
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়ার দাবিতে আন্দোলন করছেন। বর্তমানে তারা এক হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া পান। অন্যদিকে সরকারি স্কুলের শিক্ষকরা মূল বেতনের ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া হিসেবে পেয়ে থাকেন। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের তুলনায় সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের চিকিৎসা ভাতাও তিনগুণ বেশি। অথচ উভয় ক্ষেত্রেই প্রার্থীরা অনার্স ও মাস্টার্স পাস।
সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে নিয়োগ পেয়ে থাকেন। তারা ১০ম গ্রেডে বেতন-ভাতাদি পান। অপরদিকে, বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা ২০১৫ সাল থেকে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) মাধ্যমে নিয়োগ সুপারিশ পাচ্ছেন। বিসিএস নন-ক্যাডার এবং এনটিআরসিএ—দুই পরীক্ষার ধরন প্রায় একই। উভয় ক্ষেত্রেই প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রার্থীরা নিয়োগ পান। তবু বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধায় রয়েছে স্পষ্ট বৈষম্য।
সরকারি স্কুলে কর্মরত শিক্ষকদের প্রবেশ পর্যায়ে মূল বেতন ধরা হয় ১৬ হাজার টাকা। এর সঙ্গে তিনি বাড়ি ভাড়া পান প্রায় ৮ হাজার টাকা, যা সিটি করপোরেশন এলাকা—বিশেষ করে ঢাকায় আরও বেশি। এছাড়া তিনি চিকিৎসা ভাতা হিসেবে পান ১ হাজার ৫০০ টাকা এবং বিশেষ সুবিধার আওতায় আরও কিছু অর্থ প্রাপ্ত হন।
অন্যদিকে, এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশ পর্যায়ে সহকারী শিক্ষকদের বেতন সাড়ে ১২ হাজার টাকা। এর সঙ্গে তাদের বাড়ি মাত্র ১ হাজার টাকা এবং চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা। ফলে দেখা যায়, সরকারি স্কুলের শিক্ষকরা যে বাড়ি ভাড়া পান, সেটি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়ার চেয়ে ৮ গুণ বেশি। এছাড়া সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের প্রতি বছর সমানুপাতিক হারে বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি পেলেও বেসরকারি শিক্ষকদের ক্ষেত্রে তা হয় না। অর্থাৎ এমপিওভুক্ত কোনো শিক্ষক ১০ বছর কিংবা ২০ বছর চাকরি করলে তারা এক হাজার টাকাই বাড়ি ভাড়া পাবেন।
বেসরকারি স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন। গত ১২ অক্টোবর ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়ার প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। সারা দেশে থেকে অসংখ্য শিক্ষক-কর্মচারী জড়ো হন প্রেস ক্লাবে। বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল।
শিক্ষকদের আন্দোলনের এক পর্যায়ে পুলিশের মধ্যস্ততায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিবের সঙ্গে আলোচনায় বসেন এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের শীর্ষ দুই নেতা। তবে প্রজ্ঞাপন জারির ঘোষণা না পাওয়ায় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা। আন্দোলনের স্থান প্রেস ক্লাবের পরিবর্তে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে ঘোষণা করা হয়। তবে শিক্ষকদের একটি অংশ শহীদ মিনারের পরিবর্তে প্রেস ক্লাবের সামনেই অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। বাধ সাজে পুলিশ।
প্রেস ক্লাব থেকে শিক্ষকদের সরিয়ে দিয়ে সাউন্ড গ্রেনেড, জলকামান নিক্ষেপ থেকে শুরু করে করা হয় লাঠিচার্জ। আহত হন বেশ কয়েকজন। গ্রেপ্তার করা হয় ৫ শিক্ষককে। যদিও রাতে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকে শহীদ মিনারেই অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষকরা।
এদিকে আজ সোমবার রাতের মধ্যে ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়ার প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে আল্টিমেটাম দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা। এই সময়ের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি না হলে আগামীকাল মঙ্গলবার সচিবালয় অভিমুখে লং মার্চ করবেন তারা।
এ বিষয়ে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্যসচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী বলেন, আজ রাতের মধ্যে যদি প্রজ্ঞাপন বা কোনো ঘোষণা না দেয়া হয় তাহলে লং মার্চ ও চলমান কর্মবিরতি চলবে।
আন্দোলনের অংশ হিসেবে সারা দেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সোমবার (১৩ অক্টোবর) থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করছেন শিক্ষকরা। একইসঙ্গে শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চলছে অবস্থান কর্মসূচি। শিক্ষকরা জানিয়েছেন, তাদের ন্যায্য দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি ও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে।