Image description

দেশে গ্যাসের তীব্র সংকট চলছে। বাসাবাড়িতে ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে। গ্যাসের অভাবে শিল্পকারখানায় নিয়মিত উৎপাদনও ঠিক রাখতে পারছে না। তবে সংকট মোকাবিলায় দেশীয় উৎস থেকে গ্যাস  উৎপাদন বাড়াতে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

ঢাকার মোহাম্মদবাগ, মেরাজনগর, মদিনাবাগ, কদমতলী, রায়েরবাগ এলাকায় ভোর ৬টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত গ্যাস থাকে না। এসব এলাকার মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন নিত্যদিন। স্থানীয় এলাকাবাসী সৈয়দ মাহমুদুল কবির বলেন, গ্যাস সংকট চরমে। গ্যাসের অভাবে চুলা জ্বলে না। কখনো একবেলা রান্না করে দুই-তিন বেলা খেতে হয়। অনেক সময়ে হোটেল থেকে খাবার কিনে খেয়ে কোনো রকম জীবন কাটছে তার পরিবারের। গ্যাস সংকটের কারণে অনেকে বাধ্য হয়ে বৈদ্যুতিক ইনডাকশন চুলা ব্যবহার করছেন। প্রায় একই অভিযোগ পূর্ব-নয়াটোলার বাসিন্দা এজাজ রসুল সোহেলের। তার এলাকায় প্রায় দিনই সকাল ৭টা থেকে রাত ৮/৯টা পর্যন্ত গ্যাস থাকে না। মীরবাগের বাসিন্দা  জামাল উদ্দিন বলেন, মীরবাগ চৌরাস্তা, মধুবাগ, মীরের টেক এলাকায় তিন চার মাস ধরে সকাল থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত গ্যাস থাকে না। 

সূত্র বলছে, দেশে গ্যাসের চাহিদা দৈনিক অন্তত ৪২০ কোটি ঘনফুট। বিপরীতে এলএনজিসহ বর্তমানে দিনে গড় সরবরাহ ২৫০-২৭০ কোটি ঘনফুট। এলএনজি’র সরবরাহ কমায় মোট গ্যাস সরবরাহ কমে দাঁড়ায় ২০০ কোটি ঘনফুট। ফলে দেশ জুড়ে সংকট বিরাট আকার ধারণ করে।

এদিকে পেট্রোবাংলা গত ৯ই অক্টোবর জানিয়েছে, দেশের বর্তমান জ্বালানি সংকট নিরসনে দেশীয় উৎস থেকে গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি করে জ্বালানি চাহিদা ও সরবরাহের মাঝে একটি স্থিতিশীল ভারসাম্য বজায় রাখার নিমিত্তে পেট্রোবাংলা বদ্ধপরিকর। এ লক্ষ্যে পেট্রোবাংলা কর্তৃক ৫০টি ও ১০০টি কূপ খনন ও ওয়ার্কওভার কর্মপরিকল্পনাসহ দেশের বিভিন্ন ব্লকে অনুসন্ধান ও নতুন কূপ খনন কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে বাপেক্স কর্তৃক জামালপুর-১ অনুসন্ধান কূপ খননের মাধ্যমে দেশে প্রথমবারের মতো ব্লক-৮ এ বাণিজ্যিক গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। জামালপুর স্ট্রাকচারে গ্যাসের রিজার্ভের পরিমাণ ও বিস্তৃতি মূল্যায়নের লক্ষ্যে আরও ২টি (১টি উন্নয়ন ও ১টি অনুসন্ধান) কূপ খননের পরিকল্পনা গ্রহণ করত তদানুযায়ী ডিপিপি প্রণয়নের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ ছাড়াও এসজিএফএল’র অন্তর্গত হরিপুর গ্যাস ফিল্ডে সিলেট-১০ কূপ খননের সময় উক্ত এলাকায় জ্বালানি তেলের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। হরিপুর স্ট্রাকচারে মজুতকৃত জ্বালানি তেলের বাণিজ্যিক ভাবে উত্তোলন নিশ্চিত হওয়ার লক্ষ্যে সিলেট-১২ তেল কূপ খননের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। 

