
অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশনের আস্থার সংকট দূর করার আহ্বান জানিয়েছেন গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা। তারা বলেছেন, গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ও কমিশনের প্রতি জনগণের বিশ্বাসহীনতা ও আস্থাহীনতার সৃষ্টি হয়েছে। ভালো নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে এই আস্থার সংকট দূর করতে হবে। সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন ছাড়া অভাব, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব হবে না।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিদের সংলাপে এমন মতামত উঠে আসে। এদিন প্রথম পর্বের সংলাপে বিভিন্ন টেলিভিশনের সম্পাদক, প্রধান বার্তা সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিক মিলিয়ে ১৯ জন প্রতিনিধি মতামত তুলে ধরেন। পরে দুপুর আড়াইটা থেকে শুরু হওয়া দ্বিতীয় পর্বের সংলাপে প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ার প্রতিনিধিরা অংশ নেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে সংলাপে চার নির্বাচন কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রথম পর্বের সংলাপের সমাপনী বক্তব্যে সিইসি নাসির উদ্দিন বলেন, প্রিজাইডিং অফিসারের ক্ষমতায়নে শুধুমাত্র আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিক প্রবেশে অনুমতির বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া কেন্দ্র থেকে সরাসরি সম্প্রচার ও স্বল্প সময় অবস্থানে কড়াকড়িও আইনগত বাধ্যবাধকতার কারণে করা হয়েছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) এর সঙ্গে সমন্বয় রেখে সাংবাদিকদের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদেরও এমন বিধান রাখা হয়েছে। আমাদের নিয়ত পরিষ্কার, ভুল বুঝবেন না। এর আগে সংলাপে বক্তব্য দিতে গিয়ে ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিক প্রবেশ অবাধ করার পাশাপাশি সরাসরি সম্প্রচার ও ১০ মিনিটের বেশি অবস্থানের সুযোগ রেখে বিদ্যমান সাংবাদিক নীতিমালা সংশোধনের দাবি তুলে ধরেন টিভি মিডিয়ার প্রতিনিধিরা। সিইসি বলেন, আপনারা আমাদের ভুল বুঝবেন না। এটা শুধু আরপিও লিগ্যাল রিকোয়ারমেন্ট। এটা শুধু ইনফর্ম করার ব্যাপার। প্র্যাকটিক্যাল কারণে এটা করা হয়েছে। আইনটাকে অনার করার জন্য করা হয়েছে। গণমাধ্যম আমাদের সোর্স অব ইনফরমেশন। দ্বিতীয় পর্বে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, সুন্দর ও স্বচ্ছ নির্বাচন করতে চাই — এই ঢোলটা একটু বাজিয়ে দেবেন। নিজের ঢোল নিজেরা বাজাতে চাই না। আমাদের পক্ষ হয়ে আপনারা (গণমাধ্যম) একটু বাজিয়ে দেন।
আমার দেশ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ বলেন, আমরা বাংলাদেশে মোট ১২টি নির্বাচন দেখেছি। এই ১২টির মধ্যে কয়েকটি ব্যতীত প্রতিটি নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। গত তিনটি নির্বাচন কোনোভাবে নির্বাচনের সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে না। তিনি বলেন, আমাদের প্রধান উপদেষ্টা তার স্বপ্ন প্রকাশ করেছেন যে তিনি ইতিহাসের একটি সুন্দর নির্বাচন দেখতে চান। আমরা আশা করি এই নির্বাচনটি সত্যিই সুন্দর হবে। তবে এটি নিশ্চিত করতে হলে নির্বাচন কমিশনকে সবচেয়ে সাহসী পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ আমাদের দেশে সরকার বা যেকোনো প্রতিষ্ঠান সচেতন না হওয়ায় পূর্ববর্তী প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। সৈয়দ আবদাল আহমেদ বলেন, আমাদের দু’জন সহকর্মী আগামী নির্বাচনে কালোটাকার দৌরাত্ম্য ও পেশীশক্তির ব্যাপক প্রভাব থাকবে বলে মত প্রকাশ করেছেন; তাদের এই বক্তব্যের সঙ্গে আমি দ্বিমত পোষণ করি।
