
রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরে পুড়ে যাওয়া পোশাক কারখানা ও রাসায়নিকের গুদামের আশপাশে স্বজনের খোঁজে ঘুরছেন অনেক মানুষ। তারা বলছেন, আগুন লাগার পর থেকে স্বজনদের কোনো খোঁজ পাচ্ছেন না তারা। মোবাইল ফোনেও সাড়া পাচ্ছেন না তারা।
ইতোমধ্যে ওই আগুনে ১৬ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস; যাদের সবার লাশ পোশাক কারখানাটির দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় প্রথম দফায় নয়জনের এবং সন্ধ্যা ৭টার পর মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৬ জন হওয়ার তথ্য দেওয়া হয় ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে।
নিহতদের নাম পরিচয় এখনও জানাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ। তাদের চেনার উপায় নেই বলে জানানো হয়েছে।
এদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে এখনও নিখোঁজ ব্যক্তিদের কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি।
দুপুরে লাগা আগুন বিকালেও নিয়ন্ত্রণে না এলে এবং মৃত্যুর খবর আসতে থাকলে সেখানে ভিড় বাড়তে থাকে স্বজনদের।
ভাইয়ের ছেলে রবিনের ছবি হাতে ঘটনাস্থলের এদিক সেদিক যাচ্ছেন নাসিমা আক্তার।
তিনি বলেন, এখানে জিএম ফ্যাশন নামে একটি কারখানায় কাটিং মাস্টার হিসেবে কাজ করছিলেন রবিন। তার কর্মক্ষেত্র ছিল পুড়ে যাওয়া ভবনটির তিন তলায়।
নাসিমা বলেন, ভবনের পাঁচতলা থেকে শ্রমিকরা বের হতে পারলেও তিনতলা থেকে কেউ বের হতে পারেনি। এখন পুরো পরিবারের সদস্যরা রবিনের ছবি হাতে খুঁজতে বেরিয়েছেন।
পোশাক কারখানায় কাজ করা খালিদ হাসান সাব্বিরকে খুঁজছেন তার মামাতো ভাই শাকিল আহমেদ। তিনি বলেন, সাব্বির আরমান গার্মেন্টসের স্টোর ইনচার্জ ছিলেন। সাব্বিরের ফোন এখনও বাজছে। তবে কেউ ধরছেন না।
ঘটনাস্থলে বন্ধু সারোয়ারের ছবি হাতে ঘুরছেন আমানুল্লাহ। তিনি বলেন, তার বন্ধু সেখানকার একটি ‘ওয়াশিং ফ্যাক্টরিতে’ হেলপারের কাজ করতেন। অল্প কয়েকদিন হল সারোয়ার এখানে কাজে যুক্ত হয়েছেন। আগুন লাগার পর থেকে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
আগুন লাগার সাড়ে সাত ঘণ্টা পরও নেভানো যায়নি রাসায়নিকের গুদামের আগুন।
মঙ্গলবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে রূপনগরের শিয়ালবাড়ি এলাকার কসমিক ফার্মা নামের একটি রাসায়নিকের গুদাম এবং পাশের পোশাক কারখানায় আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস।
পর্যায়ক্রমে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট সেখানে নিয়ে আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেয়। তারা পোশাক কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলেও রাসায়নিকের গুদামে সন্ধ্যার পরও আগুন জ্বলছিল।
টিন শেড রাসায়নিকের গুদামটির মালিক ‘আলম সাহেব’ বলে স্থানীয়রা জানান। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, সেখান থেকে শুরু হওয়া আগুনটি পরে সামনের একটি পোশাক কারখানাতেও ছড়িয়ে যায়।
সন্ধ্যা ৭টার পরও ঘটনাস্থলে রাসায়নিকের তীব্র গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। উদ্ধারকর্মীদের সহায়তায় পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সেখানে তৎপর রয়েছে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরাও। এরমধ্যে সেখানে নিখোঁজদের সন্ধান পেতে ভিড় করছেন স্বজনরা।