
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে প্রস্তুতি সারছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এবার ভোটকেন্দ্র অপরিবর্তিত রেখে বুথ কমানোর চেষ্টা করছে সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি। কারণ, এবারের নির্বাচনে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণে অনিশ্চয়তা থাকায় ভোটার উপস্থিতি ৫৫ থেকে ৬০ শতাংশের বেশি হবে না। বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করে এমন অনুমান করেছে ইসি।
ইসির নতুন উদ্যোগের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নির্বাচন কর্মকর্তার তালিকা ঢেলে সাজানো। এবার বিতর্কিত কর্মকর্তাদের ভোট কার্যক্রম থেকে দূরে রেখে দলনিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের দিয়ে নির্বাচনি কার্যক্রম পরিচালনার চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার সংখ্যার সঙ্গে কমবে নির্বাচনি ব্যয়।
এর আগে গত ১ সেপ্টেম্বর ভোটকক্ষে নারী ও পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ১০০ জন করে বাড়িয়ে ভোটকেন্দ্র স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০২৫-এ সংশোধনী আনে ইসি। নীতিমালার আলোকে বর্তমান ভোটকেন্দ্র ৪২ হাজার ৬১৮টি এবং ভোটকক্ষ দুই লাখ ৪৪ হাজার ৪৬টির খসড়া প্রকাশ করা হয়। এখান থেকে কমিয়ে প্রতি বুথে ভোটার সংখ্যা আরো বাড়াতে চাইছে কমিশন। ইসির একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বক্তব্য দেওয়ার অনুমতি না থাকায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নির্বাচন কমিশনার আমার দেশকে বলেন, ভোটকেন্দ্র ও কক্ষ কমিয়ে আমরা নীতিমালা জারি করেছি। ইতোমধ্যে খসড়া ভোটার তালিকাও প্রকাশ করা হয়েছে। দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তি করে এগুলো চূড়ান্ত করা হবে। আমরা পর্যালোচনা করে দেখেছি, আগামী নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ৫৫ থেকে ৬০ শতাংশের বেশি হবে না। তাই ভোটকেন্দ্র অপরিবর্তিত রেখে বুথ কমিয়ে ভোটার সংখ্যা আরো বাড়ানো হবে। বুথে ভোটার সংখ্যা বাড়ানো হলে ভোটদানে কোনো সমস্যা হবে না।
এর আগে নির্বাচনে ব্যয় কমানোর কথা উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, প্রতি ভোটকেন্দ্রে বুথের সংখ্যা পুনর্নির্ধারণ করার মাধ্যমে কমিশন ইতোমধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছে। আগে পুরুষদের জন্য একটি বুথে ভোটার সংখ্যা ছিল ৫০০ এবং নারীদের জন্য ৪০০। এখন তা যথাক্রমে ৬০০ ও ৫০০ করা হয়েছে। ফলে প্রায় ৪৯ হাজার বুথ কমানো সম্ভব হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রায় দেড় লাখ নির্বাচন কর্মকর্তার প্রয়োজনও কমেছে।
তিনি আরো বলেন, শুধু একটি সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এত বড় অঙ্কের ব্যয় সাশ্রয় করা গেছে। ভবিষ্যতেও প্রতিটি ধাপে এ মিতব্যয়িতা নিশ্চিত করতে হবে।
ইসির তথ্য বলছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কেন্দ্র ছিল ৪২ হাজার ১৪৮টি এবং কক্ষ দুই লাখ ৬১ হাজার ৫৬৪টি। ওই নির্বাচনে ভোটার ছিল ১১ কোটি ৯১ লাখ। ত্রয়োদশ সংসদে ভোটার বেড়েছে কম-বেশি ৭০ লাখ। এতসংখ্যক ভোটারের জন্য কেন্দ্র বেড়েছে মাত্র ৪১৮টি। অর্থাৎ খসড়া অনুযায়ী এবার ৪২ হাজার ৬১৮টি কেন্দ্র ও দুই লাখ ৪৪ হাজার ৪৬টি কক্ষ। কমিশন কক্ষ আরো কমিয়ে বুথে ভোটার সংখ্যা বাড়াতে চাচ্ছে। গত মঙ্গলবার নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সংলাপে ভোটকেন্দ্র ও কক্ষ কমানোর পরামর্শ এসেছে। এর আগেই কমিশন এমন চিন্তা নিয়ে কাজ শুরু করে।
আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথম ভাগে সংসদ নির্বাচন ও ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণার লক্ষ্যে সব কাজ এগিয়ে নিচ্ছে ইসি।