
মিরপুরের শিয়ালবাড়ি এলাকায় কেমিক্যাল গোডাউন ও একটি পোশাক কারখানায় আগুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে ফায়ার সার্ভিস। এ ঘটনায় দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন আরও তিনজন। তবে এখনও কয়েকজন নিখোঁজ রয়েছেন বলে দাবি করেছেন অনেক ভুক্তভোগী পরিবার।
বুধবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের সরজমিনে দেখা যায়, জরুরি বিভাগের সামনে ঘটনার পর থেকে অপেক্ষা করছেন নিখোঁজদের স্বজনরা। পরিবারগুলো তাদের প্রিয়জনদের এখনও খুঁজে ফিরছেন পাগলের মতো। হাসপাতালের মর্গে মর্গে ছুটছেন লালমনিরহাটের আব্দুল মান্নান। তার মেয়ে মৌসুমি আক্তারকে খুঁজছেন তিনি। মৌসুমি এসএসসি পাসের পর টাকার অভাবে আর পড়াশোনা করতে পারেননি। তিনি অভাবের সংসারে কাজের সন্ধানে ছুটে আসেন ঢাকায়। মাত্র এক মাস আগে গার্মেন্টসে কাজ শুরু করেছিলেন। থাকতেন বাবার সঙ্গে।
আব্দুল মান্নান বলেন, ‘যখন আগুন লাগার খবর পাই তখনই রিকশা গ্যারেজে রেখে ছুটে আসি। মেয়ের খোঁজে সারাদিন গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থেকেছি। একে একে লাশ বের হতে দেখি, কিন্তু কোথাও আমার মেয়েকে পাইনি। এখন এখানে, ঢামেকে এসেছি। ভেবেছি হয়তো ও এখানে আছে। যদি এখানেও না পাই, তাহলে কোথায় খুঁজব আমার মেয়েকে?’
এদিকে মুক্তা নামে আরেক নারীর খোঁজে এসেছে পরিবার। তার তিন সন্তান রয়েছে। মুক্তার ভাই আব্দুল দেওয়ান বলেন, ‘আমার বোনের বয়স ৩৫ বছর। তার তিন সন্তান রয়েছে। কয়েক মাস ধরে বেকার থাকার পর দেড় মাস আগে ওই পোশাক কারখানায় চাকরি পেয়েছিলেন। এখন তিনি নিখোঁজ। তিনি বলেন, ‘গতকাল দুপুর থেকে আজ এখন পর্যন্ত হাসপাতালে ঘুরছি। মুক্তার কোনো খোঁজ নেই। ওর তিন সন্তান মায়ের জন্য কাঁদছে।’
দীর্ঘ দিন ধরে ওই পোশাক কারখানায় চাকরি করেন নাজমুল ইসলাম। তার দুই সন্তান রয়েছে। পরিবার নিয়ে ঢাকার মিরপুরে বসবাস করতেন। দুপুরে জরুরি বিভাগের সামনে দেখা যায় তার স্বজনদের আর্তনাদ করতে। এসময় তার শ্যালক মো. ইয়াসিন বলেন, ‘আমার দুলাভাই ঘটনার দিন সকাল সাড়ে ১১টায় আমার বোনের কাছে ফোন দিয়েছিলেন। তখন সে বলেন আগুন লেগেছে, মনে হয় বাঁচবো না। এর পর থেকে তাকে মোবাইলে আর পাওয়া যায়নি। কিছুক্ষণ মোবাইল খোলা থাকলেও এরপর বন্ধ। এখন পর্যন্ত আর মোবাইলে কল যাচ্ছে না। আমরা মর্গে মর্গে খুঁজছি কিন্তু কোথাও পাচ্ছি না। কোথায় গেলে তাকে পাবো? কিছুই বুঝতে পারছি না।’