
বিএনপির কেন্দ্রীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান এসেছিলেন নারায়ণগঞ্জের আমলাপাড়ায় পূজা মন্ডপ পরিদর্শনে। পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন আওয়ামী লীগের মহানগর কমিটির সহ সভাপতি ও আলোচিত হিন্দু নেতা শিখন সরকার শিপন। বিগত সময়ে ওসমান পরিবারের জন্য তিনি ছিলেন একজন নিবেদিত। সেলিম ওসমান ও শামীম ওসমানের জন্য তিনি বিভিন্ন মন্ডপ ও হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করেন।
অভিযোগ রয়েছে, ৫ আগস্টের পর পরই মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতাদের ম্যানেজ করেন শিপন সরকার। নিজে মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি পদে থেকেও এখন পুরোপুরিভাবে বিএনপি নেতাদের আস্থাভাজন হয়েছে। গুঞ্জন রয়েছেন এই সকল বিএনপি নেতাদের সুপারিশেই শিপন সরকারকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছেনা।
এর আগে একাধিকবার প্রশাসনের সভায় তোপের মুখে পড়েন দোসর বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক শিপন সরকার শিখন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতার আমলে তিনি ছিলেন পুরোদস্তুর আওয়ামী লীগ নেতা এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি পদেও আছেন তিনি। কিন্তু ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আওয়ামী চেতনার এই নেতা পুরোপুরি ভাবে জাতীয়তাবাদের চেতনাধারী হয়ে উঠেন। হয়ে উঠেন বিএনপি নেতাদের প্রিয় পাত্র। তার এমন দুই নীতির কারণে এর আগেও তাকে হিন্দু নেতৃবৃন্দের তোপের মুখে পড়তে হয়েছিলো।
এর আগে গত ১৯মার্চ মহাতীর্থ লাঙ্গলবন্দ স্নান উৎসবকে কেন্দ্র করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মত বিনিময় সভায় শিপন সরকারকে নিয়ে হট্টগোল শুরু হয়। পরবর্তীতে সেই ঘটনা সভা শেষে হাতাহাতি পর্যন্ত পৌছায়।
ওই দিন সভার একপর্যায়ে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান কল্যাণ স্ট্রাস্টের ট্রাস্টি জয় কে রায় চৌধুরী বাপ্পি লাঙ্গলবন্দ স্নান উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি সরোজ কুমার সাহা ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের নারায়ণগঞ্জ জেলা সেক্রেটারি শিপন সরকার শিখনকে ফ্যাসিস্টদের দোসর হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃস্টি হয়। পরবর্তীতে সভায় উপস্থিত অন্যান্যদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হলেও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণে দফায় দফায় তারা হাতাহাতিতে লিপ্ত হন।
১৮ সেপ্টেম্বর আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা উৎসব সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ন ভাবে পালনের লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সম্মেলন কক্ষে প্রশাসকের সাথে হিন্দু নেতৃবৃন্দের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ওই মত বিনিময় সভায় পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষে বক্তব্য রাখতে গিয়ে পূজা উদযাপন ফ্রন্টের নেতৃবৃন্দের তোপের মুখে পড়েন শিপন সরকার।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মত বিনিময় সভা চলাকালীন সময় শিপন সরকার শিখন বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, পতিত সরকারের আমলে আমরা কিছু করতে পারিনি।
শিপনের এমন বক্তব্যের সাথে সাথে গর্জে উঠেন পূজা উদযাপন ফ্রন্ট নেতা শংকর কুমার সাহা, সহ অন্যান্যরা। এ সময় তারা প্রতিবাদ করে বলেন, আপনি নিজেই তো আওয়ামী লীগে লোক ছিলেন, ওসমান সাথে থেকে সুবিধা ভোগ করেছেন এখন বিএনপি নেতাদের সাথে মিশেছেন। এ সময় বেশ কিছুক্ষন উভয় পক্ষের মাঝে তর্ক বিতর্ক হট্টগোল চলতে দেখা গেছে।
তবে হট্টগোলের সময় একদম নিশ্চুপ নিরাকার হয়ে চেয়ারে বসে ছিলেন শিপন সরকার শিখন। তার হয়ে পাল্টা প্রতিবাদের চেষ্টা করেছেন জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শংকর কুমার দে ও মহানগরের সাধারণ সম্পাদক সুশীল দাস।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সভাপতি শংকর সাহা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আমরা সনাতনী সম্প্রদায় আমাদের কমিটিগুলো আমাদের মত করে করতে পারিনি। এখানে একটি প্রভাবশালী পরিবার সব সময় কমিটির পেছনে হস্তক্ষেপ করতো। তাদের পছন্দের ব্যক্তিদের নির্বাচিত করার জন্য তাদের একটা প্রেসার থাকতো। সে কারণেই আমাদের সনতানী সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠনের যেসকল কমিটি গুলো ছিল আমরা ঠিক মত করতে পারি নাই। ওদের পছন্দের ব্যক্তিদের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক বানাতে হয়েছে। আমি এটার জলন্ত স্বাক্ষী। নারায়ণগঞ্জের সনাতনী জনগণ আমাকে নির্বাচিত করতে চাইতো কিন্তু ওখান থেকে একটা নির্দেশনা আসতো আমাকে বানানো যাবে না। আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ে আগে এরকম ছিল না। আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর থেকেই আমাদের হাত পা বাঁধা হয়ে গেছে। একটা পরিবারের পিয়ন হয়ে গেছিলো। এছাড়াও আমাদের সম্প্রদায়ের কিছু লোক রয়েছে যারা দালালিতে ওস্তাদ। যখন যে বাতাস তখন সেভাবে জার্সি পাল্টিয়ে তারা করতে পারে। আমরা একটা স্বতন্ত্র কমিউনিটি হিসেবে থাকতে চাই। আমরা কোন গোষ্ঠির খপ্পরে পড়তে চাই না। কেউ ভাববে ওরা আমাদের পোষা প্রাণী এই ভাবনাটা যাদের ছিল ওরা আমাদেরকে সেভাবে রাখতে চাইছে। ওই সময়ে যারা দালালি করছে এখন ৫ তারিখের পরে আবার তারা লেবাস পাল্টিয়েছে। যে কারণে আমাদের কমিউনিটির এই অবস্থা। এই ধরনের দালাল এবং চাটুকারদের যদি আমরা আমাদের কমিউনিটির নেতৃত্ব থেকে বিতাড়িত করতে না পারি তাহলে আমাদের এভাবে নাজেহাল হতে হবে, অসম্মানিত হতে হবে। আমরা চাইবো নারায়ণগঞ্জবাসী এই দালাল চক্রকে বিতাড়িত করতে পারলে আমরা ভাল থাকতে পারবো। আমরা নিরপেক্ষ থাকতে চাই। আওয়ামী লীগের আমলে যারা খাঁটি আওয়ামী লীগ হয়ে ধান্ধাবাজি করে আবার বিএনপির আমলে খাটি বিএনপি হয়ে গেছে আমরা এই ধরনের দালালি করতে চাই না।
তিনি আরো বলেন, কয়েকজন ধনী আছে যারা ওই সরকারের সুবিধা নিয়ে ধনী হয়েছে তারাই এখন এই ইন্ধনটা দিচ্ছে। এই মুখোশধারীদের চিহ্নিত করতে হবে। তারা এই দালাল চক্রকে লালন পালন করছেন।