯/এ হাজি আব্দুল লতিফ ম্যানসনের দ্বিতীয়তলায় ফ্লাই ফারের অফিস। শত শত মানুষের ভিড়। জানতে চাইলে ভুক্তভোগী জসিম উদ্দিন নামের একজন বলেন, গতকাল তাদের থেকে টিকিট কাটি। টাকাও দেই অনলাইনে; কিন্তু সকাল থেকে কেউ আর ফোন ধরে না। অফিসে এসে দেখি তালাবন্ধ।
আসন্ন ছুটির মৌসুমকে কেন্দ্র করে ফ্লাই ফার ইন্টারন্যাশনাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন আকর্ষণীয় গন্তব্যের জন্য অবিশ্বাস্য ছাড়ে প্যাকেজ ও টিকিটের বিজ্ঞাপন দেয়। এ বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে শত শত গ্রাহক তাদের প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা অগ্রিম পরিশোধ করেন; কিন্তু নির্ধারিত সময়ে টিকিট বা চূড়ান্ত কাগজপত্র না পাওয়ায় গ্রাহকরা তাদের অফিসে যোগাযোগ করতে শুরু করেন। মঙ্গলবার থেকে আকস্মিকভাবে অফিস, ওয়েবসাইট এবং ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়ায় বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।
আরেক ভুক্তভোগী তাহমিনা সপরিবারে দুবাই ভ্রমণের জন্য প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা পরিশোধ করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘তাদের ফেসবুক বিজ্ঞাপনে বিশাল ছাড় দেখে আমি প্যাকেজটি কিনি। তারা আমাকে বলেছিল ভ্রমণের সাত দিন আগে টিকিট ও হোটেল ভাউচার দেওয়া হবে; কিন্তু এখন তাদের কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমাদের সব পরিকল্পনা নষ্ট হয়ে গেছে এবং জমানো টাকাটাও খোয়া গেল।’
প্রতিষ্ঠানটি অ্যাসোসিয়েশন অব ট্র্যাভেল এজেন্ট বাংলাদেশের (আটাব) সদস্য। তাদের সদস্য নম্বর এমএন ০০০০৫০১৯।
দেশে ওটিএ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে গ্রাহকের টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম নয়। এর আগে ফ্লাইট এক্সপার্ট, ‘২৪ টিকিট ডটকম’ এবং ‘ফ্লাইটবুকিং ডটকম’সহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান একই ধরনের প্রতারণা করেছে। বারবার এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ায় নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ভুক্তভোগী গ্রাহকরা ইতোমধ্যে পুলিশ ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ ঘটনা অনলাইন প্ল্যাটফর্মের ওপর নির্ভরশীল গ্রাহকদের জন্য একটি বড় সতর্কবার্তা এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর জন্য একটি নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
এদিকে এসব বিষয়ে জানতে ফ্লাই ফারের সিইও নুসরাত জাহানের সঙ্গে যোগাযোগের চেস্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।