
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও রমজানের কারণে প্রায় দেড় মাস এগিয়ে আনা হয়েছে অমর একুশে বইমেলা। ২০২৬-এর মেলা ১৭ই ডিসেম্বর শুরু হয়ে চলবে ১৭ই জানুয়ারি পর্যন্ত। মেলা হঠাৎ এগিয়ে আনায় বিপাকে পড়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের লোকসানের মুখে পড়তে হবে বলে জানিয়েছেন প্রকাশকরা। হাতে মিলবে না প্রায় ২৫ শতাংশ পাণ্ডুলিপি। পাঠ্য বই ছাপানোর মৌসুম চলায় দেখা দিতে পারে কাগজ সংকটও।
বৃহস্পতিবার বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে মেলা এগিয়ে আনার বিষয়টি জানানো হয়। এতে বলা হয়, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিদুর রহমান, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, একাডেমির সচিব, পরিচালকবৃন্দ এবং বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির প্রতিনিধিবৃন্দের উপস্থিতিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সভায় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও পবিত্র রমজানের পরিপ্রেক্ষিতে অমর একুশে বইমেলা ২০২৬-এর তারিখ এ বছরের ১৭ই ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের ১৭ই জানুয়ারি পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়।
তথ্যমতে, ২০২৫ সালের অমর একুশে বইমেলায় আনুমানিক ৪০ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে। ২০২৪ সালে ছিল প্রায় ৬০ কোটি টাকা। ২০২৫ সালে প্রায় ৩,২৯৯টি নতুন বই প্রকাশিত হয়। যা ২০২৪ সালে ছিল ৩,৭৫১টি। কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা নতুন রাজনৈতিক পরিবেশের কথা উল্লেখ করেছিলেন। ২০২৬ সালের বইমেলায় এই ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টায় ছিলেন প্রকাশকরা। কিন্তু তাদের শঙ্কা হচ্ছে তার উল্টো।
বই বিপণিকেন্দ্র ও প্রকাশনা সংস্থা বাতিঘরের কর্ণধার দীপঙ্কর দাশ বলেন, হঠাৎ দেড় মাস এগিয়ে আনায় লোকসানের মুখে তো পড়তেই হবে। আমরা কিছু পাণ্ডুলিপি সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে পাই। কিন্তু মেলা এগিয়ে আসায় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ পাণ্ডুলিপি আমরা পাবো না। তিনি দাবি করেন, মেলা যেহেতু এগিয়ে আনা হয়েছে রাজনৈতিক কারণে সেহেতু দুই সপ্তাহ মেলা করা যেতে পারে। সর্বোচ্চ তিন সপ্তাহ। তাহলে আমরা ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারবো।
অনন্যা প্রকাশনীর প্রকাশক মনিরুল হক বলেন, বাস্তবতা মেনে নিতে হবে। কিছু করার নাই। গত বছরও আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলাম। আমাদের ব্যবসা অর্ধেক হয়েছিল। বর্তমানে সৃজনশীল লেখার বাজারে এমনিতেই মন্দা চলছে। সেপ্টেম্বর প্রায় শেষ। হাতে সময় এই ক’দিন। আমরা পরিকল্পনামাফিক কাজ করতে পারবো না। অধিকাংশ প্রকাশনী পরিকল্পনামতো ছাপাতেই পারবে না। এতে ক্ষতি সবার। এই ক্ষতি লেখকদেরও আবার পাঠকদেরও হবে। অনেকেই বইমেলার জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। আমরা চেয়েছিলাম মেলা ১৫ দিন করে ফেব্রুয়ারির শুরুতে শেষ করা যায় কিনা। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন, মেনে নিতেই হবে।
আল-হামরা প্রকাশনীর প্রকাশক খান মুহাম্মদ মুরসালীন বলেন, ডিসেম্বর শীতকাল। এই সময়টা রাজনৈতিকভাবে দেশে উত্তাপ থাকে। নির্বাচনের সময় এগিয়ে আসবে, জুলাই সনদ হবে কিনা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থির থাকবে। এই সময়ে বইমেলায় একটা ভাটা পড়বেই। আবার বইমেলার কিন্তু প্রথম দুই সপ্তাহে বিক্রি খুবই কম হয়। সেক্ষেত্রে জানুয়ারিতে গিয়ে বিক্রি বৃৃদ্ধি হবে। এ সময় পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হতে পারে। আবার এই সময়টায় পাঠ্য বই কেন্দ্রিক বিপুল পরিমাণ কাগজ প্রয়োজন হয়, তাই কাগজ সংকটও দেখা দিতে পারে। তিনি আরও বলেন, তবে আমরা এবার অনন্য নজির স্থাপন করতে পারতাম। ফ্যাসিবাদী আমলে ইসলাম যারা পালন করতেন তাদেরকে ট্যাগিং করা হতো। এবার চাইলে আমরা রমজানকে টার্গেট করে বইমেলা করতে পারতাম। এর ফলে একটা সুন্দর সাংস্কৃতিক সৌন্দর্য প্রকাশের একটা নজির স্থাপন করা যেতো।