Image description
আওয়ামী লীগ অফিসের গ্রাউন্ড ফ্লোর ঘুটঘুটে অন্ধকার। দূর থেকে দেখলাম লোকজন হন্তদন্ত করে ভিতরে যাচ্ছে, তারপর হেলেদুলে বের হচ্ছে। একটু এগিয়ে যেতেই তাদের এই তাড়াতাড়ি ভিতরে ঢোকা আর আয়েশ করে বেরিয়ে আসার কারনটা বোঝা গেলো, মুতের বিধ্বংসী গন্ধ নাকে এসে লাগলো।
চোখে অন্ধকার একটু সয়ে যাওয়ার পরে আমিও ঢুকলাম। তখনই বাম পাশ থেকে আওয়াজ এলো, “ভাইয়া কি মুতবেন?” খুবই সিরিয়াস এবং দরদী ইনভাইটেশন টু পি। না বলি কেমনে!
ছেলেটা আমাকে কোথায় দাঁড়ালে সুবিধা হবে সেটা দেখিয়ে দিলো, “ওইদিকে দাঁড়ালে জুতায় লাগবে, এখানে দাঁড়িয়ে ছাড়েন”। আমি ছাড়তে ছাড়তেই তাকে জিজ্ঞেস করলাম, “উপরে যাওয়ার সিঁড়িটা কোনদিকে?”
“উপরে যাবেন? চলেন আমি নিয়া যাইতেছি।”
“চলেন।”
ওর নাম ইমরান, বঙ্গবন্ধু এভিনিউর ফুটপাতে কাপড়ের দোকানে চাকরি করে। দেখলাম এই অফিস তার চেনা। এইটা ছাত্রলীগের অফিস, এইটা যুবলীগের, এইটা ছিলো ডাইনিং। আমরা সিঁড়ি ভেঙ্গে উপরে উঠছি আর ইমরান কমেন্ট্রি দিয়ে যাচ্ছে, “পাঁচ তারিখে তিরিশ থেকে পঞ্চাশ হাজার লোক ঢুকছিলো, যা পাইছে সব নিয়া গেছে। এই যে এইখানে একটা সন্দুক ছিলো, ওইটাও নিছে। এইখানে ইলেকট্রিকের তার ছিলো, এডিও খুইলা নিছে দেখেন।”
নিছে যে নিছে সবই নিছে। দেয়ালের ফিটিংস নিছে। ফ্লোরের টাইলস নিছে। একটা দেয়ালে সম্ভবত মুজিব আর হাসিনার ছবি লটকানো ছিলো, ওইটাও নিছে। প্রবল পরাক্রমশালী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের শরীরে যা কিছু রোয়াব, শান-শওকত, জৌলুশ ছিলো, পাবলিক সব খুলে নিয়ে গেছে।
এই ধ্বংসস্থুপের মধ্যেই কিছু ছিন্নমূল মানুষ সংসার পেতে ফেলেছেন। সাত বা আট তলার দুইটা রুম ধুয়ে-মুছে পরিস্কার করা হয়েছে। দরজায় চার পাটি স্যান্ডেল। দুইজন পুরুষ আর দুইজন নারী। জানালেন তারা চাঁদপুর থেকে এসেছেন। ঢাকা শহরের আর কোথাও জায়গা না পেয়ে এখানে উঠেছেন।
আরেক তলায় পাঁচ-ছয়জন নেশাগ্রস্থ পথশিশুর দেখা মিললো। জানলাম পাঁচ তারিখের পরেই ওরা এখানে বাসা বেঁধেছে। ওদের সাথে আলাপের মাঝেই পাশ থেকে ইমরান লাফিয়ে উঠলো, “দেখছেননি অবস্থা ভাইয়া?”
কী অবস্থা দেখার জন্য বামে ঘুরলাম। ছোট্ট একটা অন্ধকার ঘর। ভিতরে কেউ একজন বিছানা পেতেছে। মাথার দিকে দেয়ালে জিয়া, খালেদা আর তারেকের ছবি লাগানো। হাসিনা পালিয়ে গেছে আর আওয়ামী লীগের অফিসে খালেদার ছবি ঝুলছে। লাফিয়ে উঠার মতোই অবস্থা বটে!
ছাদ পর্যন্ত উঠালাম। কিছু ছবি-ভিডিও তোলা হলো। তারপর সিঁড়ি ভেঙ্গে নেমে এলাম। গ্রাউন্ড ফ্লোরে আবার সেই তীব্র মুতের গন্ধ।
“অই যে চশমাধারী [...] ওর মতো কতো শত বালস্য বাল, হরিদাস পাল পৃথিবীর-প্রকৃতির প্রগাঢ় প্রস্রাবের ফেনায় ভেসে গেছে।” ~ জ্যোতির্ময় নন্দী