Image description

ডেঙ্গুতে মৃত্যুহারে বিশ্বের শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। আক্রান্তের সংখ্যায় দেশটির অবস্থান সপ্তম হলেও মৃত্যুহারে এটি এখন ১ নম্বরে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ৪৪ হাজার ৬৯২ জন। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৮৮ জনের, যার হার ০.৪২ শতাংশ।

চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত বিশ্বের ১৭৫টি দেশের ডেঙ্গু সংক্রমণের তথ্য প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সেখানে বাংলাদেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যুহার দেখানো হয়েছে ০.৫২ শতাংশ, যা সর্বোচ্চ। এ তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া, যেখানে মৃত্যুহার ০.৪১ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে কেবল হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের তথ্যই সংরক্ষিত হয়।

বিপুলসংখ্যক রোগী ঘরে থেকেই চিকিৎসা নেয়, যাদের হিসাব ডেটায় আসে না। ফলে মৃত্যুহার অনেক বেশি দেখায়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, চলতি বছরের

আগস্ট পর্যন্ত বিশ্বে ডেঙ্গু শনাক্ত রোগী ছিল ১৭ লাখ ৭০ হাজার আটজন, এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে তিন হাজার পাঁচজনের। আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যায় শীর্ষে আছে ব্রাজিল।

 
এরপর রয়েছে কলম্বিয়া, ভারত, থাইল্যান্ড, ইকুয়েডর ও বাংলাদেশ। ব্রাজিলে মোট আক্রান্ত ১৩ লাখ ৩৮ হাজার ৪৬৮ জন, মৃত্যু এক হাজার ৬৩৫ জনের। এরপর ইন্দোনেশিয়ায় এক লাখ ১০ হাজার ৮২৮ জন, মৃত্যু ৪৫৭ জনের। মৃত্যুর সর্বোচ্চ সংখ্যায় তৃতীয় বাংলাদেশ—আক্রান্ত ৩১ হাজার ৪৭৬ এবং মৃত্যু ১৬৪।

সম্প্রতি ভারতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডেঙ্গুবিষয়ক এক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এবং কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার।

 
তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাংলাদেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যুহার বেশি হওয়ার কারণ নিয়ে সম্মেলনে আলোচনা করা হয়েছে। অনেক দেশ দেখিয়েছে শূন্য দশমিক শূন্য শতাংশ। অথচ আমাদের দেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যুহার ০.৫২ শতাংশ।’

তিনি বলেন, ‘সম্মেলনে উঠে আসে, ডেঙ্গু রোগীর সঠিক পরিসংখ্যান না থাকায় মৃত্যুহার বেশি দেখাচ্ছে। আমরা যেসব রোগীর তথ্য পাচ্ছি, এগুলো হাসপাতালে ভর্তি রোগী। অবশ্য সব হাসপাতাল তথ্যও দিচ্ছে না। এ কারণে মৃত্যুহার বেশি দেখাচ্ছে, যা বিশ্বের কোনো দেশে নেই।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এর আগে বাংলাদেশে ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যুহার ছিল সর্বোচ্চ—০.৫২। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘তথ্যগত সমস্যা থাকলেও রোগটি নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য পরিষেবা এখনো যথাযথ নয়। ডেঙ্গু রোগে রাজধানী এবং এর বাইরের সুযোগ-সুবিধার বিস্তর ব্যবধান আছে। আমরা মশা নিয়ন্ত্রণে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে যেমন পারিনি, তেমনি প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবায় ডেঙ্গুকে প্রাধান্য দেওয়া হয়নি। এর ধারাবাহিকতা চলছেই।’

৫৭.৮৯ শতাংশ মৃত্যু হাসপাতালে ভর্তির প্রথম দিনে

সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর বলেন, ১১৪ মৃত্যুর কারণ বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, ৫৭.৮৯ শতাংশ রোগী হাসপাতালে ভর্তির প্রথম দিনই মারা যায়। বেশির ভাগ মৃত্যুর কারণ হলো ডেঙ্গু শক সিনড্রোম এবং হাসপাতালে পৌঁছাতে দেরি হওয়া।

সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ (সিডিসি) শাখার লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হালিমুর রশীদ জানান, ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার হাসপাতালে। ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সী রোগী বেশি মারা যাচ্ছে। রোগীরা তিন থেকে ছয় দিন ধরে জ্বরে ভোগার পর হাসপাতালে আসছে, মারা যাওয়া ৯০ জন রোগী মধ্যে ৩৯ জনই দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভুগছিল।

তিনি জানান, ১১৩ রোগীর তথ্যে জানা যায়, ৫৬ জন ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে মারা গেছে, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কারণ এক্সপান্ডেড ডেঙ্গু সিনড্রোম। এতে মারা যায় ৩৬ জন। উভয় সমস্যা ছিল ৯ জনের, এ ছাড়া ডেঙ্গুর সঙ্গে কার্ডিয়াক শকে মারা যায় ৯ জন।

ডা. মো. হালিমুর রশীদ বলেন, মারা যাওয়া ১১৪ জন রোগীর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সর্বোচ্চ ৬৬ জন মারা গেছে হাসপাতালে ভর্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে। এরপর ৭২ ঘণ্টা পর ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ১৮ জন মারা গেছে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে। পাঁচজন মারা গেছে ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে।

প্রায় তিন বছর ধরে ডেঙ্গুর চারটি ধরনের মধ্যে ধরন (ভেরিয়েন্ট)-২-এ বেশি মানুষ আক্রান্ত হতো। চলতি বছর এর সঙ্গে ধরন-৩-এ আক্রান্ত বেড়ে যাচ্ছে। এই ধরনে বেশি আক্রান্তের ঘটনা ঘটছে রাজধানীতে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।