Image description

কুমিল্লার লালমাইয়ে ডিভোর্সের পরও প্রাক্তন স্ত্রীকে রাতযাপনের ঘটনায় দুলাল হোসেন (৩৫) নামে এক যুবকের হত্যার ঘটনা ঘটেছে। পরে এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে মোট ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হলো।

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় নারায়ণগঞ্জ র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন এসব তথ্য জানান।

মৃত দুলাল কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার ভল্লবপুর গ্রামের জব্বর মালের ছেলে।

 

জানা যায়, ১০ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৯টায় কুমিল্লার লালমাই উপজেলার পেরুল দক্ষিণ ইউনিয়নের পেরুল উত্তর পাড়া মিয়াজি বাড়ি সংলগ্ন এলাকা থেকে লাকসাম রেলওয়ে পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ওই রাতেই মৃতের স্ত্রী নাছিমা বেগম বাদী হয়ে সাতজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

গ্রেপ্তাররা হলেন জেলার দেবিদ্বার উপজেলার চুলাস গ্রামের মৃত আয়াত আলীর ছেলে মো. ফারুক (৪৫), একই উপজেলার আতাপুর গ্রামের মৃত ধনু মিয়ার ছেলে মো. মফিজুল ইসলাম (৪৫), একই গ্রামের মৃত আব্দুল মালেকের ছেলে তাজুল ইসলাম (৪২), নুর মানিকচর গ্রামের ফারুকের স্ত্রী মরিয়ম (৩৭), একই গ্রামের আবুল হাসেমের স্ত্রী ফাতেমা আক্তার সিনথিয়া (১৯), লালমাই উপজেলার জগতপুর গ্রামের মৃত আবদুল মালেকের ছেলে রুবেল আহাম্মেদ (৩৯), লাকসাম উপজেলার পূর্ব বেরুল গ্রামের নুরুল হকের ছেলে আবুল হাসেম (৩৪)।

এর আগে লাকসাম রেলওয়ে পুলিশ কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার বল্লভপুর গ্রামের হাফিজুর রহমানে ছেলে জহির ও একই গ্রামের ইউনুস মিয়ার ছেলে খোরশেদ আলমকে গ্রেপ্তার করে।

লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন জানান, র‌্যাবের আভিযানে সোমবার কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলা এবং রাজধানীতে অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে। একই সঙ্গে মরদেহ গুমের কাজে ব্যবহৃত একটি নোহা মাইক্রোও জব্দ করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, আসামিদেরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেপ্তার ফাতেমা আক্তার সিনথিয়ার সঙ্গে ৬ মাস আগে দুলাল হোসেনের বিয়ে হয়।

এরপর থেকে তারা দুজন কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার নিমসার বাজারে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন। কয়েকদিন যাওয়ার পর দুলাল ফাতেমাকে বিভিন্নভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন। এরই মধ্যে ফাতেমার সঙ্গে দুবাই প্রবাসী আবুল হাসেমের ইমোর মাধ্যমে পরিচয় হয়। একপর্যায়ে তারা পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। পরে ফাতেমা তার স্বামী দুলালকে ডিভোর্স দিয়ে বাবার বাড়িতে চলে যান।

এর মধ্যে প্রবাসী আবুল হাসেম দেশে এলে দুই মাস আগে ফাতেমাকে বিয়ে করেন।

এদিকে, দুলাল ডিভোর্স না মেনে প্রায় সময় হাসেমের অনুপস্থিতিতে বিভিন্ন ভয়-ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক ফাতেমার সঙ্গে বাসায় রাত্রযাপন করতেন। প্রথমে বিষয়টি গোপন রাখলেও পরবর্তী সময় বর্তমান স্বামী হাসেমকে জানান ফাতেমা। পরে হাসেম, ফাতেমার বাবা-মা মিলে দুলালকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। ঘটনার দিন দুলাল ফাতেমার বাসায় গেলে তার বর্তমান স্বামী হাসেমের পরিকল্পনা মতো জুসের সঙ্গে ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে তাকে পান করান ফাতেমা।

কিছুক্ষণের মধ্যে দুলাল ঘুমিয়ে পড়লে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে এবং শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করা হয়। পরবর্তী সময় মরদেহ গুমের জন্য ড্রাইভার রুবেলের নোহা গাড়ি মরদেহ উঠিয়ে রাতের আধারে লালমাই রেললাইনের পাশে রেখে আসা হয়। আইনগত ব্যবস্থা শেষে আসামিদের লাকসাম রেলওয়ে থানা পুলিশের কাছে হস্তান্ত করা হবে বলে র‌্যাবের এই কর্মকর্তা জানান।

লাকসাম রেলওয়ে থানার ওসি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, গত ১০ সেপ্টেম্বর সকালে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সেই রাতেই মৃতের স্ত্রী নাছিমা বাদী হয়ে ৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত নামা আসামিদের বিরুদ্ধ হত্যা মামলা দায়ের করেন। এর পর আসামি জহির ও খোরশেদ আলমকে গ্রেপ্তার করে রেলওয়ে পুলিশ। পরে র‌্যাব-১১ এর সহযোগিতায় বাকি ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।