
Sabina Ahmed (সাবিনা আহমেদ)
দেশ থেকে একজন শেখ হাসিনা বিদায় নিয়েছে, কিন্তু আমরা চাই না যে দেশে আরেকটি স্বৈরশাসকের উদয় ঘটুক। হাসিনার শাসনকালে যে অত্যাচার, enforced disappearances এবং রাজনৈতিক দমন দেখা গেছে, তা থেকে শিক্ষা নেয়া উচিত। যদি সেনাবাহিনী এখনও পুরোনো লয়ালটি ধরে রাখে, তাহলে নতুন সরকারও একই পথে হাঁটতে বাধ্য হবে।
পুরোনো দোষীদের শাস্তি না দিলে, নতুনরা একই কাজ করার সাহস পাবে। তাই, গণতন্ত্রের সুরক্ষার জন্য দোষীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা জরুরি।
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের উচিত হবে যেসব অফিসারদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে, তাদের গ্রেফতারে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা। কিন্তু যদি তিনি না করেন, তাহলে এটি তার নিজের হাসিনা-যুগের লয়ালটির প্রমাণ দেয়।
স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠছে যদি সেনাপ্রধান নিজে জড়িত না হন, তাহলে কেন অ্যারেস্টে বিলম্ব? পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত থাকা সত্ত্বেও কিছু জেনারেল ইতিমধ্যে ইন্ডিয়ায় পালিয়েছে—যা সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ সহযোগিতার ইঙ্গিত দেয়।
সামরিক বাহিনীকে তার মূল দায়িত্ব—দেশের সীমান্ত রক্ষা এবং জাতীয় নিরাপত্তা বজায় রাখা—এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত। কিন্তু যখন তারা রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে, তখন দেশে ন্যায়ের শাসনের কোনো অস্তিত্ব থাকে না। দেশ হয়ে উঠে মাফিয়া রাজ্য।
সেনাবাহিনীর হাতে রয়েছে সবচেয়ে মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র এবং সিস্টেম, যা তারা ব্যবহার করে জনগণকে ভয়ভীতি দেখাতে পারে এবং স্বৈরশাসককে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে পারে। এটি তখন এমন একটি চক্র তৈরি করে যেখানে স্বৈরশাসক সামরিক বাহিনীকে নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে ব্যবহার করে, সামরিক বাহিনীকে রাজনৈতিক হাতিয়ারে পরিণত করে; বিনিময়ে সামরিক বাহিনী ব্যক্তিগত আর রাজনৈতিক সুবিধা পায়। এই দুয়ের মাঝে পড়ে জনগণের অধিকার—যেমন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বা নিরপেক্ষ বিচার—হারিয়ে যায়।
সেনাবাহিনীকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখা না গেলে, দেশে সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা অসম্ভব। আর তার জন্য দোষী অফিসারদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। যারা মনে করে, এদের দেশ থেকে চলে যেতে দাও, ঘটনাগুলো চেপে যাও, তারা ব্যাপারটার ভয়াবহতা হয় বুঝতে পারছেন না, না হয় ভীতু, অথবা নিজেরাও ভবিষ্যতে আরেক হাসিনা হওয়ার খায়েশ রাখেন।
আমরা অবশ্যই একটা শক্তিশালী সামরিক বাহিনী চাই, সেই সামরিক বাহিনী যারা আমাদের সীমান্ত আর দেশকে বাহিরের শত্রুমুক্ত রাখবে। কেউ আমাদের দেশে ঢুকে দেশকে অস্থিতিশীল করে দেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে খেলা করবে না। আমরাও হতে চাই দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী রাষ্ট্র।
কিন্তু দোষী অফিসারদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড়াতেই হবে, তাদের সাজা পেতেই হবে, দেশকে আইনের রাষ্ট্রে পরিণত হতেই হবে, তাহলেই একমাত্র গণতন্ত্র রক্ষা পাবে।
তা না হলে মগের মুল্লুক হওয়ার জন্য তৈরি থাকুন।