Image description

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সঙ্গে জোট করার পক্ষে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রায় অর্ধেক কেন্দ্রীয় নেতা।

বাকি অর্ধেক কেন্দ্রীয় সদস্যের চাওয়া জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোট করা, বিএনপি ছাড়া একটি বৃহত্তর মধ্যপন্থী জোট গঠন করা কিংবা এককভাবে নির্বাচন করা।

এনসিপি সূত্র জানায়, সম্প্রতি দলের এক নির্বাহী কমিটির সভায় অর্ধেক নেতা বিএনপির সঙ্গে জোট করার এবং নির্বাচনের আগে আসন ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা চূড়ান্ত করার প্রস্তাব দিয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শীর্ষ এনসিপি নেতা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের দলের অর্ধেক নেতা বিএনপির সঙ্গে জোটে যাওয়ার পক্ষে। আমরা অন্যান্য বিকল্পও নিয়েও আলোচনা করছি।'

জোট করতে চাওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এই নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সংসদে এনসিপির অংশগ্রহণ অপরিহার্য। কিন্তু আমাদের দল এখনো বিএনপি বা জামায়াতের মতো রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী হয়ে ওঠেনি।'

তিনি বলেন, 'যদি আমরা কোনো আসন না পাই, তাহলে সরাসরি এনসিপির মূল এজেন্ডাগুলো—যেমন: সাংবিধানিক সংস্কার, জুলাই সনদের বাস্তবায়ন, নতুন রাষ্ট্র গঠন—তুলে ধরতে পারব না। সংসদে না যেতে পারলে এই দাবিগুলো কার্যকরভাবে তুলে ধরা বা বাস্তবায়ন করা যাবে না। তাই এনসিপি বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকতে পারে না, অবশ্যই অন্য দলের সঙ্গে জোট করতে হবে।'

এনসিপি নেতারা ইতোমধ্যেই আসন ভাগাভাগি নিয়ে বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তাদের মধ্যে কিছু নেতা বিকল্প হিসেবে একটি বৃহত্তর জোট গঠনের জন্য সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছেন।

গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব আ স ম আবদুর রবের বাসভবনে এনসিপির সিনিয়র নেতারা আমার বাংলাদেশ পার্টি, গণ অধিকার পরিষদ ও ছয় দলীয় গণতন্ত্র মঞ্চ জোটের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করেছেন। তারা বিএনপির সঙ্গে এবং তাদের বাইরে সম্ভাব্য জোট নিয়ে আলোচনা করেছেন বলে বৈঠকের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে।

এই নয়টি দল বিএনপিকে ছাড়াই একটি মধ্যপন্থী জোট গঠনের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করলেও কয়েকটি দল বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হতে আগ্রহী বলে বৈঠক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

গণসংহতি আন্দোলন, নাগরিক ঐক্য, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও জাসদ (রব) নিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চ গঠিত।

বিএনপির সঙ্গে আসন ভাগাভাগি বিষয়ে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, 'আসন ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা চলছে। এখনও কিছুই চূড়ান্ত হয়নি। আরও আলোচনা হবে।'

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না দ্য ডেইলি স্টারকে তার অভিপ্রায় নিশ্চিত করে বলেন, 'আমরা বিএনপির সঙ্গে আছি এবং শুরু থেকেই একসঙ্গে আন্দোলন করছি। কাজেই আমরা পরবর্তী সরকার গঠনে সহযোগিতা করব। আমরা প্রার্থী চূড়ান্ত করার পর বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করব। আগামী তিনদিনের মধ্যে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবো।'

গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, 'রাজনৈতিক দলগুলো যখন একসঙ্গে বসে, তখন জোট নিয়ে অনেক ধরণের আলোচনা হয়। আমরা বিএনপি, এমনকি জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোট করার সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেছি। নিজেদের মধ্যে জোট করার বিষয়েও আলাপ হয়েছে।'

এবি পার্টি সূত্র জানিয়েছে, তারা বিএনপিকে বাদ দিয়ে একটি মধ্যপন্থী জোট গঠনের জন্য চাপ দিচ্ছে। তাদের লক্ষ্য সেই ভোটাররা, যারা বিএনপি ও জামায়াতকে ভোট দেবে না।

দলটির একজন সিনিয়র নেতা বলেছেন, 'বিপ্লবের চেতনাকে ঐক্যবদ্ধ করা ও জীবিত রাখার জন্য এই পরিকল্পনা।'

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সদস্যসচিব দিদারুল ভূঁইয়া বলেন, 'গণতন্ত্র মঞ্চের কিছু রাজনৈতিক দল যদি বিএনপির সঙ্গে জোট বাধতে চায়, তাহলে আমরা আলাদা হয়ে যাব। তখন হয়তো অন্য জোট করব। আমরা বিএনপি ও জামায়াতের বাইরে জোট গঠন করতে আগ্রহী।'

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত নয়।