তিনি বলেন, যদি নির্বাচন কমিশন তাদের ক্ষমতা সঠিকভাবে প্রয়োগ করেন, যেমন মেরুদণ্ড দৃঢ়ভাবে বজায় রাখার মাধ্যমে, তবে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। আমি চাই একটি ‘সুন্দর নির্বাচন’ এবং পার্লামেন্টের মতো একটি সুষ্ঠু সংসদ গঠন হবে, যেখানে সকল নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। এটি বাংলাদেশে আগে দেখা যায়নি। এবার নির্বাচনকে প্রতিযোগিতামূলক করতে নির্বাচন কমিশনকে এগিয়ে আসতে হবে। দলগুলোর প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা হলে ভোটাররা উৎসাহের সঙ্গে ভোট কেন্দ্রে আসবেন। অতীত তিন নির্বাচনে মানুষের ভোট দেওয়ার সুযোগ ছিল না, কিন্তু এবার তা ভিন্ন হবে।
তিনি বলেন, আমার সহকর্মীর সঙ্গে আমি একমত, যে অতীতের মতো নির্বাচনে টাকা এবং রাজনৈতিক শক্তি খেলাধুলা করবে না তা নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষ করে, যদি কিছু দল এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে, তবে অনিয়মের আশঙ্কা ৬০-৭০% কমে যাবে। তিনি আরও বলেন, অর্থনৈতিক সেক্টর, বিশেষ করে ব্যাংকিং, বর্তমানে দেশ ভঙ্গুর অবস্থায় আছে। তাই আমাদের সতর্ক থাকা জরুরি। ট্রান্সপারেন্ট নির্বাচন নিশ্চিত করতে মিডিয়াকে সহযোগী হিসেবে নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মিডিয়া যদি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে, তবে আমরা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সক্ষম হব।
কালের কণ্ঠ’ সম্পাদক ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি কবি হাসান হাফিজ বলেন, আগামী এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনিয়ম ঠেকাতে সামাজিক কমিটি গঠন করে তার মাধ্যমে পরিস্থিতি নজরদারি করতে হবে। যে কমিটিতে রাজনৈতিক দলের কেউ থাকবে না। তিনি বলেন, এ রকম সুযোগ আমরা পাই না। যেরকম ছাত্র-জনতার যে সর্বব্যাপী যে অভ্যুত্থান হয়েছে তাদের রক্তের সঙ্গে আমরা যেন বেঈমানি না করি। সেটা আপনাদের কাছ থেকে আমরা আশা করবো। আপনারা ব্যক্তি মানুষ নন। আপনারা কিন্তু আমরা দর্পণ, আপনারা হচ্ছেন অক্সিজেন। আপনাদের ছাড়া দেশের স্থীতি আসবে না। গণতান্ত্রিক অভিযাত্রাটা সফল হবে না। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির চর্চার লালন, বিকাশ কিছুই হবে না। এ রকম যে আমরা সুযোগ পেয়েছি একটা দেশকে নতুন করে গড়ে তোলার।
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম-এর সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু বলেন, রাজনৈতিক চাপ’ না থাকায় অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে কোনো বাধা নেই।রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে নির্বাচন কীভাবে হবে। রাজনৈতিক ক্ষমতাই ইসির ক্ষমতাকে নির্ধারণ করে। গত তিন টার্মে সেটাই হয়েছে। যে কারণে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি বা করা যায়নি। অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা মেইলের নির্বাহী সম্পাদক হারুন জামিল বলেছেন, গত তিনটি নির্বাচন ভোটারবিহীন হওয়ায় নির্বাচনের প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট হয়ে গেছে। এ আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারলেই নির্বাচন কমিশন সফল হবে।
প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ তার বক্তব্যে নির্বাচনের বিভিন্ন দিক নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, জাতি ১৫ বছর পর একটি স্বচ্ছ ও আনন্দময় নির্বাচনের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে, এবারের নির্বাচনে অর্থ ও পেশিশক্তির ব্যাপক প্রয়োগের আশঙ্কা রয়েছে। তিনি প্রশাসনের দুর্বলতা ও আন্ডারহ্যান্ডলিংয়ের মাধ্যমে প্রার্থী কেনা-বেচার মতো বিষয়গুলো নিয়ে ইসির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
