Image description

রাজধানীর সাত কলেজের সমন্বয়ে প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি নিয়ে ত্রিমুখী অবস্থানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। একপক্ষ বলছে, অধ্যাদেশ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ভাগাভাগির ফলে অস্তিত্ব সংকটে পড়বে উচ্চ মাধ্যমিক শাখা। আর মহিলা কলেজে ছেলেদের ভর্তির সিদ্ধান্তে স্বকীয়তা হারানোর শঙ্কায় শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী দুই বিদ্যাপীঠ। ঐতিহ্য নষ্ট না করে নতুন স্থানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি শিক্ষকদের। খসড়া অধ্যাদেশে অংশীজনের আপত্তির বিষয়ে আলোচনা মাধ্যমে সমাধানের কথা জানিয়েছেন প্রশাসক।

 

রাজধানীর সাত কলেজকে নিয়ে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সম্প্রতি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশের খসড়া প্রকাশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।


অধ্যাদেশ অনুযায়ী দুপুর পর্যন্ত চলবে একাদশের ক্লাস। আর বিকেল থেকে চলবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের একাংশ মনে করেন, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে অস্তিত্ব সংকটে পড়বে উচ্চ মাধ্যমিকের কার্যক্রম।

শিক্ষকরা বলছেন, হাইব্রিড মডেল এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে কোথাও এক্সিকিউট করা হয়নি। এবং এটার সে এডজাস্টমেন্ট, সেটা হবে কিনা সেটা নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে। যেখানে ইন্টারমেডিয়েটের শিক্ষার্থীরা সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ক্লাস-প্রাক্টিকেল করে, সেখানে এমন সিদ্ধান্ত হলে এরা অনেকটা উদ্বাস্তুর মতোন হয়ে যাবে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় আলাদা স্থানে হলেই বরং ভালো। এতে কলেজগুলো নিজেদের স্বকীয়তা বজায় রাখতে পারবে।

প্রস্তাবনায় বাদ দেয়া হয়েছে- বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস, দর্শনসহ বেশকিছু মৌলিক বিষয়। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে বাণিজ্যের সুযোগ করে দিতেই সাত কলেজের ২৫ হাজার আসন কমিয়ে ১১ হাজার করা হয়েছে।
 

শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন, আসন বিলীন করে দেয়া হলে শিক্ষার্থীরা সাফারার হবে। বায়োক্যামেস্ট্রির মতো ফান্ডামেন্টাল সাবজেক্ট তো বাদ দেয়া যায় না। এ ধরনের হাইব্রিড মডেল বাস্তবায়ন করতে হলে ঢাকার বাইরে গিয়ে করার পরামর্শ তাদের।

ইডেন মহিলা কলেজ ও বদরুন্নেসা কলেজে হবে বিজ্ঞান অনুষদের ক্লাস, সেখানে ভর্তি নেয়া হবে ছেলেদেরও। এই সিদ্ধান্তে নারী শিক্ষা সংকুচিত হওয়ার শঙ্কা করছেন শিক্ষার্থীরা।

ইডেন কলেজের শিক্ষার্থীরা জানান, কম্বাইন্ড করা হলে নারী শিক্ষা সংকোচিত হবে। আর একটা মহিলা কলেজে কেনো ছেলেরা প্রবেশ করবে। কম্বাইন্ড কলেজে পড়তে চান না বলেই তারা তিতুমীর বা বাঙলা কলেজ বাদ দিয়ে ইডেন কলেজে ভর্তি হয়েছেন।

তবে সংকট নিরসনে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিকল্প দেখছেন না শিক্ষার্থীদের আরেক অংশ।

তারা বলছেন, নতুন বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া এ সংকট নিরসন সম্ভব নয়। আজকে যদি ঘোষণা দেয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয় হবে না, তাহলে কালই হাজার হাজার স্টুডেন্ট রাস্তায় নামবে।

কোনো ধরনের সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়াই সাত কলেজের অবকাঠামো ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হলে সংকট আরও বাড়বে বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা।
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মজিবুর রহমান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণার আগেই আমাদের ওই ফিলোসফিটা নির্ণয় করে ফেলা উচিত ছিল। প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, আমরা কি তাহলে সাত কলেজের অবকাঠামো ব্যবহার আরেকটা মিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় চাই এখানে?’

প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসক বলছেন, খসড়া অধ্যাদেশের যেসব বিষয়ে অংশীজনের আপত্তি আছে সেসবের সমাধান করা হবে আলোচনার মাধ্যমে।

প্রস্তাবিত ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসক অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস বলেন, ‘যেহেতু এটা নিয়ে এখন সবাই মাঠে আছেন। এবং সংকট নিরসনে অন্তত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে একটি সংলাপের ব্যবস্থা করা। তাতে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছানো যাবে।’

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ঐতিহ্য রক্ষা ও দীর্ঘদিনের সংকট উত্তরণ- দুই বিষয়েই প্রশাসন আন্তরিক বলে জানান প্রশাসক।