
বাংলাদেশে কোন রাজনৈতিক দলের ভোটব্যাংক কত বড়? এমন আলোচনায় ঘুরেফিরে সামনে আসে অতীতের বিভিন্ন নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণ। তবে পরিবর্তিত বাস্তবতায়, আগের সমীকরণ যৌক্তিকতা হারিয়েছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, আগামীর জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে মূল প্রভাবক হবে তারুণ্যের ভোট। যদিও এ নিয়ে এখনো উদাসীন রাজনৈতিক দলগুলো।
সংসদীয় গণতন্ত্রের সাড়ে তিন দশকের যাত্রাপথে, বিএনপি আর আওয়ামী লীগ. এই দুই দলকে কেন্দ্র করেই আবর্তীত হয়েছে দেশের ক্ষমতার মসনদ। যদিও ৯১ পরবর্তী হওয়া ৮টি নির্বাচনের মধ্যে বেশ কটিই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ ও প্রতিদ্বন্দ্বীতাহীন।
বলা হচ্ছে, নিশি ও ডামি নির্বাচনের মারপ্যাচে ভোট দিতে না পারা অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হবেন আগামী নির্বাচনে। চলতি বছরের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত হালনাগাদ করা তালিকা অনুযায়ী মোট ১২ কোটি ৬২ লাখের মধ্যে প্রায় ৫ কোটি ৪৪ লাখ ভোটারের বয়স ১৮ থেকে ৩৭ এর মধ্যে। যা মোট ভোটারের প্রায় ৪৩ শতাংশ। এর মধ্যে গত এক দশকে নতুন ভোটার সোয়া তিন কোটি। আর একেবারেই নতুন যুক্ত হয়েছে প্রায় অর্থকোটি ভোটার।
তবে এর মধ্যেও দলভিত্তিক ভোটের সমীকরণ নিয়ে আলোচনার টেবিলে ঘুরেফিরে আসে পূর্বের ফলাফল বিশ্লেষণ। মোটাদাগে ২০০১ ও ২০০৮ সালের ভোটের ফল বিশ্লেষনে দেখা যায়, ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসে ৪০ দশমিক ৯৮ শতাংশ ভোট পেয়ে আর ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ পায় ৪৮ দশমিক ০৪ শতাংশ ভোট। যদিও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দলভিত্তিক আগের হিসাব অনেকটাই গৌন পরিবর্তীত বাস্তবতায়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, প্রায় ৫ কোটির মতো যারা নতুন ভোটার হয়েছে এদের চাওয়া পাওয়া, এরা কোন মূল্যবোধে বিশ্বাস করে এটার ওপর নির্ভর করে ভোটের হিসাব করতে হবে। ওই ৩০ শতাংশ আমি পেয়েছি বলে আমি এবারও পাব এমন ধারণা করা আমার মনে হয় ভুল হবে। কারণ বাংলাদেশ পরিবর্তন হয়ে গেছে। ভোটের ব্যাপারে মানুষ এখন অনেক বেশি কনশাস।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, নতুন প্রজন্ম যারা ভোটার হয়েছে এদের সংখ্যা বিশাল। এরা আগে কখনো ভোট দেয়নি। তারা যে ভিন্ন একটা কিছু করবে এটা খুব স্পষ্ট। এই উপাদানটাই আগামী নির্বাচনের ফলাফলকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করবে।
যে তরুণ ভোটারদের এত গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে, তাদের কাছে টানতে কতটা সচেতন রাজনৈতিক দলগুলো? এমন প্রশ্নে তারা মনে করেন, এক্ষেত্রে দলগুলোর ভূমিকা অদূরদর্শী।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, এখনকার জেনারেশন তাদের চিন্তাভাবনার মধ্যে একটা ভিন্নতা আছে। এই ভিন্নতা বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলো উপলব্ধি করে কিনা সেটা আমার কাছে পরিষ্কার না। যেহেতু তারা উপলব্ধি করতে পারছে না সেহেতু বলা যায় যে তাদের ভোট অর্থাৎ এ নতুন প্রজন্মের ভোট এটা ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিভিন্ন দলের মধ্যে চলে যেতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, পুরোনো দলগুলো সেই একই বয়ান নিয়ে হাজির হচ্ছে। ঐ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ করেছি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যদি না ধরো তুমি তাহলে তুমি দেশবিরোধী, তাহলে তুমি পাকিস্তানপন্থি, তুমি রাজাকার। এগুলো মানুষ শুনতে চায় না। সুতরাং আমি মনে করি বৃহৎ দলগুলো কিন্তু ইয়ং জেনারেশনের মনকে বুঝতে পারছে না।
বিশ্লেষকরা বলছেন, কথা-কাজে নতুন ভোটারদের যে দল নিজেদের দিকে টানতে পারবে, তারাই সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে আগামীর ক্ষমতার দৌড়ে।