সাজ্জাদ শরিফ বিশেষভাবে ডিজিটাল স্পেসে অর্থ প্রয়োগের মাধ্যমে জনমত তৈরির বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সাবেক ক্ষমতাসীন দল একটি বিরাট ডিজিটাল বাহিনী গড়ে তুলেছিল এবং এবারের নির্বাচনে এর ব্যাপক ব্যবহারের আশঙ্কা রয়েছে। তিনি হলফনামা ও নির্বাচনী ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়ে বলেন, ইসিকে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে হবে এবং দু-একটি ক্ষেত্রে নজির স্থাপন করে নৈতিক শক্তির পরিচয় দিতে হবে।
আজকের পত্রিকার সম্পাদক কামরুল হাসান প্রার্থীর হলফনামা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা ওয়েবসাইটে আপলোড করার দাবি জানান। তিনি বলেন, এতে ভোটাররা প্রার্থীর সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য দ্রুত জানতে পারবে। একই সঙ্গে তিনি নির্বাচন কমিশনকে কোনো ধরনের গোপন নির্দেশনা না দেওয়ার অনুরোধ করেন, যা স্বচ্ছ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতিকে ক্ষুণ্ণ করতে পারে।
দ্য ডেইলি স্টারের হেড অব নিউজ জিয়াউল হক ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকদের অবাধ প্রবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানান। তিনি বলেন, সাংবাদিকরা যেন ভোটকেন্দ্রের ভেতরে কোনো ধরনের বাধা বা হয়রানির শিকার না হন এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।
ডিবিসি টেলিভিশনের সম্পাদক লোটন একরাম বলেন, ভোটের সময় গণমাধ্যমের জন্য প্রণীত নীতিমালা সংশোধন করতে হবে। অনিয়ম হলেও কেন্দ্রের ভেতরে সরাসরি সম্প্রচারে মানা, দশ মিনিটের অবস্থান করার বিষয়টি স্বচ্ছ নির্বাচনে বাধা হবে। বিদ্যমান আইন পরিস্থিতিতে সবার জন্য সুযোগ তৈরি করা ইসির জন্য চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন তিনি। বলেন, সাংবাদিকদের প্রতিপক্ষ ভাবা হলে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন করা কঠিন হয়ে যায়। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমকে সহায়তার বিকল্প নেই। গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর অনিয়মের বিষয়গুলো আমলে না নিলে নির্বাচন অতীতের মতো প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
এ সাংবাদিক জানান, প্রশাসনসহ সর্বস্তরে দায়সারা কাজ হচ্ছে। লেভেল প্লেয়িং তৈরি করতে তফসিল ঘোষণার আগে এখন থেকেই কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। নির্বাচনী ব্যয় তদারকি, হলফনামার সঠিকতা যাচাইয়ে তৎপর থাকতে হবে ইসিকে। সোশাল মিডিয়ায় অপতথ্য নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
এটিএন নিউজের শহিদুল আজম জানান, উৎসবমুখর পরিবেশ নিশ্চিতের ভোটারসহ জনগণের সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। সবার জন্য সমান করতে আচরণবিধি প্রতিপালনে ইসির ভূমিকা দৃশ্যমান হতে হবে।
তিনি বলেন, ফলাফলের সময়টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিবন্ধিত গণমাধ্যমকে অনেক ধরনের নিয়মনীতি মানতে হয়। অনিবন্ধিত গণমাধ্যম, ফেসবুক, ইউটিউব আটকানো যাবে না। অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে, বিলম্বিত তথ্য কাম্য নয়। জন-সম্পৃক্ততা ও উৎসবমুখর নির্বাচন হলে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর কাজকর্মও কমে যায়।
স্টার নিউজের হেড অব নিউজ ওয়ালিউর রহমান মিরাজ জানান, গত ২০০৮ সালের পর নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা ও ইসির আস্থা নষ্ট হয়ে গেছে। ইসির স্বাধীনতা কতটুকু ব্যবহার করতে পারছেন সেটা দেখার বিষয়।
