Image description

বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড কেন্দ্র করে ৬ বছর আগে উত্তাল হয়েছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। সে সময় প্রতিবাদ-বিক্ষোভে সোচ্চার হয়েছিল দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনও। এর জের ধরেই তীব্র আন্দোলনের মুখে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ হয়। এছাড়াও সে সময় সরকারবিরোধী যে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল সেখানেও মিছিল, ব্যানার, প্ল্যাকার্ড, পোস্টার ও স্লোগানে আবরার ফাহাদের নাম বারবার উঠে আসে।

আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনের সময় যে কয়েকটি ঘটনায় দলটির সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগ তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিল আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড তার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন অনেকে। একই সঙ্গে আবরার হয়ে ওঠেন ‘ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী’ আন্দোলনের একটি প্রতীকে।

৬ বছর আগে ২০১৯ সালের অক্টোবরে আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় দণ্ডিত আসামি ও অন্যদের করা আপিল আবেদন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। আবরার ফাহাদের পরিবার হাইকোর্টের আদেশই আপিল বিভাগে বহাল থাকবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করছেন। অন্যদিকে আসামিপক্ষ মনে করছেন, তারা আপিল বিভাগে ন্যায়বিচার পাবেন।

চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায়
এ বিষয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান দুলু জাগো নিউজকে বলেন, হাইকোর্টের রায়ে আমাদের আসামিপক্ষের কেউই সন্তুষ্ট না। রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল আবেদন করেছি। আপিল বিভাগের শুনানিতে আসামিদের সাজা কমানোর বিষয়ে যুক্তিতর্ক তুলে ধরবো। আশা করি সর্বোচ্চ আদালতে ন্যায় বিচার পাবো।

 

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা আশা প্রকাশ করে বলেছেন, আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় আপিল বিভাগে হাইকোর্টের রায় বহাল থাকবে। আপিল বিভাগের রায়ের পর সাজা কার্যকরে কোনো বাধা থাকবে না। তাই বহুল আলোচিত আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতের ২০ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহালে করে যে রায় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট, ওই রায় কার্যকর করতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের শুনানির জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। শুনানি শেষেই চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হবে মামলাটি।

প্রস্তুত হয়নি পেপারবুক
এদিকে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় আসামিদের আপিল শুনানির জন্য পেপারবুক এখনও পুরো পুরি প্রস্তুত হয়নি। পেপারবুক প্রস্তুত হলে নিয়ম অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টে আপিল শুনানি শুরু হবে।

আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদে স্মরণসভা ও স্মৃতি স্তম্ভের উদ্‌বোধন হবে
এদিকে আবরার ফাহাদের ভাই আবরার ফাইয়াজ জানিয়েছেন, আবরার ফাহাদের ষষ্ঠ শাহাদাত বার্ষিকীতে রাজধানীর পলাশী চত্বরে মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) আগ্রাসনবিরোধী ৮ স্তম্ভের উদ্‌বোধন করা হবে। আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদ আয়োজিত স্মরণসভা ও স্মৃতি স্তম্ভের উদ্‌বোধন করবেন আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ।

ঘটনার সূত্রপাত
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অসম চুক্তি এবং পানি আগ্রাসন নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাসের জেরে বুয়েটের শেরে বাংলা হলের আবাসিক ছাত্র ও তড়িৎকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে নিয়ে নৃশংস কায়দায় পিটিয়ে হত্যা করে সংগঠনটির ক্যাডাররা। পরে রাত ৩টার দিকে শেরে বাংলা হলের সিঁড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

এ ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে পর দিন ৭ অক্টোবর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ।

চার্জশিট ও রায় ঘোষণা
মাত্র ৩৭ দিনে তদন্ত শেষ করে একই বছরের ১৩ নভেম্বর চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক মো. ওয়াহিদুজ্জামান।

২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান ওই রায় ঘোষণা করেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- মেহেদী হাসান রাসেল, মো. অনিক সরকার ওরফে অপু, মেহেদী হাসান রবিন ওরফে শান্ত, ইফতি মোশাররফ সকাল, মো. মনিরুজ্জামান মনির, মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, মো. মাজেদুর রহমান মাজেদ, মো. মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ, খন্দকার তাবাকারুল ইসলাম ওরফে তানভির, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মো. শামীম বিল্লাহ, মো. সাদাত এ এস এম নাজমুস সাদাত, মুনতাসির আল জেমী, মো. মিজানুর রহমান মিজান, এস এম মাহমুদ সেতু, সামসুল আরেফিন রাফাত, মো. মোর্শেদ ওরফে মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম, এহতেশামুল রাব্বি অরফে তানিম, মোহাম্মদ মোর্শেদ উজ্জামান মণ্ডল প্রকাশ জিসান, মুজতবা রাফিদ।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- অমিত সাহা, ইসতিয়াক আহমেদ মুন্না, মো. আকাশ হোসেন, মুহতাসিম ফুয়াদ ও মো. মোয়াজ ওরফে মোয়াজ আবু হোরায়রা।

ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে
২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি এ মামলার ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে এসে পৌঁছায়। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে ৬ হাজার ৬২৭ পৃষ্ঠার ডেথ রেফারেন্স ও মামলার যাবতীয় নথি হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখায় পাঠানো হয়।

ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসারে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলে তা অনুমোদনের জন্য মামলার যাবতীয় কার্যক্রম উচ্চ আদালতে পাঠাতে হয়। দণ্ডিত আসামিরা উচ্চ আদালতে ফৌজদারি আপিল এবং জেল আপিল করতে পারেন।

পরে কারাবন্দি আসামিরা জেল আপিল করেন। পাশাপাশি অনেক আসামি ফৌজদারি আপিল আবেদন করেন। ১০ ফেব্রুয়ারি আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শুরু হয় এবং ২৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়।

এ বছরের ১৬ মার্চ ওই মামলায় বিচারিক আদালতের দেওয়া ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রাখেন হাইকোর্টের বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ।

আসামিপক্ষের এক আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু জানান, হাইকোর্ট বিভাগে রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা আপিল করেছেন। তারা আশা করছেন আপিল বিভাগে ন্যায়বিচার পাবেন।