
সৌদি আরবে নিখোঁজের ১৫ দিন পর মরুভূমিতে বালু ও পাথরচাপা অবস্থায় বাংলাদেশি যুবক সবুজ মাতুব্বরের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করেছে সৌদি পুলিশ। সোমবার (১৩ অক্টোবর) দেশটির আল কাসিম অঞ্চলের মরুভূমি থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
সবুজ (২৪) মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাদিরপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মানিকপুর এলাকার মেছেরমোল্লার গ্রামের আব্দুল জলিল মাতুব্বরের ছেলে।
জানা গেছে, গত ২৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সময় রাত ৮টার দিকে ছেলে সবুজের সঙ্গে কথা হয় বাবা জলিল মাতুব্বরের। বাড়িতে মিলাদ পড়ানোর জন্য টাকা পাঠানোর কথা বলে ফোন রাখেন। ১ অক্টোবর সকালে টাকা পাঠানোর কথা ছিল। টাকা না আসায় ওই দিন দুপুরে ফোন দিলে ছেলের নম্বর বন্ধ পান। পরে আবার চেষ্টা করলেও নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। ২ অক্টোবর সৌদিতে থাকা অন্যদের কাছ থেকে খবর পান একদিন আগে বাসা থেকে বের হয়ে আর ফেরেনি সবুজ। পরে স্থানীয় পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়। সোমবার (১৩ অক্টোবর) আল কাসিম এলাকায় মরুভূমিতে বালু ও পাথরচাপা অবস্থায় সবুজের মরদেহ খুঁজে পায় সৌদি পুলিশ। এটি সবুজের মরদেহ বলে ধারণা করে সেখানে থাকা অন্য বাঙালিরা।
সবুজের চাচা খোকন মাতুব্বর বলেন, প্রায় ১৫ দিন ধরে নিখোঁজ ছিল। নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি সৌদি পুলিশকেও জানানো হয়। সোমবার সবুজ যেখানে থাকতো তার কাছেই নির্জন মরুভূমিতে বালু আর পাথরচাপা মরদেহ পায় পুলিশ। সে যে প্যান্ট ও গেঞ্জি পরে বাসা থেকে বের হয়েছিল, ওই পোশাক দেখে আশপাশে থাকা পরিচিতরা বুঝতে পারে মরদেহটি সবুজের।
সবুজের ছোট বোন রিয়া মনি বলেন, আমার ভাইয়ের কাছে তিন লাখ টাকা ছিল। আকামা করার জন্য রাখছিল। ওই টাকার জন্যই আমার ভাইকে মেরে ফেলছে। আমার বাবা ভ্যান চালিয়ে কষ্ট করে উপার্জন করে। আমার ভাই একজনই। ঋণ করে টাকা জোগাড় করে ভাইকে সৌদি পাঠিয়েছিল।
প্রতিবেশী মান্নান ফকির বলেন, পরিবারটি খুবই দরিদ্র। ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। এখন ছেলের মৃত্যুর খবরে ভেঙে পড়েছে বাবা-মা। মরদেহ আনার টাকা-পয়সা নাই। সবুজের কাছে আকামা করার প্রায় তিন লাখ টাকা ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, টাকার জন্যই সবুজকে হত্যা করা হয়েছে। যাদের সঙ্গে থাকত হয়তো তারাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
সবুজের বাবা জলিল মাতুব্বর বলেন, বাড়িতে ১০ হাজার টাকা পাঠাইতে চাইছিল। আমার সঙ্গে ওইটাই শেষ কথা তার। এতদিন নিখোঁজ ছিল। সোমবার মরুভূমিতে মরদেহ পাওয়া গেছে। সৌদি থেকে জানিয়েছে মরদেহ সবুজের।
শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এইচএম ইবনে মিজান বলেন, আমরা খোঁজ খবর নেব। যতটুকু পারি পরিবারটিকে সহযোগিতা করব। মরদেহ আনার বিষয়ে পরিবার সহযোগিতা চাইলে নিয়ম অনুযায়ী সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।