তিনি বলেন, বর্তমান ইসি এখন পর্যন্ত আন-টেস্টেড। ইসির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ভালো নির্বাচন করা। ইসির ওপর আস্থা কতটকু আছে; তা প্রশ্ন রয়ে গেছে। এ ইসি এমন বড় নির্বাচন করার জন্য কতটুকু প্রস্তুত, আমরা জানি না। বিশ্বাসযোগ্যতা ও আস্থা ফেরানোটা এখন ইসির দায়িত্ব। প্রশাসন ও পুলিশের ওপর নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে হবে। এখন ইসির দায়িত্ব মানুষের কনফিডেন্স ফিরিয়ে আনা।
ভোটের দিন সকালে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠানোর পরামর্শ দেন একাত্তর টিভির সিইও শফিক আহমেদ। তিনি বলেন, ইসির নিজস্ব নির্বাচন কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব দেওয়ার পাশাপাশি ‘ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার’ দেওয়া যেতে পারে। সিইসি ও ইসির মর্যাদা মন্ত্রীর উপরে রাখা, মনোনয়ন বাণিজ্য বন্ধ এবং মিথ্যা তথ্য, অপতথ্য রোধে সহায়তার পাশাপাশি গণমাধ্যমকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানান শফিক আহমেদ।
যমুনা টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ভোটকেন্দ্রে গণমাধ্যমের প্রবেশাধিকার অবারিত করতে হবে। কমিশন সব কাজে স্বচ্ছ থাকতে চাই মুখে বললেও মাঠে তা দৃশ্যমান করতে হবে। ভোটে অনিয়মে বাধা দিলে নির্বাচন কর্মকর্তারা হেনস্তার শিকার হবে না, এটা নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, খেলোয়াড়রা ফাউল করবেই। খেলার সৌন্দর্য মোটাদাগের কথা। আয়োজকের অংশ হিসেবে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। কারা খেলছে যায় আসে না, আপনারা রোবট হয়ে যান পক্ষপাতহীনভাবে; আপনারা ফেয়ার থাকবেন। ইসি যতই স্বচ্ছতার কথা বলুক, মাঠ কন্ট্রোল করা খুবই কঠিন। আমলাতন্ত্র আস্থাহীনতায় চলে গেছে, এ বাস্তবতায় চলতে হবে।
ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির মোস্তফা আকমল বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। সেক্ষেত্রে ইসিকে গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে কীভাবে তা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
নির্বাচন কমিশন কেন্দ্রীয় ও ভোট কেন্দ্র থেকে যত দ্রুত সঠিক তথ্য সরবরাহ করবে তত দ্রুত গুজব, অপতথ্য রোধ করা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।
গ্লোবাল টিভির ফেরদৌস মামুন বলেন, আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর ওপর এখন পর্যন্ত পুরোপুরি আস্থা আসেনি। আগামী নির্বাচন অনেক বেশি কঠিন হবে। এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ইসির পদক্ষেপ নিতে হবে।
তিনি বলেন, ডিজিটাল মিডিয়া এখন গুজবের আখড়া হয়ে গেছে। এটা নিয়ন্ত্রণে ইসিকে একটা কাঠামো তৈরি করতে হবে। ভোট গণনা দেরি হলে গুজব বাড়ে, উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গণনা শেষ করতে হবে।
চ্যানেল আইয়ের জাহিদ নেওয়াজ খান বলেন, পোস্টাল ব্যালটে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোট নেওয়ার ভালো সক্ষমতা কিনা এবং দূতাবাসের আন্তরিকতা রয়েছে কিনা সংশয় রয়েছে। লেভেল প্লেয়িং তৈরিতে ইসিকে সক্রিয় থাকতে হবে। এবারের নির্বাচনে এআইয়ের অপব্যবহার রোধ চ্যালেঞ্জ হবে। সোশাল মিডিয়া তো বন্ধ করা যাবে না; তা মোকাবেলায় তৎপর থাকতে হবে।
গ্রিন টিভির মাহমুদ হাসান বলেন, আইনশৃঙ্খলার যে নাজুক পরিস্থিতি; তাতে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার না হলে ইসি কীভাবে রোধ করতে পারবে, তা ভেবে দেখতে হবে। সাবেক সিইসিকে আটক করা হয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের যারা অনিয়মে সম্পৃক্ত ছিল তাদের বিরুদ্ধে এখনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সমতল মাঠ তৈরি কীভাবে সম্ভব? আমরা দেখছি না- অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, কালোটাকা বন্ধ করার উদ্যোগ দেখছি না। অতীতে অনিয়মে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে ইসিকে আশ্বস্ত করতে হবে জনগণকে। ইসিকে শক্তিশালী অবস্থান নিতে হবে।
