Image description

এস আলম গ্রুপ ২০১৭ সালে একটি রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ দখলে নেয়। তার আমলে ব্যাংকটিতে নিয়োগ পাওয়া বেশির ভাগ কর্মীই চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার। তাদের মধ্যেও একটা বড় অংশ সাইফুল আলমের (এস আলম) নিজ উপজেলা পটিয়ার। এজন্য ব্যাংকটিকে সে সময় কটাক্ষ করে পটিয়া ব্যাংকও বলতেন কেউ কেউ।

 

অভিযোগ রয়েছে, এস আলমের পছন্দের লোকদের নিয়োগ দিতে সে সময় জাল সনদ, বক্সের বায়োডাটা সংগ্রহ করা হতো। পরীক্ষা ছাড়াই দেওয়া হতো নিয়োগ। তবে পুরো প্রক্রিয়া সম্পাদন করা হতো কোনো ধরনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা ছাড়াই।

তবে গত বছরের ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের পতনের পর ব্যাংকের একচ্ছত্র কর্তৃত্ব হারায় এস আলম গ্রুপ। এরপর থেকে তার সময়ে অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া পাঁচ হাজার ৩৮৫ জন কর্মকর্তার যোগ্যতা ও দক্ষতা মূল্যায়নের উদ্যোগ নেয় এক সময়ের দেশের বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় ব্যাংকটি। এজন্য গত ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) মাধ্যমে মূল্যায়ন পরীক্ষার আয়োজন করে ইসলামী ব্যাংক। এর মধ্যে মাত্র ৪১৪ জন পরীক্ষায় অংশ নেন। তবে ধরা পড়ার ভয়ে যেসব কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করেননি তাদের মধ্যে প্রায় ২০০ জনকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বরখাস্ত করা হয়। আর ব্যাংকের নির্দেশনা অমান্য করায় চার হাজার ৯৭১ জন কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়।

ইসলামী ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, এস আলমের দখলের আগে ২০১৬ সাল শেষে ব্যাংকের জনবল ছিল ১৩ হাজার ৫৬৯ জন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলার ছিল ৭৭৬ জন। বর্তমানে ব্যাংকটিতে প্রায় ২২ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে। এর প্রায় ১১ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী চট্টগ্রাম বিভাগের। এরও বেশির ভাগ পটিয়া উপজেলার। এসব কর্মকর্তাকে এস আলম নিয়ম ভেঙে নিয়োগ দেন। এমন নিয়োগের ফলে দেশের ৬৩টি জেলার চাকরিপ্রত্যাশীদের বঞ্চিত করা হয়। একটি জেলার প্রার্থীদের গোপনে নিয়োগ দেওয়ায় ব্যাংকের শৃঙ্খলা চরমভাবে ধসে পড়ে। এসব মানহীন কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগদানের পর থেকে ব্যাংকের গ্রাহকসেবার মান চরমভাবে ক্ষুণ্ণ হয়।

এস আলমের পিএস ও ব্যাংকের সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) আকিজ উদ্দিনসহ তার সহযোগীরা এসব নিয়োগের মাধ্যমে প্রত্যেক কর্মকর্তার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নেন। এদের মধ্যে অনেকেরই শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল না। চাকরি দেওয়া হয় জাল সনদে। তারা চট্টগ্রামের বিজিসি ট্রাস্ট, পোর্ট সিটি ও সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরি পান। এ সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। বিজিসি ট্রাস্ট ও পোর্ট সিটি এ দুটি ইউনিভার্সিটিতে ব্যাংকের পক্ষ থেকে সনদ যাচাই করতে চাইলে তারা অস্বীকার করে। এর বাইরেও বেশকিছু কর্মকর্তার ভুয়া সনদ থাকায় ইতোমধ্যেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামাল উদ্দিন জসিম আমার দেশকে বলেন, যেসব কর্মকর্তা মূল্যায়ন পরীক্ষায় আসেননি, তাদের ওএসডি করা হয়েছে। শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে প্রায় ২০০ জনকে টার্মিনেশন করা হয়। টার্মিনেশনের ক্ষেত্রে কোনো কারণ দরকার হয় না। কোম্পানি আগামী তিন মাসের বেতন দিয়ে টার্মিনেশন করতে পারে। তবুও ইসলামী ব্যাংক মানবিক দিক চিন্তা করেছে। এস আলমের আমলের ১১ হাজার নিয়োগের প্রায় ১০ হাজার এখনো ব্যাংকে রয়েছেন। তাদের বেশির ভাগই নিয়োগপ্রক্রিয়া ছিল অস্বচ্ছ। নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো বিজ্ঞপ্তি হয়নি। যাদের ওএসডি করা হয়েছে, তাদের বিষয়েও দু-একদিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

গত রোববার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইসলামী ব্যাংক জানায়, কর্মকর্তাদের যোগ্যতা যাচাইয়ের জন্য বিশেষ মূল্যায়ন পরীক্ষা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়ার পর কয়েকজন কর্মকর্তা এ পরীক্ষার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ বাংলাদেশ ব্যাংককে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জন্য নির্দেশনা দেন। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিষয়টি নিষ্পত্তি করে রিটকারী ও ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে।

এতে বলা হয়, ‘ইসলামী ব্যাংক একটি বেসরকারি মালিকানাধীন লাভজনক প্রতিষ্ঠান বিধায় এর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরি দেশের প্রচলিত আইন, বিধিবিধান ও নিয়োগের শর্ত দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং যেহেতু চাকরি এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মদক্ষতার সঙ্গে ব্যাংকের লাভ-লোকসান বহুলাংশে জড়িত, সেহেতু ব্যাংক স্বাধীনভাবে দেশের আইন ও বিধিবিধান মেনে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এর পরিপ্রেক্ষিতে, বিশেষ যোগ্যতা মূল্যায়ন পরীক্ষা গ্রহণ এবং চাকরিতে কাউকে রাখা বা না রাখার বিষয় ব্যাংকের নিজস্ব এখতিয়ারভুক্ত।’

ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর মাধ্যমে গত ২৭ সেপ্টেম্বর বিশেষ যোগ্যতা মূল্যায়ন পরীক্ষার আয়োজন করা হয়। এক্ষেত্রে আদালত অবমাননা বা আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি।