
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে একটি ঘরে একাধিক তরুণী অসুস্থ হয়ে পড়ছেন এবং কেউ কেউ মেঝেতে গড়াগড়ি করে কান্না করছেন।
ভিডিওটি দ্রুতই বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং ভারতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। দাবি করা হচ্ছে, পাকিস্তানের ইসলামাবাদে একটি বিউটি পার্লারে ১৬ জন নারীকে গণধর্ষণ করা সংক্রান্ত ভিডিও এটি।
ভিডিওটি শেয়ার করে বাংলাদেশি অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী এটিকে ‘মৌলবাদীদের হিংস্র রূপ’ এর প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। কেউ কেউ এটিকে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কিত করে লিখেছেন, “বাংলাদেশেও এমন মৌলবাদীরা সক্রিয় হচ্ছে, ধর্মের নামে এরা তাণ্ডব চালাচ্ছে।”
‘নেদারল্যান্ডস আওয়ামী লীগ’ নামে একটি ফেসবুক পেইজ থেকে ভিডিওটি পোস্ট করে লেখা হয়েছে, ‘মুসলিম জঙ্গি কর্তৃক ১৬ জনকে ধর্ষণ করা হয়েছে’। আরেকটি পেইজে লেখা হয়েছে, ‘তৌহিদী জনতা ধর্ষণ করেছে।’
বাংলাদেশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট (BFI)-এর পরিচালক Tanvir Mokammel-ও এই ভিডিও তার ফেসবুক প্রোফাইলে শেয়ার করেছেন।
তবে দ্য ডিসেন্ট-এর অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আলোচিত ভিডিওর সাথে ধর্ষণ বা নারী নির্যাতনের কোনো সম্পর্ক নেই।
ভিডিওটির ফ্রেইম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম Media Bites এর September 18 তারিখে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন পাওয়া যায়, যার সাথে আলোচিত ভিডিও এর হুবহু মিল রয়েছে।
Media Bites এর ভিডিওর বর্ণনা অনুসারে, প্রকৃত ঘটনা ঘটেছে ১৯ জুলাই ২০২৫ রাওয়ালপিন্ডির ফিফথ রোডের একটি নারীদের বিউটি পার্লারে। ওই দিন বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে পার্লারে জেনারেটর চালু করা হয়। পর্যাপ্ত ভেন্টিলেশন না থাকায় জেনারেটরের ধোঁয়া ঘরে জমে যায়। ফলে পার্লারে থাকা ৯–১০ জন নারী শ্বাসকষ্টে ভুগে অচেতন হয়ে পড়েন।
পাকিস্তানের বেসরকারি সম্প্রচারিত টেলিভিশন চ্যানেল ক্যাপিটাল টিভি তাদের প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, পার্লারে জেনারেটরের ধোঁয়া জমে নারীরা অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং উদ্ধারকারী দল তাদের দ্রুত উদ্ধার করে।
এছাড়াও এ দুর্ঘটনায় স্থানীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল লাফজ কর্তৃক প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, কমার্শিয়াল মার্কেটের ফিফথ রোডে ৯ জন নারী শ্বাসরুদ্ধ হয়ে অচেতন হন।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ধোঁয়া বের হওয়ার ব্যবস্থা না থাকায় কক্ষ ভরে গেছে, যা এই দুর্ঘটনার মূল কারণ। রেসকিউ ১১২২-এর জরুরি টিম দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করে। নারীদের নিকটস্থ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পরে সবাইকে হোলি ফ্যামিলি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
আলোচিত এই দুর্ঘটনায় রেসকিউ কর্মকর্তাদের মতে, সকলের অবস্থা বর্তমানে আশঙ্কামুক্ত। ঘটনাস্থলে বিপুল সংখ্যক মানুষ জড়ো হওয়ায় পার্লারটি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে স্থানীয় প্রশাসন তদন্ত শুরু করেছে।
ক্যাপিটাল টিভির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ঘটনার যে ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে সেটি ধারণ করেছিলেন রেসকিউ টিমের একজন সদস্য, তারেক। অনুমতি ছাড়া ভিডিও ধারণ ও প্রচারের কারণে তাকে পরবর্তীতে দায়িত্ব থেকে বরখাস্ত করা হয় বলে রাওয়ালপিন্ডি রেসকিউ টিম প্রধান সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।