
বাণিজ্যিকভাবে চালু হওয়ার অপেক্ষায় আছে বাংলাদেশের একমাত্র পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রূপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট (এনপিপি)। তবে পর্যবেক্ষণ বলছে এখনো নিরাপত্তা ত্রুটি কাটিয়ে উঠতে পারেনি এই প্রকল্প। সেখানে এখনো গুরুতর নিরাপত্তা ত্রুটি রয়েছে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রি-অপারেশনাল সেফটি রিভিউ টিম। ১০ থেকে ২৭শে আগস্ট রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শনে আসেন সংস্থাটির ১৪ জনের বিশেষ একটি দল। এ বিষয়ে একটি টেকনিক্যাল নোটস দিয়েছেন তারা। যেখানে মোট ১৭টি নিরাপত্তা ইস্যু চিহ্নিত করা হয়েছে। যার মধ্যে ১৩টি সরাসরি সুপারিশ এবং ৪টি পরামর্শ অন্তর্ভুক্ত।
আইএইএ’র প্রতিনিধিদলের রিপোর্ট অনুযায়ী রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা, পরিচালনার মান এবং কমিশনিংয়ের সময় সরঞ্জাম সংরক্ষণে বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে। এক্ষেত্রে তিনটি বিষয়ের ওপর অধিক জোর দেয়ার তাগিদ দেয়া হয়েছে। কেননা, ত্রুটিগুলো কেন্দ্রের নিরাপদ অপারেশনের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে। ওই নোটে বলা হয়, প্ল্যান্টের অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়। এতে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি কার্যকরভাবে প্রশমিত করা বা জরুরি পরিস্থিতিতে যথাযথভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব হবে না। এর পাশাপাশি বিদ্যুৎকেন্দ্রের অপারেশন তত্ত্বাবধান, মান এবং কর্মীদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য যথেষ্ট মানসম্পন্ন নয়। অপারেশনাল স্ট্যান্ডার্ডের ক্ষেত্রে বড় ধরনের উন্নতির প্রয়োজন রয়েছে। এ ছাড়া কমিশনিংয়ের সময় সরঞ্জাম সংরক্ষণের (ইকুইপমেন্ট প্রিজারভেশন) ব্যবস্থা অপর্যাপ্ত বলেও জানানো হয়েছে। ফলে গুরুত্বপূর্ণ সিস্টেম ও যন্ত্রাংশগুলোর পর্যাপ্ত সুরক্ষা নিশ্চিত করা হচ্ছে না। এতে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেগুলোর অবনতি হতে পারে। অন্যদিকে চুল্লির নিরাপত্তামূলক কার্যকারিতাকেও প্রভাবিত করতে পারে।
বুলগেরিয়া, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, বৃটেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ ৮টি দেশের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত এই দলটি ১১টি ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে পর্যালোচনা দিয়েছে। তাদের পর্যালোচনার মধ্যে রয়েছে- নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা, প্রশিক্ষণ, অপারেশনস, রক্ষণাবেক্ষণ, জরুরি প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়া, এবং কমিশনিং পর্যালোচনা। পারমাণবিক বিদ্যুৎ কার্যক্রমে এই দলটির সমন্বিত অভিজ্ঞতা ৩৯৬ বছরের। গুরুতর সমস্যাগুলোর মধ্যেও একটি ভালো দিক খুঁজে পেয়েছে আইএইএ। তা হলো অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ সুবিধা। রূপপুর ট্রেনিং সেন্টারে রিফুয়েলিং মেশিন পরিচালনার প্রশিক্ষণের জন্য একটি অত্যাধুনিক সিমুলেটর স্থাপন করা হয়েছে। যার প্রশংসা করেছেন বিশেষজ্ঞ দলটি। এদিকে আইএইএ’র চিহ্নিত সমস্যা আমলে নিয়ে দ্রুত সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে রূপপুর কর্তৃপক্ষ। আগামী ১৮ থেকে ২৪ মাসের মধ্যে একটি ফলোআপ পরিদর্শনে আসতে পারে আইএইএ’র বিশেষ ওই দল। বিশেষজ্ঞদের এই রিপোর্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রকল্পের নিরাপত্তা মান নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। যা প্রকল্পটির জ্বালানি লোডিংয়ের আগে দ্রুত সমাধান করা প্রয়োজন বলে মনে করে বিশ্লেষকরা।