Image description

যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে বাংলাদেশের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ভাই আনিসুজ্জামান চৌধুরীর বিলাসবহুল আরেকটি অ্যাপার্টমেন্টের সন্ধান পাওয়া গেছে। যা দুই বছর আগে প্রায় ২৮ লাখ পাউন্ডে (প্রায় ৪৬ কোটি টাকা) কিনেছেন তিনি।

যুক্তরাজ্যের ভূমিসংক্রান্ত সরকারি দপ্তর ল্যান্ড রেজিস্ট্রি ও কোম্পানিজ হাউস থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। প্রথম আলোর অনুসন্ধানে এর আগে আনিসুজ্জামান চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রীর নামে চারটি সম্পদের সন্ধান পাওয়া যায়। এর মধ্যে সম্প্রতি প্রায় ৫০০ কোটি টাকা মূল্যের তিনটি সম্পদের মালিকানা পরিবর্তিত হয়েছে।

আনিসুজ্জামান চৌধুরীর নামে থাকা আরেকটি অ্যাপার্টমেন্টের সন্ধান পাওয়া গেছে লন্ডনের বন্ড স্ট্রিট স্টেশন–সংলগ্ন হ্যানোভার স্কয়ারে ‘মান্ডারিন ওরিয়েন্টাল মেফেয়ার’ ভবনে। ল্যান্ড রেজিস্ট্রি থেকে প্রাপ্ত নথিতে দেখা যায়, আনিসুজ্জামান চৌধুরীর মালিকানাধীন কোম্পানি এএ মান্ডারিন লিমিটেডের নামে ২০২৩ সালের ২১ জুন অ্যাপার্টমেন্টটি ৯৯৮ বছরের লিজ চুক্তিতে কেনা হয়। ২৭ লাখ ৯০ হাজার ব্রিটিশ পাউন্ডে কেনা অ্যাপার্টমেন্টটি নিবন্ধন পায় ওই বছরের ৭ ডিসেম্বর।

আনিসুজ্জামান চৌধুরীর অ্যাপার্টমেন্টটির অবস্থান লন্ডনের ২২ হ্যানোভার স্কয়ারের ষষ্ঠ তলায়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ অ্যাপার্টমেন্টের বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৩০ লাখ পাউন্ড (প্রায় ৫০ কোটি টাকা) হতে পারে। অ্যাপার্টমেন্টটি ২০২৩ সালের ২২ জুন থেকে ২০২৫ সালের ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সিঙ্গাপুরভিত্তিক ডিবিএস ব্যাংকের কাছে বন্ধক ছিল। বর্তমানে এটি সেনকাপ লিমিটেড নামে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে বন্ধক রয়েছে।

যুক্তরাজ্যের সরকারি প্রতিষ্ঠান কোম্পানিজ হাউসের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, আনিসুজ্জামান চৌধুরীর পাশাপাশি এএ মান্ডারিন লিমিটেডের পরিচালক হিসেবে ইমরানা জামান চৌধুরীরও নাম রয়েছে।

এর আগে অনুসন্ধানে জানা যায়, লন্ডনে নিজের মালিকানাধীন কোম্পানি ‘রনি ৪২ লিমিটেড’ থেকে গত ১৯ সেপ্টেম্বর আনিসুজ্জামান চৌধুরী পদত্যাগ করেন। একই দিনে আজারবাইজানের নাগরিক নাসিব পিরিয়েভ পরিচালক হিসেবে ওই কোম্পানির একক নিয়ন্ত্রণ পেয়েছেন। ওই কোম্পানির নতুন নাম হয় ‘পিএনএন ইউকে প্রোপার্টিজ লিমিটেড’। ‘রনি ৪২ লিমিটেড’ কোম্পানির দুটি অ্যাপার্টমেন্ট ছিল। স্বাভাবিকভাবে সেগুলোর মালিকানা বদল হয়েছে।

অন্যদিকে গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর ইমরানা জামান চৌধুরী তাঁর নামে থাকা সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি জিএস এসপিভি ওয়ান লিমিটেডের সব শেয়ার ছেড়ে দিয়েছেন। একই দিনে তিনি কোম্পানির পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। জিএস এসপিভি ওয়ানের নামে একটি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। ইমরানা শেয়ার ছেড়ে দেওয়ায় তিনি আর অ্যাপার্টমেন্টের মালিকানায় নেই।

আনিসুজ্জামান ও ইমরানার মালিকানা চলে যাওয়া এই তিন সম্পদের মূল্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে গত জুনে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর নামে থাকা প্রায় ১৭ কোটি পাউন্ড মূল্যের সম্পত্তি জব্দ করে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ)। এসব সম্পত্তির বেশির ভাগই লন্ডনের অভিজাত এলাকায় বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশে গত রোববার সাইফুজ্জামান, তাঁর স্ত্রী রুকমীলা জামানসহ আটজনের বিরুদ্ধে ৪১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ঘুষ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে আনিসুজ্জামান চৌধুরী, তাঁর স্ত্রী ও মেয়ের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর মতো আনিসুজ্জামান চৌধুরীরও যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও আরব আমিরাতে সম্পদ আছে বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে এসেছে।