Image description
 

চাঁদার টাকার ভাগবাঁটোয়ারা নিয়ে বিরোধের জেরে কেরানীগঞ্জে স্থানীয় আওয়ামী লীগ অফিসে ২০২৪ সালের ১০ জানুয়ারি হত্যার শিকার হন যুবলীগ কর্মী রাসেল হাওলাদার। তাকে নির্যাতন করে হত্যা করে ‘আব্বা বাহিনী’র সদস্যরা। জীবন বাঁচাতে আব্বা ডেকেও রেহাই পায়নি রাসেল।

 

নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশে ব্যাপক আলোচনা তৈরি হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, মারধর ও পৈশাচিক নির্যাতনকারী রাব্বীকে আব্বা আব্বা বলে চিৎকার করছিল রাসেল। তবে তার শেষ রক্ষা হয়নি। রাসেলের মৃত্যুর ঘটনায় তার বাবা তোফাজ্জল হাওলাদার বাদী হয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে গত ২৯ জুন আদালতে ৩৪ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেয় পুলিশ। ৭ জনকে দেওয়া হয় অব্যাহতি। 

ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, এমন নির্যাতনকারী আসামিদের চার্জশিট থেকে বাদ দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা। এ বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তার বক্তব্য জানতে যুগান্তরের তরফ থেকে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়, মুঠো ফোনে ক্ষুদে বার্তা দেওয়া হয়। তবে তিনি রেসপন্স করেননি।

রাসেলের ভাই হৃদয় বলেন, আমার ভাই যাদের সঙ্গে রাজনীতি করছে, একসঙ্গে দৌড়াদৌড়ি করছে, তারাই তাকে হত্যা করেছে। হিংসা থেকে তাকে খুন করেছে। আমার ভাইকে সবাই চিনতো। রাব্বী চেয়ারম্যানের ভাতিজা হলেও তাকে কেউ চিনতো না। এটা নিয়ে তার হিংসা ছিল। এ কারণে রাব্বী অন্য আসামিদের নিয়ে তাকে খুন করেছে। রাসেলের স্ত্রী ইতি আক্তার বলেন, আমার সামনে আমার স্বামীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমি ন্যায়বিচার চাই। জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা চাই। একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তিকে হারিয়ে সংসারটা এলোমেলো হয়ে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, টিউশনি করে সংসার চালাতে হচ্ছে, মেয়েটার পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার এসআই জুলফিকার আলী চার্জশিটে বলেন, রাব্বী কেরানীগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তার বাবা বাছের উদ্দিন শুভাঢ্যা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চাচা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান। রাব্বী রাজনৈতিক ও পারিবারিকভাবে প্রভাবশালী ছিল। অন্য আসামিরাও আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। ভিকটিম রাসেলও আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল। সে রাব্বীর চাচার পিএস হিসাবে কাজ করত। এ সূত্রে তাদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

 জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৯ জানুয়ারি রাত ৮টার দিকে রাব্বীর অফিসে আড্ডার সময় রাব্বী ও অন্য আসামিরা চাঁদার টাকা নিয়ে দ্বন্দ্বে রাসেলকে হত্যার পরিকল্পনা করে। তারা কালীগঞ্জ বয়েজক্লাব থেকে রাসেলকে ধরে এনে পারভীন টাওয়ারের নিচতলায় রাব্বীর অফিসে নিয়ে আসে।

একপর্যায়ে রাব্বী অন্য আসামিদের সহায়তায় তাকে দীর্ঘ সময় ধরে কিল, ঘুসি, লাথিসহ নির্যাতন করে। নির্যাতনের একপর্যায়ে রাসেল অজ্ঞান হয়ে যায়। আবার জ্ঞান ফিরলে পুনরায় মারপিট করা হয়। নির্যাতনের সময় কেউ কেউ মোবাইলে ভিডিও করে। আসামি রানা শলার ঝাড়ুর মুড়া দিয়ে আঘাত করে, রিপন কেঁচি দিয়ে চুল কাটে। 

ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, রাসেল চিৎকার করে রাব্বীকে ‘আব্বা’ বলে ডাকছিল। রাসেলের স্ত্রী খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এলে রাব্বী ২০ লাখ টাকা দাবি করে। রাত দেড়টার দিকে রানা, রুবেল, লাল বারী, শিপন ও রাকিব গুরুতর অবস্থায় রাসেলকে বাসায় পৌঁছে দেয়। পরে স্ত্রী তাকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। আসামিরা কৌশলে রাসেলের লাশ মসজিদে নিয়ে দাফনের চেষ্টা করে। পুলিশ খবর পেয়ে রাত ৮টার দিকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।