Image description
 

‘ওড়না কোথায়’-এই প্রশ্নকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে এক তরুণীকে হেনস্তার ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। কয়েকজন তরুণ প্রকাশ্যে ওই তরুণীকে আক্রমণ করেন, আর আশপাশের অনেকে মোবাইলে ভিডিও ধারণ করেন। পরে সেই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে অনলাইনে, যা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায় এবং সৃষ্টি করে ব্যাপক ক্ষোভ।

 

৩৮ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, রাস্তায় এক তরুণীকে ঘিরে তৈরি হয় ‘মব’ পরিস্থিতি। কয়েকজন তরুণ আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে এগিয়ে গিয়ে ‘ওড়না’ প্রসঙ্গে নানা প্রশ্ন করতে থাকে। একপর্যায়ে তারা তরুণীর দিকে আপত্তিকর অঙ্গভঙ্গি করে এবং তার ধর্মীয় পরিচয় নিয়েও প্রশ্ন তোলে।

তবে ভিডিওটি কোথায়, কখন এবং কারা যুক্ত ছিল, সে বিষয়ে এখনও কোনো বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকেও এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য আসেনি।

 

এদিকে ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকেই এই আচরণকে “উগ্রতা” ও “নারী অবমাননার জঘন্য উদাহরণ” হিসেবে উল্লেখ করে অভিযুক্তদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।

 

এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, “‘ওড়না কোথায়’ বলে একজন নারীকে হেনস্তা করা ব্যক্তিকে অবিলম্বে আইনের আওতায় আনা উচিত। নইলে অন্য উগ্র চিন্তার মানুষও এভাবে উৎসাহিত হবে। ‘ওড়না কোথায়’, ‘হিজাব কোথায়’, ‘নেকাব কোথায়’-এই ধরনের উগ্রতা ও নোংরামির বিরুদ্ধে আমাদের সামাজিকভাবে দাঁড়াতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলো সভা-সেমিনারে বলে থাকে যে, তাদের রাষ্ট্রকল্পে ওড়না, হিজাব, নিকাব বাধ্যতামূলক নয়। এখন সেটার বাস্তব প্রমাণ আমরা দেখতে চাই।”

একইভাবে, সামাজিক কর্মী সাদিক মাহবুব ইসলাম তার ফেসবুকে লিখেছেন, “রাস্তায় এক নারী বুকে ওড়না না দেওয়ায় তাকে ঘিরে হেনস্তা করার একটি ভিডিও সামনে এসেছে। এর আগে জেমসের কনসার্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সব কিছুই হচ্ছে ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি করে। এসব অপরাধের একটাই জাস্টিফিকেশন তৈরি করা হচ্ছে—অপরাধকে জায়েজ করার জন্য।”

তিনি আরও যোগ করেন, “এই ঘটনাগুলো প্রমাণ করে, মাঠপর্যায়ে আইন প্রয়োগ দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং এক শ্রেণির মানুষ তা সুযোগ হিসেবে নিচ্ছে। এটা দেশের জন্য কোনোভাবেই শুভ নয়।”

সামাজিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরনের ঘটনা সমাজে অসহিষ্ণুতা ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার নতুন রূপ তুলে ধরছে। তারা মনে করছেন, এমন ঘটনার দ্রুত তদন্ত ও কঠোর আইনগত ব্যবস্থা না নিলে, ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ সামাজিক পরিণতি দেখা দিতে পারে।