Image description

ছুটি না নিয়ে লাপাত্তা হয়েছেন সিলেটের ৯১ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক । ছয়জন আবার ছুটি নিয়েও কর্মস্থলে ফেরেননি । পরে তাঁদের মধ্য থেকে ৬৮ জনকে বরখাস্ত করা হয় । বাকি ২৯ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা তদন্তাধীন রয়েছে । জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের লাপাত্তা হওয়ার এ তথ্য গত তিন বছরের । একই সময়ে চাকরি ছেড়েছেন ৯২ জন । খোঁজ নিয়ে জানা গেছে , লাপাত্তা হওয়া অধিকাংশই উন্নত জীবনের আশায় বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন ।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় জানায়, জেলায় ১ হাজার ৪৭৭ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় । এতে শিক্ষকের জন্য সৃষ্ট পদ রয়েছে সাড়ে ৭ হাজার । বর্তমানে ৮ শতাধিক পদ শূন্য । এমতাবস্থায় কোনো প্রকার ছুটি না নিয়ে ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন ৯১ সহকারী শিক্ষক । ছয়জন ছুটি নিয়ে পরে আর আসেননি । ছুটি না নিয়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা শিক্ষকদের মধ্যে একজন বালাগঞ্জের রাধাকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মৃণালিনী চক্রবর্তী ।

২০২৫ সালের মে মাসে তাঁকে বরখাস্ত করা হয় । এভাবে বাকিদের বিরুদ্ধেও মামলা করা হয় । এরই মধ্যে ৬৮ জনকে বরখাস্ত করা হয়েছে । বাকিদের মামলাও তদন্তাধীন । ছুটি নিয়ে গিয়ে লাপাত্তা হওয়া শিক্ষকদের মধ্যে গোয়াইনঘাট উপজেলার ৫ জন ও সিলেট সদরের ১ জন রয়েছেন । বাকি ৯১ জনের মধ্যে বিশ্বনাথে ১৬ , ওসমানীনগরে ১৩ , বিয়ানীবাজারে ১১ , সদরে ৯ , দক্ষিণ সুরমায় ৯ , বালাগঞ্জে ৮ , কানাইঘাটে ৭ , জকিগঞ্জে ৭ , গোলাপগঞ্জে ৪ , গোয়াইনঘাটে ৩ , ফেঞ্চুগঞ্জে ২ , কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুরে একজন করে । সিলেটে সবচেয়ে বেশি চাকরি ছেড়েছেন প্রবাসী - অধ্যুষিত বিয়ানীবাজার উপজেলার শিক্ষকেরা ।

সেখানে ২৬ জন শিক্ষক চাকরি ছেড়েছেন । আর গোলাপগঞ্জে ২০, জকিগঞ্জে ১৩, বালাগঞ্জে ৯, সদরে ৬, ফেঞ্চুগঞ্জে ৫ , গোয়াইনঘাটে ৩ , বিশ্বনাথ , কানাইঘাট , কোম্পানীগঞ্জ ও ওসমানীনগরে দুজন করে , জৈন্তাপুর ও দক্ষিণ সুরমায় একজন করে চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিয়েছেন ।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক , কর্মকর্তা - কর্মচারীরা জানান, সরকারি অন্য চাকরি বা অন্য কাজে লম্বা ছুটিতে যেতে হলে নানান ঝামেলায় পড়তে হয় । নির্দিষ্ট কারণ দেখিয়ে সেখানে বিভিন্ন কাগজপত্র জমা দিতে হয় । তাই অনেকে এসব সমস্যা এড়াতে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণ দেখিয়ে চাকরি ছেড়ে দেন । আবার অনেকে না জানিয়ে কাজে বা দেশের বাইরে চলে যান । এতে করে তাঁদের চাকরি ছাড়ার নির্দিষ্ট কারণ সম্পর্কে জানা যায় না । তবে সিলেটের বেশির ভাগ শিক্ষক বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন । দক্ষিণ সুরমার গোপশহর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষক এরই মধ্যে দেশ ছেড়েছেন । দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত থাকায় তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে । এর মধ্যে একজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং আরেকজনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে ।

ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো . আব্দুল গফুর মজুমদার বলেন, ‘আমার স্কুলের রেবেকা ইয়াছমিন চৌধুরী ইতিমধ্যে কানাডায় চলে গেছেন । তিনি মাত্র ১৫ দিনের ছুটি নিয়েছিলেন । তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়ে এখন তদন্ত চলছে । আর মো . আব্দুল কাদির নামের যে শিক্ষককে আমার স্কুলের বলা হয়েছে , তিনি একসময় আমার এখানে ছিলেন । পরে আরেক স্কুলে গিয়ে সেখান থেকে লন্ডনে চলে গেছেন । আমার স্কুলে এখন দুজন শিক্ষকের সংকট রয়েছে । স্কুলও এক শিফটের । সুতরাং পাঠদানে সমস্যা হচ্ছে । '

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাখাওয়াত এরশেদ বলেন, ‘ সিলেট প্রবাসী - অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় এখানকার মানুষ দেশে তেমন চাকরি করতে চান না । একটু সুযোগ - সুবিধা পেলেই বিদেশে চলে যান । আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ক্ষেত্রেও এমনটা হয়েছে । অনেকে না জানিয়ে দেশের বাইরে চলে গেছেন । পরে তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত থাকায় তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করে এ পর্যন্ত অনেককে বরখাস্ত করা হয়েছে । আরও অনেকের বিরুদ্ধে মামলা চলমান । শুরুতে সবাই বলেন , তাঁর এই চাকরি দরকার । কিন্তু পরে ভালো সুযোগ - সুবিধা পেলে তাঁরাই আবার না জানিয়ে চাকরি ছেড়ে চলে যান । এতে করে পাঠদানে সমস্যা হচ্ছে । বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকের পদ খালি হচ্ছে । তবে কেউই বিদেশে চলে গিয়ে বা চাকরি ছেড়ে বেতন তুলতে পারবেন না । '