সংস্থাটি জানায়, দেশের সর্ববৃহৎ দ্বীপ ভোলা এলাকায় প্রাপ্ত গ্যাসের মজুত ও বিস্তৃতি নির্ণয়ের লক্ষ্যে ওই এলাকায় আরও ১৯টি নতুন কূপ খননের লক্ষ্যে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ভোলা এলাকায় প্রাপ্ত গ্যাস জাতীয় গ্যাস গ্রিডের সঙ্গে সংযুক্ত করার লক্ষ্যে ভোলা-বরিশাল ও ভোলা-খুলনা পাইপলাইন নির্মাণের নিমিত্ত ফিজিবিলিটি স্টাডি চলমান রয়েছে। খননতব্য কূপসমূহের সফল সমাপ্তি ও পাইপলাইন স্থাপন শেষে ভোলার গ্যাস জাতীয় গ্যাস গ্রিডের সঙ্গে সংযুক্ত করা সম্ভব হবে, যা দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতি উন্নয়নে যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করবে। এ ছাড়াও আবিষ্কৃত ভূতাত্ত্বিক স্ট্রাকচারের গভীর স্তরে প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুত মূল্যায়নের লক্ষ্যে বিজিএফসিএল’র আওতায় তিতাস ও বাখরাবাদ গ্যাস ফিল্ডে ২টি এবং বাপেক্সের আওতায় শ্রীকাইল গ্যাস ফিল্ড ও মোবারকপুর স্ট্রাকচারে ২টিসহ মোট ৪টি গভীর কূপ খননের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন ব্লকে নতুন নতুন লিড/প্রসপেক্টসহ খননযোগ্য কূপের লোকেশন চিহ্নিতকরণের নিমিত্তে বাপেক্স, বিজিএফসিএল ও এসজিএফএল কর্তৃক স্ব স্ব ব্লকে সাইসমিক ডাটা আহরণ ও বিশ্লেষণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

পেট্রোবাংলা বলছে, কূপ খনন ও ওয়ার্কওভার কার্যক্রম সময়াবদ্ধ পরিকল্পনার মধ্যে সম্পন্ন করার নিমিত্তে বর্তমানে (অক্টোবর, ২০২৫) বাপেক্সের নিজস্ব ৫টি রিগ এবং চুক্তিভিত্তিক নিয়োজিত কোম্পানিসমূহের ২টি রিগসহ ৭টি রিগের মাধ্যমে খনন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বাপেক্স কর্তৃক খনন কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে বাপেক্সের বিদ্যমান ৫টি রিগের পাশাপাশি আরও ২টি নতুন রিগ ক্রয়ের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। 

উল্লেখ্য যে, ডিসেম্বর-২০২৫ এর মধ্যে টার্ন-কি পদ্ধতিতে বিজিএফসিএল’র সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক নিয়োজিত কোম্পানি ঈঈউঈ-এর আরও ২টি রিগের মাধ্যমে তিতাস-২৮ উন্নয়ন কূপ ও তিতাস-৩১ ডিপ অনুসন্ধান কূপের খনন কার্যক্রম শুরু করার প্রত্যয়ে পেট্রোবাংলা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ ছাড়াও ভোলা এলাকায় কূপ খননের লক্ষ্যে বাপেক্স এবং তৃতীয় পক্ষীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ঝরহড়ঢ়বপ, ঈযরহধ-এর সঙ্গে শিগগিরই চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। ফলে ভোলা এলাকায় কূপ খননের লক্ষ্যে আরও একটি রিগ নিয়োজিত হবে।  পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করে বলেন,  ডিসেম্বর-২০২৫-এর মধ্যে বাপেক্সের ৫টি রিগ এবং চুক্তিভিত্তিক নিয়োজিত কোম্পানিসমূহের ৫টি রিগসহ মোট ১০টি রিগের মাধ্যমে একইসঙ্গে মোট ১০টি কূপের খনন ও ওয়ার্কওভার কার্যক্রম চলমান থাকবে।  উল্লিখিত ১০টি কূপের সফল সমাপ্তিতে আনুমানিক দৈনিক প্রায় ১২৭ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সংস্থান নিশ্চিত করা যাবে মর্মে আশা করা যায়। ফলে দেশের নিজস্ব গ্যাসক্ষেত্রসমূহ হতে উৎপাদিত প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে-যা দেশের গ্যাস সংকট হ্রাস করে দেশের অর্থনীতিতে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে রাষ্ট্রীয় এই সংস্থাটি মনে করে।
এদিকে, গত মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে দেশের গ্যাস সংকট মোকাবিলায় আলোচনা করা হয়। এতে চারটি মূল্যায়ন এবং একটি অনুসন্ধান কূপ খননের উদ্যোগ নেয়া হয়। এ জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা।