
প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদারের সহযোগী তাজবীর হাসানকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন নাকচ করে তাকে জামিন দিয়েছে আদালত। ঢাকার মহানগর হাকিম আরিফুর রহমান মঙ্গলবার শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) আসামি পক্ষে সৈয়দা ফাহমিদা হোসেনসহ কয়েকজন আইনজীবী রিমান্ডের বিরোধিতা করে জামিনের আবেদন করেন।
গত ৪ অক্টোবর ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় তাজবীরকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন বিমানবন্দর থানার এসআই মো. সুমন মিয়া। ওইদিন তাকে কারাগারে পাঠিয়ে রিমান্ড শুনানির দিন মঙ্গলবার ধার্য করা হয়।
ফাহমিদা হোসেন বলেন, “আসামির বিরুদ্ধে কোনো ডকুমেন্টস নেই। কোনো মামলাও নেই। তিনি তুরস্কের নাগরিক। আসামির বাবা গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রয়েছেন। তাকে দেখতে তিনি দেশে আসেন। এরপর বিদেশে যাওয়ার সময় তাকে আটক করা হয়। আসামি নির্দোষ। তার জামিনের প্রার্থনা করছি।”
অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী কাইয়ূম হোসেন নয়ন এর বিরোধিতা করেন৷ তিনি বলেন, “পি কে হালদার দেশের ব্যাংক, বীমা, অর্থনীতি অবস্থাকে ধ্বংস করেছেন। পি কে হালদারের ১০% আর্থিক সহযোগী এই আসামি। ফেইসবুক- ইউটিউবে সার্চ দিলে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের তথ্য পাওয়া যাবে।
“এই আসামি ২০২২ সালে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পালিয়ে গেছে। মামলার তদন্তের স্বার্থে সাত দিনের রিমান্ডের যৌক্তিকতা রয়েছে। এই আসামি ফ্যাসিস্টের দোসর। দুদকের এক মামলায় তাকে অ্যারেস্ট দেখানো হয়েছে। জামিন না মঞ্জুর করে তার সাত দিনের রিমান্ডের প্রার্থনা করছি।”
উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত এক হাজার টাকা মুচলেকায় তাজবীর হাসানকে জামিন দেন।
আদেশে বিচারক বলেন, “যেহেতু আসামির বিরুদ্ধে অন্যান্য মামলা প্রক্রিয়াধীন। সেক্ষেত্রে এখানে রিমান্ড ও কারাগারে আটক রাখার কোনো আবশ্যকতা নেই। এই বিবেচনায় আসামিকে এক হাজার টাকায় মুচলেকায় তার জামিন মঞ্জুর করা হল।”
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী কাইয়ূম হোসেন নয়ন পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যেহেতু এই আসামির বিরুদ্ধে অন্যান্য মামলা প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় রয়েছে, সেজন্য আদালত জিডিমূলের মামলায় তার জামিন মঞ্জুর করেন।”
পি কে হালদারের ট্র্যাভেল এজেন্সি হালট্রিপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাজবীরকে গত ৪ অক্টোবর মধ্যরাতে বিমানবন্দরে আটক করেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। পরদিন দুপুরে তাকে বিমানবন্দর থানায় হস্তান্তর করা হয়।
তার বিষয়ে করা সাধারণ ডায়েরিতে বলা হয়, “তুরষ্কে যাওয়ার পথে তাজবীর হাসানকে (৩৫) আটক করা হয়। আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তিনি তুরস্কসহ আরও একটি দেশের নাগরিকত্ব বা পাসপোর্ট গ্রহণ করেছেন। গোয়েন্দা তথ্য মতে, তিনি পি কে হালদারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। সেজন্য তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
আর রিমান্ড আবেদন বলা হয়, “আসামির বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান চলমান। তার বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগ থাকার কথা জানা যায়। তিনি পি কে হালদারের সঙ্গে বড় অঙ্কের টাকার ১০ শতাংশের শেয়ার হোল্ডার। এছাড়া জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, পিকে হালদারের আর্থিক কেলেঙ্কারির সাথে তিনি ওতোপ্রোতভাবে জড়িত এবং একাধিক দেশের নাগরিক। সেজন্য আসামিকে ব্যাপক ও নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদসহ আরো তথ্য উপাত্ত সংগ্রহের জন্য সাত দিনের রিমান্ড প্রয়োজন।”
তাজবীরের সঙ্গে থাকা একটি তুর্কি পাসপোর্ট, একটি আইফোন ১৭ প্রো-ম্যাক্স, একটি আইফোন ১৫ প্রো আলামত হিসেবে ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানোর আবেদন করা হয়।
২০২০ সালে গ্রাহকদের শত-শত কোটি টাকা নিয়ে হঠাৎ উধাও হয়ে যায় হালট্রিপ। ক্ষতিগ্রস্ত হন অসংখ্য যাত্রী ও ট্র্যাভেল এজেন্সি।
শীর্ষনিউজ