জিটিভির গাউছুল আজম বিপু বলেন, বর্তমান ইসি কঠিন সময়ে দায়িত্ব নিয়েছেন। এখন সবার প্রশ্ন নির্বাচন হবে তো? সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। খুব দ্রুত সচেনতামূলক প্রোগ্রাম শুরু করতে হবে। সাধারণ মানুষ যেন ভোট দিতে আসে, উপস্থিতি যেন বাড়ে- তা নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচন ভালো না হলে ইসি হেরে যাবে; সঠিক তথ্য কমিশনকে জানাতে হবে।
দীপ্ত টিভির এস এম আকাশ বলেন, ইসির আন্তরিকতা নিয়ে সন্দেহ নেই। সেই সঙ্গে অংশীজনদের সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে। আয়নার মতো স্বচ্ছ নির্বাচন করতে হলে সাংবাদিক নীতিমালা গণমাধ্যমবান্ধব করতে হবে। গুজব রোধে ইসির ফ্যাক্ট চেকিং টিম করতে হবে। গণমাধ্যম বৈরি হলে ইসির অনেক উদ্যোগ ব্যর্থ হতে পারে বলে জানান তিনি।
সময় টিভির জহুরুল ইসলাম জনি বলেন, দেশের মানুষ উৎসবমুখর ভোটের অপেক্ষায় এবং সুষ্ঠু ভোট আয়োজনই ইসির বড় চ্যালেঞ্জ। সেক্ষেত্রে সবাই যেন সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব ও নিরপেক্ষতা পালন করে ইসি যেন কঠোর ভূমিকা পালন করে।
নিউজ টোয়েন্টিফোরের শরিফুল ইসলাম খান বলেন, আইনের মধ্য থেকে ইসিকে কাজ করতে হবে এবং জনআস্থা তৈরি করতে হবে। দায় আর দায়িত্ব দুটোই পালন করতে হবে। ইসির জন্য বড় সঙ্কট সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করা। ভোট উৎসব থেকে হানাহানিতে পরিণত হয়েছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য এখন আস্থা অর্জনের ক্ষেত্রে ভালো নির্বাচনী পরিবেশের বিকল্প নেই।
মাছরাঙ্গা টিভির নিয়াজ মোর্শেদ বলেন, অনিয়ম হলে কেন্দ্র থেকে পুরো আসনের ভোট বাতিলের ক্ষমতা ইসির রয়েছে। অনেকে চাইবে পেশীশক্তি ব্যবহার করতে। আগামী নির্বাচনে আশঙ্কার বিষয় রয়েছে- সাংবাদিকদের ঠেকাতে অপ-তৎপরতা থাকতে পারে; তা রোধে ইসিকে সহযোগিতা করতে হবে।
আনন্দ টিভির জয়নাল আবেদীন বলেন, স্থানীয় প্রশাসন ভোটে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করে; তাদের অপচেষ্টা রোধে কঠোর হতে হবে ইসিকে।
এটিএন বাংলার একরামুল হক সায়েম বলেন, ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের আংশিকভাবে হলেও উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।
মাই টিভির মাহবুব সৈকত বলেন, সামনের নির্বাচনে যাতে কালো টাকার মালিক, মাদক কারবারি, ব্যাংক লুটেরা যেন নির্বাচনে আসতে না পারেন; তাদের আটকাতে হবে। নির্বাচন হচ্ছে ফাইনাল খেলা। ইসির আইন-বিধি প্রয়োগ এখনই শুরু করতে হবে।
বৈশাখী টিভির জিয়াউর কবীর সুমন বলেন, নির্বাচনে ফলাফল পেতে বিলম্ব হলে গুজব বাড়বে, সেক্ষেত্রে ইসির সঠিক তথ্য সরবরাহের বিকল্প নেই। তফসিল ঘোষণার পর থেকে ব্যাপক উদ্যোগ নিতে হবে ইসির। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে ইসির তৎপরতা বাড়তে হবে।
পরে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, অপতথ্য নিয়ে স্যোশাল মিডিয়ার ব্যবহার ও এআই অপব্যবহার এখন বৈশ্বিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবার এখন কমন কনসার্ন। আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জটা বুঝতে পারছি। অপতথ্য রোধে মূলধারার গণমাধ্যমই বড় ধরনের সহায়তা করতে হবে। বাস্তবতা হচ্ছে সঠিক তথ্যের অবাধ প্রবাহ। আমরা লিমিট করবো না; এতে ভালো ইনফরমেশনও বন্ধ হবে। সবকিছু বন্ধ হয়ে যাবে- এ ভাবনা মনে হয় না বাস্তব। কিছুটা সচেতনতা তৈরি হয়েছে। অপতথ্য রোধে কোনোভাবে ইন্টারনেট বন্ধ করা নয় বরং সঠিক তথ্যের অবাধ সরবরাহ বাড়ানো হবে বলে জানান তিনি।