
ড. ইউনূস কখনোই আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার পক্ষে ছিলেন না উল্লেখ করে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাহেদ উর রহমান বলেছেন, ড. ইউনূস একাধিকবার দেশি ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় বলেছেন যে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই।
বুধবার (০১ অক্টোবর) মুকসিমুল আহসানের সঞ্চালনায় চ্যানেল 24-এর নিয়মিত আয়োজন মুক্তবাকে এ মন্তব্য করেন তিনি। অনুষ্ঠানের আলোচ্য বিষয় ছিল “আওয়ামী লীগ কি ফিরবে?”। আলোচনায় আরও অংশ নেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম এবং অনলাইনে যুক্ত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মনির।
ডা. জাহেদ বলেন, সবশেষ আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের সঙ্গেও ড. ইউনূস স্পষ্টভাবে বলেছেন যে তিনি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার পক্ষে নন (হাসনাত আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে আন্দোলন শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত)।
আওয়ামী লীগের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার চাইলে যেকোনো সময় এ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে পারে। আওয়ামী লীগকে আইসিটি আইনের সংশোধনের মাধ্যমে সংগঠন হিসেবে বিচারের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। আইন উপদেষ্টা জানিয়েছেন, বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। আমার জানা মতে, এখন পর্যন্ত কোনো মামলা দায়ের হয়নি, তদন্ত বা বিচার তো দূরের কথা।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মকাণ্ড বর্তমানে সন্ত্রাস দমন আইন ২০০৯-এর আওতায় নিষিদ্ধ। আগে এই আইনের মাধ্যমে শুধু সংগঠন নিষিদ্ধ করা যেত। ২০২৪ সালের ৩ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার এই আইনে জামায়াত ও ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করেন। পরবর্তীতে নতুন অধ্যাদেশের মাধ্যমে ধারাটি সংশোধন করে সরকার চাইলে কোনো সংগঠনের কার্যক্রমও নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা পায়। সেই ধারার ভিত্তিতেই আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড এখন সরকারের এক্সিকিউটিভ অর্ডারে নিষিদ্ধ, যার কারণে এর নিবন্ধনও স্থগিত আছে। দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতে না পারলে তারা নির্বাচনে অংশ নেবে কিভাবে?
ডা. জাহেদ বলেন, টেকনিক্যালি সরকার চাইলে আগামীকালই এই নিষেধাজ্ঞা তুলে দিতে পারে। তবে বিচারিক প্রক্রিয়া আলাদা বিষয়। যদি আদালতে প্রমাণ হয় আওয়ামী লীগ মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত, তবে আদালতের রায়ে দলটি স্থায়ীভাবে কিংবা ১০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হতে পারে। এ সিদ্ধান্ত আদালতই নেবে, সরকার নয়।
যুক্তরাষ্ট্র সফরে ড. ইউনূসের বক্তব্য নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা প্রত্যেকে উনার বক্তব্যের আলাদা অংশ তুলে ধরছি। তিনি বলেছেন, যেকোনো সময় আওয়ামী লীগের নিষেধাজ্ঞা উঠতে পারে। আবার পিআইবির ফ্যাক্টচেকে বলা হয়েছে, তিনি এমন কিছু বলেননি। উনার সাক্ষাৎকারে তিনি এটাও বলেছেন যে আওয়ামী লীগ এবার নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। অর্থাৎ তিনি দুই রকম কথা বলেছেন। আমি মনে করি, এটি হয়তো ভুলক্রমে হয়েছে। তিনি আসলে বলতে পারতেন, বিচারকার্য চলাকালীন দলের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ থাকবে। শেষে যদি আদালত আওয়ামী লীগকে নির্দোষ ঘোষণা করে, তখন নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে।
তিনি আরও বলেন, যদি ইচ্ছাকৃতভাবে উনি এভাবে বলে থাকেন, তবে হয়তো কৌশলগত অস্পষ্টতা (স্ট্র্যাটেজিক অ্যামবিগুইটি) তৈরি করেছেন। কেন করেছেন, সেটা নিয়েও আলোচনা হতে পারে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সফরে ড. ইউনূস বলেছেন, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দলের মতো আচরণ করছে না, বরং সমস্যার সৃষ্টি করছে। ফলে বলা যায়, তিনি পশ্চিমাদের সামনে হয়তো একটি উদার মনোভাব প্রদর্শন করেছেন। কারণ জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অভ্যুত্থান-পরবর্তী রিপোর্টেও শেখ হাসিনা ও তার দলকে কঠোরভাবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। সেই রিপোর্টে যদিও উল্লেখ আছে যে দলটিকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা উচিত নয়।